ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর, ২০২২ ১১:৪২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৭৪ বার
টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়লে পণ্য আমদানি ব্যয় বাড়ে। তখন এই বাড়তি দামের ওপর শুল্ক-কর আদায় করা হয়। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আদায় বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ শতাংশ, যা একটি রেকর্ড।
ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানিসংশ্লিষ্ট জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এতে দেশের মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বাড়লেও রাজস্ব আয় বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এখন যে মূল্যস্ফীতি তা মূলত আমদানিজনিত। সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এই চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি। কারণ বাংলাদেশ মূলত আমদানির্ভর দেশ। এ কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে অভ্যন্তরীণ বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে রাজস্ব আয়ের সম্পর্কটা সরাসরি। বিশেষত আমিদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আহরণে। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়লে পণ্য আমদানির খরচ বাড়ে। তখন এই বাড়তি দামের ওপর শুল্ক-কর আদায় করা হয়। ফলে সামগ্রিকভাবে রাজস্ব আয় বাড়ে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আদায় বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ শতাংশ, যা একটি রেকর্ড।
এই দুই মাসে আমদানি শুল্ক আদায় হয়েছে ১৪ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ১১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা।
রাজস্ব কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে শুল্ক আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
সেপ্টেম্বরের হিসাব এখনও চূড়ান্ত না হলেও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের একটি সূত্র নিউজবাংলাকে জানিয়েছে, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেকর্ড শুল্ক-কর আদায় হয়েছে।
জানা যায়, পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে লাফিয়ে ডলারের দাম প্রায় ২২ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় সব পণ্যের আমদানি খরচ বেড়েছে। একই হারে বেড়েছে রাজস্ব আয়।
মে মাসে ডলারের দাম ছিল ৮৭ টাকা, যা বর্তমানে ১০৬ টাকায় উঠেছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে সব ধরনের পণ্যমূল্যেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নিত্যব্যবহার্য সাবান, টুথপেস্ট, টিস্যু, টয়লেট ক্লিনার ও তৈজসপত্রের দাম বাড়ছে। বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে পানীয়, রুটি-বিস্কুট, শিশুখাদ্যসহ আমদানিনির্ভর (তৈরি খাবার ও কাঁচামাল) মোটামুটি সব ধরনের খাদ্যপণ্য। শিক্ষা উপকরণ কাগজ, কলম ও পেনসিলের দামও বাড়তি। বেড়েছে পোলট্রি, মাছ ও গবাদিপশুর খাদ্যের দাম।
নির্মাণ খাতের উপকরণ রড ও সিমেন্টের দাম বেড়েছে। বেড়েছে হোটেল-রেস্তারাঁর খাবারের দাম। এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্থানীয় ভ্যাট খাতে বাড়তি আয় হচ্ছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ডাল ও গম ছাড়া অন্যগুলোতে শুল্ক-কর দিতে হয়।
শুল্ক-কর আদায়ের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম কাস্টমস গত মে মাসে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করেছিল ৮৬ টাকা ২৪ পয়সা। আর সেপ্টেম্বরে এসে ৯৫ টাকার ভিত্তিতে শুল্কায়ন করে পণ্য খালাস করা হয়।
ধরা যাক, কোনো পণ্য আমদানিতে মোট কর ২৫ শতাংশ। ৮৬ টাকা ডলার ধরলে ১ ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীতে সরকার রাজস্ব পায় সাড়ে ২১ টাকা। আর ডলার ৯৫ টাকা ধরার ফলে রাজস্ব বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ টাকা।
এনবিআরের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) আমদানি শুল্ক আদায় ২৯, ভ্যাট ২২ ও সম্পূরক শুল্ক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে।
রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি আমদানি শুল্ক-করের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব তথা ভ্যাট আদায়েও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশ। গত বছর তা ছিল ১১ শতাংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভ্যাট কমিশনার নিউজবাংলাকে বলেন, পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়লে ভ্যাট আদায়ও বাড়ে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। সমস্যা তখনই হয়, যখন হঠাৎ করে ব্যাপক হারে দাম ওঠানামা করে।
‘কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ হলো মুদ্রা মানের দ্রুত উত্থান-পতন নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক কাজটি করতে পারেনি। চীন, ভারত, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন রপ্তানিকারক দেশ নিয়মিত তাদের মুদ্রার মানে ছাড় দিয়ে রপ্তানি সক্ষমতা বাড়িয়েছে। ওই সময় বাংলাদেশ টাকার মান ধরে রেখেছে। আর যখন সংকটজনক পরিস্থিতি এলো, তখন ডলারের দাম লাগামছাড়া হয়ে গেল।’
তিনি মনে করেন, এখন দরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং ডলারের স্থিতিশীল ও একক দর। এ জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত দুই বছরে ডলারের দামে তেমন হেরফের হয়নি। এই সময়কালে ডলারের বিনিময় হার ৮৫ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যেই থেকেছে। বলা যায়, গত মে মাসের শুরু পর্যন্ত ডলারের দাম স্থিতিশীল ছিল। এরপর থেকে দাম বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে।