ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০ অগাস্ট, ২০২২ ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৯৩ বার
অরিত্রীর বয়স ছয় বছর। তাকে একটি বাড়ির পাজেল মেলাতে দিলে সে প্রথমে একই রঙয়ের চিপগুলো আলাদা করে। এরপর সে সেটাকে মেলানোর চেষ্টা করে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় একটি পাজেল একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মেলাতে পারেন না বা কীভাবে মেলাবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। সেখানে ছয় বছরের অরিত্রী সঠিকভাবে তা করছে। যা তাকে কেউ শিখিয়ে দেয়নি। এভাবে আয়শা একটি খেলনা উপরে ছুঁড়ে দিচ্ছে এবং তা হাত দিয়ে ধরছে। এটা খুব সাধারণ বিষয় নয়। এতে তার চোখ, হাত এবং মনোযোগ একইসাথে কাজ করছে। এ ধরণের সমন্বয় তাকে এ ধরণের কাজে দক্ষ করে তুলছে। এগুলো তাদেরকে কেউ করতে বলেনি। তারা নিজেরা করছে। এভাবেই শিশুরা স্বাধীন খেলাধূলা করে থাকে। যার বিজ্ঞানভিত্তিক যৌক্তিকতা আছে।
শিশুদের খেলার সময় যখন কেউ হস্তক্ষেপ না করে এবং তাদের খেলার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে তখন তাকে ‘স্বাধীন খেলাধূলা’ বলা হয়। এ ধরণের খেলাধূলার সাথে তাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিলে শিশুকাল থেকে তাদের যেমন স্বকীয়তা তৈরি হবে তেমনি তাদের মনোজগতের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে বলছেন ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব এডুকেশানল ডেভলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষা ও শিশু উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ সৈয়দা সাজিয়া জামান ও ফেরদৌসী খানম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন দিন আমাদের পরিবারগুলো ছোট হয়ে আসছে। এখন আমরা একক পরিবারে বাস করছি। এমন সময় আমরা শিশুদের সঙ্গ, খেলাধূলা, নিরাপত্তা কিংবা এ ধরণের বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত থাকি। কিন্তÍ যে কোনো পরিস্থিতির মধ্যে সমাধান বের করা বুদ্ধিমান এবং আধুনিক মানুষের স্বভাব। তাই একা একা কোনো শিশু বেড়ে ওঠাকে নেতিবাচকভাবে নেয়ার কিছু নেই। বরং একা একা একটি শিশু কীভাবে সুশৃঙ্খলভাবে বেড়ে উঠবে সেদিকে নজর দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে তাদেরকে স্বাধীনভাবে খেলাধূলা করতে দিয়ে তাদের মেধা, কল্পনা, সৃজনশীলতাসহ আরো নানা দিক প্রকাশ পাবে। আর সে সব বিষয় আমরা খেয়াল করে তাদেরকে যেমন বুঝতে পারবো তেমনি তাদেরকে ইতিবাচকভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে পারবো।
কোন সময় থেকে এটি শুরু করবে এমন কোনো নিয়ম নেই। একেবারে ছোট বয়স থেকে এমনকি ছয় মাস বয়স থেকে এটি শুরু করা যেতে পারে। এ খেলার নিয়ম কী রকম কিংবা কীভাবে খেলতে হয় সেক্ষেত্রেও তেমন নিয়ম নেই। খেলতে দিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করাই প্রকৃত কাজ। এক্ষেত্রে সাজিয়া জামান বলেন, “তারা নিজেরাই সবকিছু বেছে নিতে পারে। খেলার উপকরণ, আগ্রহের বিষয় এমনকি কোনো ঘটনাও বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা তাদের রয়েছে। স্বাধীনভাবে খেলার দিন, সময় এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে তাদের মানসিকতা। শিশুরা যেভাবে বিষয়গুলো বেছে নেয় তার মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের প্রকাশ করতে পারে।”
ফেরদৌসী খানম বলেন, “এই ধরণের সুযোগ শিশুদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরো বলেন, “কিছু কিছু সময় আছে যখন শিশুদের একা বা স্বাধীনভাবে খেলা ভালো। একা একা খেললে তারা অনেক বেশি সৃজনশীল হতে পারে। স্বাধীনভাবে খেলার সময় তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে কিংবা নিজেরাই সমাধান তৈরি করে। এতে তাদের চিন্তাধারার প্রকাশ পায়, যা তাদের আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে সাহায্য করবে। স্বাধীনভাবে খেলার সময় শিশুদের মাঝে দক্ষতা এবং সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে।”
এ ধরণের খেলা খেলার জন্য শিশুকে নিরাপদ ও পরিস্কার জায়গা দিতে হবে এবং তার খেলার সময়টুকু অভিভাবককে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা ভুলবশত বা যে কোনো কারণে শিশু ক্ষতিকর কিছু করলে বিপদ হতে পারে। স্বাধীনভাবে খেলার জন্য নিজেরা কিছু উপকরণ বেছে নিয়ে শিশুদের দিতে পারেন। সেগুলো দিয়ে তারা কী করতে পারে তা খেয়াল রাখতে হবে। মাঝে মধ্যে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে এটা দিয়ে তুমি কী করতে চাও? কীভাবে এই সমস্যাটির সমাধান হতে পারে ইত্যাদি।
“যখন শিশু এ ধরণের খেলা খেলবে তখন মাঝে মধ্যে আপনিও তার সাথে যুক্ত হতে পারেন। বন্ধন তৈরি হয় এমন কিছু করুন। তাহলে সে যদি ভুল কিছু করে তা যেমন বুঝিয়ে দিতে পারবেন তেমনি সে তার ভুল বুঝতে পারবে এবং আপনাকে সবকিছু খুলে বলবে। প্রাপ্তবয়স্করা শিশুদের জন্য সব কিছু করে দেয়া ঠিক নয়। শিশু যেনো নিজেদের জন্য চিন্তা করতে পারে এবং নিজের জন্য কিছু করতে পারে। আমরা শুধু তাদেরকে মাঝে মধ্যে কিছু কৌশল শিখিয়ে দিতে পারি”- এমনই বললেন সাজিয়া।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল বলেন, “শিশুকাল থেকে যদি শিশু এ রকম খেলা খেলে তাহলে তার মনোজগৎ সমৃদ্ধ হবে। সে যেমন নিজেকে যোগ্য ও দক্ষভাবে গড়ে তোলার শিক্ষা পাবে তেমনি সমস্যা সমাধানের মনোভাব তাকে আতœবিশ^াসী করে তুলবে। তবে বিষয়টি অভিভাবকরা মনিটর করলে শিশুকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।”
শিশুকে চাপ না দিয়ে কিংবা নিজেদের মতামত তাদের উপর চাপিয়ে না দিয়ে স্বাধীনভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ ধরণের খেলাধূলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এমনই বলছেন সংশ্লিষ্টজন।