ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

শিশুর সংক্রামক রোগ সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতনতা প্রয়োজন

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৫ অগাস্ট, ২০২২ ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৫১ বার


শিশুর সংক্রামক রোগ সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতনতা প্রয়োজন

জাহেদ রহমান (৪) হঠাৎ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। আক্রান্তের প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিন তার অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকে। তাকে কলেরা হাসপাতালে নেয়া হলেও অবস্থার উন্নতি হতে সময় লাগে। এতে জাহেদের বাবা-মা ঘাবড়ে যান। তারা বলে, বাড়িতে ডায়রিয়ার রোগি ছিল। সে বিষয়ে আমরা ততটা সাবধান ছিলাম না। এটা যে সংক্রমক এবং তা এতো দ্রুত শিশুকে খারাপ অবস্থার দিকে নিয়ে যাবে তা ভাবতেও পারিনি। আসলে শিশুদের পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত তাদেরকে অনেক সাবধানে রাখার বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। এছাড়া সংক্রমক রোগগুলোর বিষয়েও আমাদের জানা থাকা উচিৎ।”

চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু ডায়রিয়া নয়, এ রকম আরও অনেক রোগ রয়েছে যা শিশুদের সংক্রমণের হার বাড়িয়ে দেয়। এ বিষয়ে সকলের ধারণা থাকা দরকার। সংক্রামক রোগ সম্পর্কে বেশি কিছু জানা না থাকলেও এটা জানা থাকা প্রয়োজন যে, বড়দের যে কোনো রোগ হলে তাদের থেকে শিশুদের আলাদা রাখা প্রয়োজন। বিশেষ করে পাঁচ বছর বয়সের নিচে পর্যন্ত তাদেরকে অনেক যতœ এবং নিয়ম-কানুনের মধ্যে রাখা প্রয়োজন। এর পর শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং নানা রোগের ঝুঁকি কমে যায়।

বিশিষ্ট শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ এবং আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কুন্তল রায় বলেন, “সাধারণত শিশুদের পানি ও বায়ুবাহিত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাজনিত সংক্রমক রোগগুলো হয়ে থাকে। ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, এইচআইভি, যক্ষা তাদের জন্য এই পাঁচটি সংক্রমক রোগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো শিশুর বয়স পাঁচ বছরের নিচে হলে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। এছাড়া আরও নানা ধরণের সংক্রমণ রোগ রয়েছে। যেমন- সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, কলেরা, কোভিড ইত্যাদি।”

শিশুদের সংক্রমণ রোগ থেকে দূরে থাকার জন্য অভিভাবকদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে বলছেন বিশিষ্ট শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাকিল আহম্মেদ। 

তিনি বলেন, “মানুষের সাধারণত, চোখ, মুখ, নাক, পায়খানা এবং চামড়ায় জীবানু থাকে। যারা অসুস্থ্য তারা শিশুদের চুমু দেয়া, স্পর্শ করা এবং তাদের সাথে হাত মিলানো থেকে দূরে থাকবেন। শিশুদের খেলনা ধরা যাবে না এবং অসুস্থ্য মানুষের ব্যবহৃত টিসু ও দরজার হাতলে জীবানু অনেক্ষণ ধরে থাকে। তাই এ সব জিনিস থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। কিছু জীবানু কফের মাধ্যমে ছড়ায়। এ ধরণের পরিস্থিতি যদি ভ্রমণের সময় হয়ে থাকে তাহলে ওই ধরণের লোক থেকে কমপক্ষে এক মিটার দূরে থাকতে হবে। কিছু জীবানু বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। যেমন, চিকেন পক্স এবং হাম। এক্ষেত্রে বাড়িতে এ ধরণের রোগী থাকলে তাদেরকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিশুদের ভ্যাকসিন দেয়া ভালো।”

কী ধরণের পরিস্থিতি হলে বোঝা যাবে শিশু খারাপ অবস্থার দিকে যেতে পারে জানতে চাইলে ডা. কুন্তল রায় আবারো বলেন, “শিশু যদি কিছু খেতে না পারে, খুব বেশি বমি করে, নিস্তেজ হয়ে যায় বা তার খিঁচুনি হয়, তার বয়সের তুলনায় বেশি শ্বাসকষ্ট হয় এবং তার বুক দেবে যায় তাহলে সাথে সাথে তাকে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।” 

তিনি আরও বলেন, “শিশুকে ভালো রাখার জন্য বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার যে টিকাগুলো দিচ্ছে সে সব টিকা দিতে হবে। এছাড়া বেসরকারিভাবে কিছু টিকা আছে সেগুলো দিতে হবে। শিশুদের সব সময় ১৫-৩০ মিনিট পানি ফুটিয়ে খাওয়াতে হবে। তাদেরকে মাস্ক পরাতে হবে এবং যাদের কোনো ধরণের সংক্রমক রোগ রয়েছে তাদের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে। অবশ্যই তাদেরকে সুষম খাবার খাওয়াতে হবে এবং ইমিউনিটি বুস্টআপ করতে হবে।”
   
‘প্রিভেন্টিং ইনফেকশনস সেভিংস লাইফস’ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাইল্ড হেলথ রিচার্স ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর দুই মাসের নিচে বয়সী ৫ লাখ শিশু মারাতœক সংক্রমণের জন্য মারা যায়। 

সরকার বলছে, আগে এটা আরো বেশি ছিল। এখন এ সংখ্যা আরো কমানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। সংক্রমণ কমানোর জন্য সরকার কিভাবে কাজ করছে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই এন্ড সারভিল্যান্স-এর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. তানভীর হোসেন বলেন, “সরকার শূণ্য থেকে ১ বছর বয়সী শিশুদের সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধের জন্য ১০টি টিকা দিয়ে থাকে। এটা সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দেয়া হয়। এছাড়া হাসপাতালগুলোতে এ ধরণের শিশুদের জন্য বিশেষ যত্ন নেয়া হয়। গবেষণা চলছে। আগামিতে টিকা দেয়ার পরিমাণ হয়তো বাড়বে। তখন সংক্রমণের হার আরও কমবে।”

শিশুদের সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধের জন্য শুধু টিকা নয়, সচেতনতা প্রয়োজন। এটি গর্ভকালীন সময় থেকে শুরু করে বিশেষ করে দুই মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে অনেক বেশি সাবধানে রাখতে হবে। এ সময়টা কেটে যাওয়ার পর শিশুর পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে পর্যন্ত অভিভাবক এবং চিকিৎসকদের গভীরভাবে মনিটরিং করতে হবে, সাবধানতার বিষয়গুলোও জানা থাকা প্রয়োজন এবং সচেতন হতে হবে। এই সচেতনতায় গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে বলছেন সংশ্লিষ্টজন। সূত্র : বাসস


   আরও সংবাদ