ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫১৫ বার
নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজনে ও রাত-দিনের পালাক্রমে আগমন ও প্রস্থানে বহু নিদর্শন আছে ওইসব বুদ্ধিমানের জন্য যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে (সর্বাবস্থায়) আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে (এবং তা লক্ষ্য করে বলে ওঠে) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি এসব উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করেননি। আপনি অনর্থক কাজ থেকে পবিত্র (আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)।
উল্লিখিত আয়াতের মাধ্যমে প্রতীয়মান যে, মানুষ জগতের যা কিছু দ্বারা উপকার লাভ করে তা সবই আল্লাহ তায়ালার দান। এর প্রত্যেকটি জিনিস আল্লাহ তায়ালার তাওহিদের নিদর্শন।
এখন প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির কল্যাণে গোটা বিশ্বই এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। মুহূর্তে এক দেশের খবর চলে আসে অন্য দেশে। হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থানরত মানুষের সাথে কথা বলা যায় অনায়াসে।
পৃথিবীর এই তাবৎ আবিষ্কার, প্রযুক্তির এই সব উন্নয়ন সবই ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য মহান আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নিয়ামত। যার শুকরিয়া আদায় করা প্রতিটি বান্দার জন্য আবশ্যক।
কেননা আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে বেশি বেশি করে দেবো। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে (মনে রেখো) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর’ (সূরা ইবরাহিম : ৭)।
মানুষের প্রত্যেক কথা ও কাজ আল্লাহর দরবারে হিসাব দিতে হবে। না জেনে অনুমাননির্ভর মন্তব্য করা জঘন্য পাপ। সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি হচ্ছে এই জঘন্য পাপ। কারণ কেউ কাউকে অপছন্দ করলে তার কমেন্ট ঘরে এসে অপবাদ ও ধারণাপ্রসূত মন্তব্য করাটাই যেন দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে।
মানুষ রুটিন করেই কমেন্ট করে যাচ্ছে অন্যের পোস্টে। তবে কমেন্টের অধিকাংশই ধারণাপ্রসূত। অনেকেই আবার হাসির ছলেও মিথ্যা বানোয়াট মন্তব্য করে দেয় যা আরও মারাত্মক। কারণ হাসির ছলেও মিথ্যা অপবাদ দেওয়া কবিরা গুনাহের শামিল।
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই করো। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সূরা হুজরাত : ১২)।
প্রযুক্তির সহজ ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে অনলাইনে মিথ্যা ছড়িয়ে দিচ্ছে অনেকেই। অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নগ্নতাকে উসকে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ফেসবুককে দাওয়াতের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে ইসলামের প্রচার-প্রসারে ভূমিকা পালন করতে পারেন। কুরআনের সাথে আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত তত্ত্বগুলো যে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা প্রচারে আলেমদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
আমাদের আলেম সমাজেরই দায়িত্ব প্রযুক্তির এই দিকহারা জাহাজের পাল টেনে ধরার। সেই সাথে মানুষকে তার সঠিক ব্যবহার শিক্ষা দেয়া।
ইসলামের খেদমতে প্রযুক্তিকে কিভাবে আরো শক্তিশালী করা যায়, তা নিয়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। কারণ এখন মানুষ প্রযুক্তিনির্ভর। অফিস-আদালত, বই-পুস্তক, দোকান-পাঠ সবই এখন হাতের মুঠোয়। কিন্তু প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতা যেন আমাদের ধ্বংসের কারণ না হয়।
আমরা মুসলমান। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সবকিছুর একদিন হিসাব আল্লাহর দরবারে দিতে হবে। আমরা ছোট-বড় যে কোনো কাজ করি না কেন সবকিছু আল্লাহর দরবারে লেখা থাকে।
আমাদের মুখে উচ্চারিত সব কথাই আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের মধ্যমে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার সঙ্গেই রয়েছে।’(সূরা কাফ : ১৮)।
যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় তাদের মারাত্মক রোগ হলো তারা কাউকে অপছন্দ করলে তার ভিডিও, অডিও ক্লিপ বা ছবি বিকৃতভাবে শেয়ার করেন যাচাই-বাছাই ছাড়াই। না জেনে না শুনে গুজব ছড়িয়ে দেন অনায়াসে। অথচ যে কোনো খবর যাচাই-বাছাই ছাড়া শেয়ার বা প্রচার করা অত্যন্ত নিকৃষ্ট কাজ।
কুরআনে এ ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ (সূরা হুজুরাত : ০৬)।
হাদিসে এসেছে, আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, নবি (সা.) বলেছেন, মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শোনে (বিনা বিচারে) তা-ই বর্ণনা করে।