ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

প্রাচীন মিথোলজিতেই রয়েছে রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উল্লেখ

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ জানুয়ারী, ২০২২ ১০:০২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩২৯ বার


প্রাচীন মিথোলজিতেই রয়েছে রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উল্লেখ

১৯২০ সালের আগে 'রোবট' শব্দটারই জন্ম হয়নি। সে সময় চেক নাট্যকার কারেল কাপেক তার 'রোসাম'স ইউনিভার্সাল রোবট' শীর্ষক নাটকে প্রথম রোবট শব্দ ব্যবহার করেন। তবে রোবট বা এ ধরনের বস্তুগুলো বিভিন্ন মিথোলজিতে আরও হাজার বছর আগে থেকেই ছিল।

মিথোলজিতে অটোমেশন
বর্তমান তুরস্কে ১২ শতকে প্রকৌশলী ইসমাইল ইবনে আল-রাজ্জাজ আল-জাজারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অনেকগুলো জটিল মেশিন তৈরি করেছিলেন।

তার নির্মিত যন্ত্রের মধ্যে ছিল ঝর্ণা ও পানিশক্তিতে চলা অ্যালার্ম ঘড়ি। এ যন্ত্রগুলো তৈরির পেছনের বিজ্ঞান নিয়ে তিনি 'দ্য বুক অভ নলেজ অভ ইনজিনিয়াস মেকানিক্যাল ডিভাইসেস' শীর্ষক একটি গ্রন্থও লিখেছিলেন।

তবে ধারণা করা হয়, তার উদ্ভাবন করা অটোমেশন প্রক্রিয়ার কারণে মানুষ তাকে 'দ্য ফাদার অভ রোবোটিক্স' বলে ডাকত। এসবের মধ্যে ছিল একটি যান্ত্রিক মেয়ে পুতুল যে কিনা চা ঢেলে দিতে পারত।

জাজারি'র আরেকটি আবিষ্কার ছিল চারটি রোবটের একটি দল যারা কিনা বিভিন্ন সুর বাজাতে পারত। সেই সুরকে আবার বিভিন্ন বিটে বাজানোর জন্য প্রোগাম করা যেত।

ইহুদি ফোকলোরে আছে গোলেমের কথা। মাটির তৈরি এ মানুষকে জাদুর দ্বারা প্রাণদান করা হয়। গোলেমের মুখে ভাষা ও শব্দ প্রদানের মাধ্যমে তাকে জীবিত করা হয়।

আজকের দিনের বড়মাপের লেঙ্গুয়েজ মডেল এআই প্রোগ্রামগুলো যেন গোলেমের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অনেকে তো মনে করেন, এ প্রোগ্রামগুলো সংবেদী। এদের মধ্যে 'প্রাণচাঞ্চল্য' সৃষ্টি করার পেছনেও ভাষাই বড় ভূমিকা রাখে।

কিন্তু খুঁজলে মিথোলজিতে রোবটের কথা আরও অতীতেও পাওয়া যাবে। কৃত্রিম প্রাণের বিষয়ে ভাবনা প্রাচীন সংস্কৃতিগুলোতেও ছিল।

প্রাচীন গ্রিকরা অনেক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র উদ্ভাবন করেছিল। এসবের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন ছিল পাপেট থিয়েটার যেটি কিনা নিজে থেকে দিব্যি একটা নাটক দেখাতে পারত।

গ্রিক ধাতুবিদ্যা ও প্রযুক্তির দেবতা হ্যাফেস্টাস অন্য দেবতাদের জন্য চমৎকার অস্ত্র তৈরি করতেন। এছাড়া তিনি অনেকগুলো সত্তারও সৃষ্টি করেছিলেন। হোমারের 'ইলিয়াড' থেকে জানা যায়, হ্যাফেস্টাস তার কাজে সাহায্য করার জন্য সোনা দিয়ে দাসী নির্মাণ করেছিলেন।

আরেকটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, হ্যাফেস্টাস টালোস নামক একটি দৈত্যাকার যান্ত্রিক মানুষ তৈরি করেন। এটিকে অনেকে 'পৃথিবীর বুকে হাঁটা প্রথম রোবট' হিসেবে বিবেচনা করেন। ক্রিটের উপকূলে হেঁটে বেড়িয়ে পাহারাদারের কাজ করত এ দানব রোবট।

গ্রিক মিথোলজির প্যানডোরার বাক্সের প্যানডোরাও হ্যাফেস্টাসের সৃষ্টি আরেকটি কৃত্রিম প্রাণ। তবে টালোস মানুষকে রক্ষা করার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও প্যানডোরা মানবজাতির জন্য নানা অভিশাপ বয়ে এনেছিল।

এ মিথগুলো যা শেখাতে পারে আমাদের
২০১৮ সালে প্রকাশিত 'গডস অ্যান্ড রোবটস: মিথস, মেশিনস, অ্যান্ড অ্যানশিয়েন্ট ড্রিমস অভ টেকনোলজি' গ্রন্থের লেখক আড্রিয়েন মেয়র বলেন, 'এ কৃত্রিম সত্তাগুলোকে মনে করা হতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা বস্তু হিসেবে। মানুষ যেসব উপাদান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের যন্ত্র তৈরি করত, দেবতাদের নির্মাণেও সেরকম ব্যবহারেরই উল্লেখ পাওয়া যায়।'

প্রাচীনকালের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নিয়ে তৈরি করা এ গল্পগুলোকে মেয়র কিছুটা 'সুপ্রাচীন থট এক্সপেরিমেন্ট' বা 'এমনটা হলে কী হবে দৃশ্যপট' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বর্তমান সময়ে বাস্তবে রোবট তৈরি করেছে মানুষ। আজকাল অনেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন। প্রমিথিউস দেবতাদের কাছ থেকে উপহার গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। পুরনো মিথোলজিগুলো ঘাঁটলে হয়তো এ ধরনের সতর্কতা আরও অনেক পাওয়া যাবে।

সূত্র: ডিসকভার ম্যাগাজিন


   আরও সংবাদ