স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জুন, ২০২২ ১৫:৩৮ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪১৪ বার
টেস্ট ক্রিকেটে ইনিংসে প্রথম পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন বাংলাদেশের পেসার খালেদ আহমেদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট লুসিয়া টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানে ৫ উইকেট নেন খাালেদ। খালেদের অর্জনের দিনে বাংলাদেশ ব্যাটারদের ব্যর্থতায় টেস্ট হারের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৪২ রানে পিছিয়ে টাইগাররা।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২৩৪ রানের জবাবে কাইল মায়ার্সের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৪০৮ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মায়ার্স ১৪৬ রান করেন। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ১৭৪ রানে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে দিন শেষে ৬ উইকেটে ১৩২ রান করেছে টাইগাররা।
ড্যারেন স্যামি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৫ উইকেটে ৩৪০ রান করেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মায়ার্স ১২৬ ও জশুয়া ডা সিলভা ২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন।
তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। মিরাজের বল সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর আউট হন ডা সিলভা। ২৯ রান করেন তিনি। মায়ার্সের সাথে ষষ্ঠ উইকেটে ২০৫ বলে ৯৬ রান যোগ করেন ডা সিলভা।
আগের দিন ২ উইকেট নেয়া খালেদ, তৃতীয় দিন প্রথম উইকেট শিকার আলজারি জোসেফকে বিদায় দিয়ে। ৬ রান করেন জোসেফ।
বাংলাদেশের পথের কাটা হয়ে ছিলেন মায়ার্স। সেই মায়ার্সকে অবশেষে বিদায় দেন খালেদ। নিজের চতুর্থ শিকার করেন তিনি। খালেদের স্লোয়ারে বোকা বনে যান মায়ার্স। মিড-অনে শরিফুল ইসলামকে ক্যাচ তুলে দেন মায়ার্স। ২০৮ বলে ১৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৪৬ রান করেন মায়ার্স।
মায়ার্স ফিরলেও, লোয়ার-অর্ডার কেমার রোচের দৃঢ়তায় ৪শ রান স্পর্শ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাথে ছিলেন এন্ডারসন ফিলিপ। ৯ রানে ফিলিপকে শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নবম উইকেটের পতন ঘটান শরিফুল। আর শেষ ব্যাটার জেইডেন সিলেসকে বিদায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটান খালেদ। সেই সাথে টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম ম্যাচে এসে প্রথমবারের মত পাঁচ উইকেট শিকার করেন খালেদ। সিলেস ৫ রানে বিদায় নেন। ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন রোচ।
বাংলাদেশের খালেদ ১০৬ রানে ৫ উইকেট নেন। মিরাজ ৩টি ও শরিফুল ২টি উইকেট নেন।
প্রথম ইনিংসে ১৭৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বিপদেই পড়ে বাংলাদেশ। ৫৭ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় তারা। পেসার কেমার রোচের করা তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলটি অহেতুক স্টাম্পের অনেক বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তামিম ইকবাল। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৫০তম উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করেন রোচ।
আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের সাথে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন নাজুল হোসেন শান্ত। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। রোচের দ্বিতীয় শিকার হন জয়। স্লিপে ক্যাচ দেয়ার আগে ১৩ রান করেন তিনি।
২০১৪ সালের পর টেস্ট খেলতে নেমে এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৫টি চারে ২৩ রানের ছোট্ট ইনিংস খেলেছিলেন এনামুল হক বিজয় । তবে এই ইনিংসে ৪ রানে থামতে হয় তাকে। রোচের বলে লেগ বিফোর আউট হয়েছেন তিনি।
৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে যখন কাঁপছিলো বাংলাদেশ, তখন ক্রিজে শান্তর সঙ্গী হন লিটন দাস। উইকেটে সেট হয়ে রানের চাকা ঘুড়াতে শুরু করেন তারা। কিন্তু লিটনকে থামিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চতুর্থ সাফল্য এনে দেন জেইডেন সিলেস। লেগ বিফোর আউটের জন্য আবেদন ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি আম্পায়াররা। এতে রিভিউ নিয়ে লিটনকে ১৯ রানে আউট করেন সিলেস। ৩২ বল খেলে ২টি চার মেরেছিলেন লিটন।
২০ ওভারের মধ্যে ৪ উইকেট হারানোয় ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দিনের খেলা বাকী ছিলো ১৬ ওভার। বাকী ওভারগুলোতে বিপদ ছাড়া সামলাতে রক্ষনাত্মক হয়ে পড়েন শান্ত ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দু’জনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ১শ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশ।
তবে ১শ পার হবার পরই শান্তকে বিদায় দেন আলজারি জোসেফ। জোসেফের অফ-স্টাম্পের বল টি-টোয়েন্টি স্টাইলে সজোরে হাঁকাতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন প্রায় ১শ বল খেলে উইকেটে সেট থাকা শান্ত। ৯১ বলে ৮টি চারে ৪২ রান করেন শান্ত। এই ইনিংসে এটিই এখস পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ।
শান্তর বিদায়ের ১৯ বল পর বাংলাদেশ অধিনায়ককে তুলে নেন জোসেফ। সামান্য অফ-স্টাম্পের বল খোঁচা মেরে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাম্পবেলকে ক্যাচ দিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন সাকিব। ১৬ রান করেন সাকিব।
সাকিব যখন ফিরেন তখন দিনের খেলার ১৭ বল বাকী ছিলো। বাকী সময়ে আর কোন বিপদ হতে দেননি নুরুল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। নুরুল ১৬ ও মিরাজ শূন্য হাতে অপরাজিত আছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোচ ৩টি, জোসেফ ২টি ও সিলেস ১টি উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড : (টস-ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২৩৪/১০, ৬৪.২ (লিটন ৫৩, তামিম ৪৬, জোসেফ ৩/৫০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৩৪০/৫, ১০৬ ওভার, মায়ার্স ১২৬*, ডা সিলভা ২৬*) :
ব্রার্থওয়েট বোল্ড ব মিরাজ ৫১
ক্যাম্পবেল ক নুরুল ব শরিফুল ৪৫
রেইফার বোল্ড ব খালেদ ২২
বোনার বোল্ড ব খালেদ ০
ব্লাকউড ব মিরাজ ৪০
মায়ার্স ক শরিফুল ব খালেদ ১৪৬
ডা সিলভা এলবিডব্লু ব মিরাজ ২৯
জোসেফ ক লিটন ব খালেদ ৬
রোচ অপরাজিত ১৮
ফিলিপ ক নুরুল ব শরিফুল ৯
সিলেস ক নুরুল ব খালেদ ৫
অতিরিক্ত (বা-৯, লে বা-২৪, নো-৪) ৩৭
মোট (অলআউট, ১২৬.৩ ওভার) ৪০৮
উইকেট পতন : ১/১০০ (ক্যাম্পবেল), ২/১৩১ (ব্র্যাথওয়েট), ৩/১৩১ (রেইফার), ৪/১৩২ (বোনার), ৫/২৪৮ (ব্লাকউড), ৬/৩৪৪ (ডা সিলভা), ৭/৩৬৩ (জোসেফ), ৮/৩৮৪ (মায়ার্স), ৯/৪০৩ (ফিলিপ), ১০/৪০৮ (সিলেস),
বাংলাদেশ বোলিং :
শরিফুল : ১৯-৬-৭৬-২,
খালেদ : ৩১.৩-৩-১০৬-৫ (নো-১),
সাকিব : ১৮-৫-৪৬-০ (নো-১),
এবাদত : ১৯-৬-৫৬-০ (নো-২),
মিরাজ : ৩৯-৮-৯১-২।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস :
তামিম ইকবাল ক ডা সিলভা ব রোচ ৪
মাহমুদুল হাসান জয় ক ব্লাকউড ব রোচ ১৩
নাজমুল হোসেন শান্ত ক ডা সিলভা ব জোসেফ ৪২
আনামুল হক এলবিডব্লু ব রোচ ৪
লিটন দাস এলবিডব্লু ব সিলেস ১৯
সাকিব আল হাসান ক ক্যাম্পবেল ব জোসেফ ১৬
নুরুল হাসান অপরাজিত ১৬
মিরাজ অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (বা-৯,লে বা-১, নো-২, ও-৬) ১৮
মোট (৬ উইকেট, ৩৬ ওভার) ১৩২
উইকেট পতন : ১/৪ (তামিম), ২/২২ (জয়), ৩/৩২ (আনামুল), ৪/৫৭ (লিটন), ৫/১০৪ (শান্ত), ৬/১১৮ (সাকিব)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :
রোচ : ১০-১-৩২-৩ (নো-১),
জোসেফ : ১০-২-৩১-২ (ও-২),
এন্ডারসন ফিলিপ : ৫-১-২৩-০ (নো-১),
সিলেস : ৬-২-১৫-১,
মায়ার্স : ৫-১-২১-০।