ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

রিজার্ভ-মূল্যস্ফীতি নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৫ জুলাই, ২০২২ ১০:০৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪০৪ বার


রিজার্ভ-মূল্যস্ফীতি নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না

বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ দিয়ে ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পণ্যের বাজার অস্থিরতার কারণে কমপক্ষে ৭ মাসের ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ থাকা দরকার। আর মূল্যস্ফীতি ‘গড় বা মাসিক’ যে কোনো হিসাবে অতীতের তুলনায় এর হার অনেক বেশি। রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতির সংকট এখন দৃশ্যমান।

তবে বিশ্ববাজারে কমতে শুরু করছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। সর্বশেষ কৃষ্ণ সাগরের বন্দর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি করতে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন। এতে দাম আরও কমে আসবে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে মূল্যস্ফীতিতে। তবে লোডশেডিং ছাড়া সরকারের ব্যয় সংকোচনসহ অন্যসব পদক্ষেপ রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। কিন্তু লোডশেডিং মোকাবিলায় উৎপাদনমুখী শিল্প, মাঠের কৃষক ও শহরের বড় অ্যাপার্টমেন্টগুলোর জেনারেটের জ্বালানি তেলের ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এই তেলের ব্যবহারের পরিমাণ লোডশেডিংয়ে সাশ্রয়কৃত তেলের পরিমাণের চেয়ে বেশি হলে হিতে বিপরীতে চলে যাবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত-এমনটি মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

এরই মধ্যে ডলারের রিজার্ভ যা আছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রিজার্ভ নিয়ে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, নেই বলেও রিজার্ভ এখন ৩৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে তিনি স্বীকার করে বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির অঞ্চলগুলোতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমাদের সে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার সেগুলো নেওয়া হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকার আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দুটি সংকট দৃশ্যমান। প্রথম, বৈদেশিক মুদ্রা এবং দ্বিতীয় মূল্যস্ফীতি। মুদ্রার বিনিময় হারের আচরণ দেখলে বোঝা যায় চাহিদার তুলনায় জোগানের ঘাটতি আছে। বাণিজ্য ঘাটতি ২৩ বিলিয়নে ঠেকেছে। মোট ডলারের আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যে যেখানে উদ্ধৃত্ত থাকত এখন আর নেই। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বারো মাসের গড় এবং মাসিক মূল্যস্ফীতির হার যেটিই বলা হোক বাস্তবতা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। অতীতের তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবিকায় চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে বছরের শুরুতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ সাধন করছে। ঘোষিত পদক্ষেপ মানা হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য ঘাটতি ও আমদানি ব্যয় কমাতে এটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দ্বিতীয়, আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে আমদানি ব্যয় কমবে। কিন্তু তৃতীয় পদক্ষেপ রির্জাভের ওপর চাপ কমাতে জ্বালানি সাশ্রয় করতে লোডশেডিং করা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের সুফল ও কুফল অর্থাৎ দুধরনের ফলাফল হতে পারে। কারণ এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কতটা হিসাব করে নিয়েছে সরকার এটি জানা নেই। তিনি বলেন, লোডশেডিংকালীন উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা চালু রাখা হয়। সেটি ডিজেল, ফার্নেস ওয়েল চালিত জেনারেটর দিয়ে। এছাড়া শহরের বড় বড় অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জেনারেটর চালু করে দেওয়া হয়। এছাড়া এখন আমন উৎপাদনের মৌসুম। এ বছর বৃষ্টি কম হয়েছে। আমন বৃষ্টিনির্ভর শস্য। বৃষ্টির পানির বিকল্প সেচ দিয়ে পূরণ করছে কৃষক। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ মেশিন চালানো হচ্ছে ডিজেল দিয়ে। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, একদিকে জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য লোডশেডিংয়ের পথ বেছে নিয়েছে সরকার। অপরদিকে লোডশেডিং মোকাবিলায় উৎপাদনমুখী শিল্প, কৃষক ও অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। যদি এমন হয় লোডশেডিংয়ে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল সাশ্রয় হচ্ছে তারচেয়ে বেশি চলে যাচ্ছে লোডশেডিং মোকাবিলায়। সেক্ষেত্রে সরকারের এ সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হবে। ড. জাহিদ হোসেন উদাহরণ দিয়ে বলেন, শ্রীলংকা ডলার সাশ্রয় করতে সার আমদানি বন্ধ করে চারশ কোটি ডলার সাশ্রয় করেছিল। কিন্তু এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় খাদ্য ঘাটতি মেটাতে সাড়ে চারশ কোটি ডলারের চাল আমদানি করতে হয়। লোডশেডিংয়ের বিষয়টি যেন সেরকম না হয়।

রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের মজুতে চাপ বাড়ছে। তবে সরকার এই পরিস্থিতিকে এখনও আশঙ্কাজনক মনে করছে না। যদিও রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিদ্যুতের লোডশেডিং করাসহ সাশ্রয়ী বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যাতে জ্বলানি আমদানির খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক সংকট স্বল্পমেয়াদি নয়। এ সংকট মধ্যমেয়াদি হবে-এমনটি মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।


   আরও সংবাদ