ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ জুন, ২০২২ ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪১১ বার
আমদানি ব্যয় সুরক্ষা ও ডলার সংকট মোকাবিলায় অন্তত ৬ মাসের জন্য বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।
শনিবার (১৮ জুন) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর পর্যালোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওয়েবিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হামিদুর রহমান, ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি শারমীন রিনভী।
আয়োজক সংগঠন মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটসের আহ্বায়ক ফারুক আহমাদ আরিফের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবদুর রহমান মাসুম।
আতিউর রহমান বলেন, ৬ মাসের জন্য বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করা উচিত। ৬ মাসের জন্য বিদেশি ফুল আমদানি বন্ধ করলে কি ঘর সাজবে না? ৬ মাস ওডি গাড়ি না আসলে কি ঢাকায় গাড়ি চলবে না। এমন কিছু বিলাসবহুল পণ্য রয়েছে ছয় মাস বন্ধ থাকলে দেশের সমস্যা হবে না।
পাচার করা অর্থ ফেরতের সুযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অ্যান্ডমন্ড, এপিজি ও আনকাকের সদস্য। অবাধে এরূপ সুযোগ দেওয়া হলে আমরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হব। তাই ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে ঢালাওভাবে সুযোগ দেওয়া যাবে না।
কর আদায়ের পথ সহজ করার প্রস্তাব দিয়ে সাবেক গভর্নর বলেন, প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কর কাঠামোগত ডিজিটাইলেশন করা, করের আওতা বৃদ্ধি করা ও কর কাঠামোর সংস্কার কীভাবে করা যায়, সেটা ভাবা দরকার। অনেক সময় মামলাজটে হাজার কোটি টাকার টাকার রাজস্ব আটকে যায়, সেখান থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায় সেটি দেখতে হবে। অন্যদিকে মামলার বিকল্প পথ অর্থাৎ এডিআরের মাধ্যমে সমাধানকে গুরুত্ব দিতে হবে। মোট কথা, কর ব্যবস্থাপনা বিকেন্দ্রীকরণ, কর আদায়ের ডিজিটালাইজেশন, সংস্কার ও জনশক্তির উন্নতি প্রয়োজন। আয়কর রিটার্ন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা দেওয়া দরকার। কর আদায় কীভাবে সহজ করা যায় সেই পথ খুঁজতে হবে।
তিনি বলেন, এ বছরটা কষ্টের আগামী বছর আরও কঠিন হবে। এই সময় এমন কিছু কর যাবে না যাতে কর কমে যায়। কর কমে গেলে বিপদের পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। কৃষিতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিতে হবে। ভর্তুকি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এখনও ৪২ শতাংশ কর্মসংস্থান কৃষিতে হচ্ছে। কৃষিতে ভালো আছি দেখেই এখনও আমরা ভালো আছি। যেখানে ভালো করছি সেখানে আরও নজর দেওয়া উচিত। কৃষক কেন ন্যায্যমূল্য পাবে না, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। কৃষি পণ্য সহজে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থাপনা করা প্রয়োজন। জ্বালানি ও সারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সহসাই শেষ হবে না। তাই আগামী চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে জ্বালানি ও সারের ব্যবস্থাপনা।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ডলারের সংকট কাটিয়ে উঠতে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করা উচিত। কিছুদিনের জন্য হলেও বন্ধ করা উচিত। রেগুলেটরি ডিউটি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কারণ এক শ্রেণির হাতে অঢেল টাকা রয়েছে, তাদের দাম বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
তিনি বলেন, কেমন করে বাস্তবায়ন হবে, তার ওপর নির্ভর করবে বাজেটের সাফল্য। আমাদের উচিত সম্পূরক বাজেটের আলোচনা করা। কি করেছি, কি করতে পারিনি সেটা দেখতে হবে। দেশে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবদুর রহমান মাসুম বলেন, বর্তমান প্রায় ৮০ লাখ ব্যক্তির ইটিআইএন রয়েছে। যেহেতু প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন রিটার্ন জমার বড় চাপ আসবে। এই পরিস্থিতিতে এতো রিটার্ন গ্রহণ করার মতো সক্ষমতা এনবিআরের রয়েছে কি না, সেটাও ভাবার সময় এসেছে। কারণ আমরা মাঠ পর্যায়ে যতটুকু দেখেছি বর্তমানে নিয়মিত যে ২৫ লাখ করদাতা রিটার্ন দাখিল করছেন তাদের সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা তৈরি হয়। অফিস স্পেসের অভাব ও লোকবল সংকটের কারণে এমন অবস্থা। তাহলে সামনের চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবেলা করবে এনবিআর?
তিনি বলেন, এখন মনে হয় সত্যিই সময় এসেছে উপজেলা পর্যায়ে কর অফিস স্থাপনের। উপজেলায় পর্যায় যত দিন না নিজস্ব কর অফিস স্থাপন করা না যায় ততদিন উপজেলা হিসাবরক্ষণ অর্থাৎ অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টের সাথে সংযুক্ত করে আপাতত সংকট সমাধানে কর কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে আপাতত উপজেলায় পর্যায়ে একসাথে কাজ করতে পারে। কারণ দুটি প্রতিষ্ঠানই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ। তারা একসাথে অনেক কাজ এর আগেও করেছে। এতে সেবা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমন করের আওতা ও অনেক প্রসারিত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বরাদ্দ বাড়েনি। এখানে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। জাতীয় সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণেও বিনিয়োগ করতে হবে। যোগাযোগ ও জ্বালানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পাচার করা অর্থ ফেরত আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়, অর্থনৈতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিকভাবেও সহায়ক নয়। আইনের সঙ্গে এ সুযোগ কীভাবে চলে, এটা পুরোপুরি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যারা আইনের ব্যত্যয় করে টাকা নিয়ে গেছেন, আগামীতে তো মামলা মোকদ্দমার দরকার হবে না। দুদকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যারা এতদিন ধরে কাজ করছে, টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছে। তাদের কাজ তখন কী হবে? এগুলো ভালো বার্তা নয়।