ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

৭শ কোটি ডলারের ঋণ নিয়ে চলছে আলোচনা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৮ জুলাই, ২০২২ ০৮:২২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৮৭ বার


৭শ কোটি ডলারের ঋণ নিয়ে চলছে আলোচনা

ঘাটতি বাজেট মেটাতে সরকার বৈদেশিক ঋণের দিকে নজর দিচ্ছে বেশি। ডলার সংকট ও রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেননা এই ঋণের পুরো অর্থ মিলবে ডলারে। এছাড়া এ মুহূর্তে ব্যাংকিং খাত থেকে বেশি ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

পাশাপাশি সুদ খাতে বিপুল পরিমাণ ব্যয় সাশ্রয় করতে সঞ্চয়পত্র থেকে কম ঋণ নেওয়া হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয় কমিয়ে আনতে অর্থ বিভাগ এ ধরনের পথে হাঁটছে। যে কারণে বিদেশি ঋণ পেতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।


সূত্রমতে, চলতি (২০২২-২৩) বাজেট সহায়তা হিসেবে এ মুহূর্তে দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ৬৭০ কোটি মার্কিন ডলার নিয়ে আলোচনা চলছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা (এক ডলার সমান ৯৪.৮৩ টাকা)। তবে সরকারের ঘাটতি বাজেট মেটাতে চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন প্রায় এক হাজার ২শ কোটি মার্কিন ডলার বা ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। বাজেট ঘোষণার সময় এই ঘাটতি ঋণ নিয়ে পূরণ করার কথা বলা হয়।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন  বলেন, ‘আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলোর কাছে বাজেট সহায়তা হিসেবে ঋণ চাইছে সরকার। এখন আমাদের রিজার্ভ বাড়ানো দরকার। এমন প্রেক্ষিতে দাতা সংস্থা থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ঋণ গ্রহণে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘আইএমএফ ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত হিসাবে কিছু সংস্কারের কথা বলবে। এর মধ্যে রাজস্ব খাতে অটোমেশন চালু, আর্থিক খাতে ঋণ ও আমানতের সুদের হারের ওপর আরোপিত ক্যাপ তুলে নেওয়া, জ্বালানি তেলের মূল্য একটি ফর্মুলায় এনে ঘোষণা করা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে বাজেট থেকে আলাদা করা। তবে এসব শর্ত ও সংস্কার আমাদের এমনিতেই করা উচিত। ফলে দাতা সংস্থার এসব শর্ত আমাদের নতুন করে কোনো সমস্যায় ফেলবে না।’

দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হলে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে কম ঋণ নিতে হবে। এতে সরকারের ঋণ ব্যয় কমবে-এমনটি মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এমকে মুজেরি। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আছে। আমাদের প্রয়োজন তাদের ঋণ সহায়তার। এই ঋণ পাওয়া গেলে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে অনিশ্চয়তাও কাটবে।’

প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহে ঋণ সহায়তা চেয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) চিঠি দিয়েছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে আইএমএফের কাছে ঋণের অঙ্ক তুলে ধরা হয়নি। সেটি আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে এই সংস্থার কাছে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা চাওয়া হবে। বাংলাদেশ প্রাধিকার অঙ্কে ৭শ কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ চাইতে পারবে।

এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকার কাছ থেকেও বাজেট সহায়তা নেওয়ার আলোচনা শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। দাতা সংস্থা এডিবির সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সামাজিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার-এই দুই খাতে অর্থ খরচ করা হবে।

অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৭০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এদিকে চলতি সপ্তাহে জাইকার সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠকে তিনি সংস্থারটি কাছ থেকে বাজেট সহায়তা হিসাবে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার চেয়ে অনুরোধ করেছেন। এ নিয়ে ঢাকা সফররত জাইকা প্রেসিডেন্ট আকিহিকো তানাকা গত সোমবার বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে।

সাধারণত প্রতিবছর ঘাটতি বাজেট পূরণ করা হয় দুইভাবে। এর মধ্যে একটি দেশের ভেতর (ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র) থেকে ঋণ নিয়ে আর দ্বিতীয় হচ্ছে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে। এ বছর ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ গ্রহণ কম করার পরিকল্পনা নিয়েছে। যদিও এ খাত থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কয়েকটি কারণে ব্যাংক থেকে কম ঋণ নেওয়া হবে।

প্রথমত, করোনার পর দেশের ভেতর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি চালু হয়েছে। এ সময় সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ করলে ওই টাকা বাজারে আসবে। এক পর্যায়ে এটি মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিতে পারে। এমনিতেই গত ৯ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করছে বর্তমান মূল্যস্ফীতির হার। এমন শঙ্কা কাজ করছে সরকারের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

দ্বিতীয়ত, সঞ্চয়পত্রে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি সুদ দেওয়া হচ্ছে। ফলে এ খাত থেকে ঋণ গ্রহণ করলে সুদ বাবদ বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করতে হবে। সরকার বৈশ্বিক সংকটের কারণে ব্যয় নানাভাবে সাশ্রয় করছে। এর ফলে এ খাত থেকেও কম ঋণ নেওয়ার পথে এগোচ্ছে। অপরদিকে ডলার সংকট বিরাজমান আছে। এতে এক ধরনের রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে। ফলে সব দিক বিবেচনায় এবার ঘাটতি বাজেট মেটাতে বৈদেশিক ঋণই এখন উপযুক্ত বলে মনে করছেন অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

ঋণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বাজেট সহায়তা হিসাবে বৈদেশিক ঋণকে এ বছর বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব বাংলাদেশের ওপর এসে পড়েছে। বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। এতে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৮১৫ কোটি মার্কিন ডলার। এটি আগের বছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি। এছাড়া ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সারসহ ৯টি পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ৮২০ কোটি মার্কিন ডলার। একই সময়ে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণও কমেছে। এতে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

উল্লেখ করা যেতে পারে, গত বছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৪৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের (৪৫ বিলিয়ন) কাছাকাছি ছিল। কিন্তু বর্তমানে এটি নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৩৯৭০ কোটি ডলারে (৩৯.৭ বিলিয়ন)।


   আরও সংবাদ