ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৯ অগাস্ট, ২০২২ ১৩:৫১ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩২৯ বার
গত মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিসিপি) পুঞ্জীভূত মুনাফা হয়েছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে অনেক বেশিতে ভোক্তার কাছে জ্বালানি বিক্রি করে এ অর্থ লাভ করে।
আট বছরে সংস্থাটি এ পরিমাণ মুনাফা করে। এ সময়ে তাদের কোনো ভর্তুকি দিতে হয়নি। লাভের টাকা ব্যাংকে এফডিআর হিসাবে আছে। এখান থেকে সুদ বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছে।
বিপিসি একবার তেলের দাম প্রতি লিটারে কমিয়েছে মাত্র ৩ টাকা। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিপিসির বকেয়া ও শ্রেণিবিন্যাসিত ঋণের পরিমাণ ৫০৬৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর শ্রেণিবিন্যাসিত ঋণের পরিমাণ ১৪ লাখ টাকা।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, বিপিসি গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ছয় মাসে আট হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেখা যায়, চলতি ২০২২ সালের ২২ মে পর্যন্ত বিপিসি মুনাফা করেছে ১২৬৪ কোটি টাকা।
জানা যায়, সংস্থাটির মোট লাভ থেকে সরকার নিয়ে গেছে ১২ হাজার কোটি টাকা। আয়কর পরিশোধ হয়েছে ৫৭০ কোটি টাকা। ব্যাংকে আছে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা।
এর পরও বিপিসি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত না নিয়েই জ্বালানি তেলের রেকর্ড পরিমাণ দাম বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির পরও বিপিসি তেল বিক্রি করে লাভ করেছে। এখন নতুন দাম নির্ধারণের পর মুনাফা আরও বাড়ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, তাদের মত নিলে দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন হতো না।
এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিপিসি জনগণের টাকা দিয়ে মুনাফার পাহাড় গড়েছে। এসব অর্থ ব্যাংকে এফডিআর করে সুদ খাচ্ছে। সেখানে রেকর্ড পরিমাণে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি কোনোভাবেই যৌক্তিক হয়নি। তারা বলেন, বিপিসির কাছে যে অর্থ আছে, তা দিয়ে বর্তমান দরে আগামী ২১ মাসের জ্বালানি তেল আমদানি সম্ভব।
তাদের মতে, জ্বালানি তেলের নতুন দামের কারণে সব পণ্য ও সেবার মূল্য অসহনীয়ভাবে বেড়ে যাবে। এদিকে অর্থনৈতিক মন্দায় মানুষের আয় বাড়ছে না। কর্মসংস্থান হচ্ছে না।
এ অবস্থায় মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে। জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। তারা তেলের দাম বাড়ানোর নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় বিপিসি লোকসান দিচ্ছে। এখন তেলের দাম না বাড়িয়ে কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দাম না বাড়িয়ে যে দামে তেল বিক্রি করছিল তাতেও বিপিসির মুনাফা হচ্ছিল।
সমীক্ষার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গত অর্থবছরে নিট মুনাফা করেছে ১২৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে নিট মুনাফা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৯৫৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫০৬৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৭৬৮ কোটি ৪২ লাখ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫৬৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮৬৫৩ কোটি ৪০ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯০৪০ কোটি ৭ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪১২৬ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নিট লাভের পরিমাণ ছিল ২৩২১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, মুনাফার এই অর্থ বিপিসি ভালো ব্যাংকে জমা রাখার পাশাপাশি অনেক দুর্বল ব্যাংকেও জমা রেখেছে। ফলে অর্থ আদায় নিয়ে বিপিসিকে মাঝে বেকায়দায়ও পড়তে হয়েছে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে তেল আমদানির অভিযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে সংস্থাটি টাকা পাচার করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ ধরনের একটি ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে ধরা পড়েছে। ওই সময়ে বিপিসি আন্তর্জাতিক বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে তেল আমদানি করেছে।
পরে ঘটনাটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনায় ধরা পড়ে। বিষয়টি তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়। তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে আন্তর্জাতিক