ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ঋণের সুদহার নিয়ে উভয় সঙ্কটে ব্যাংক

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৬ নভেম্বর, ২০২২ ১০:০৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৩৬ বার


ঋণের সুদহার নিয়ে উভয় সঙ্কটে ব্যাংক

আমানত কমে যাচ্ছে। অনেক ব্যাংক পড়েছে নগদ অর্থের সঙ্কটে। এ সঙ্কট কাটাতে আমানতের সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো এ ব্যয় সমন্বয় করতে ঋণের সুদহার বাড়াতেও পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়া হয়েছিল; যা এখনো পরিবর্তান হয়নি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে ঋণের সুদহার বাড়ানো যাবে না। ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যদিও ঋণের শর্ত হিসেবে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দিতে সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এমনি পরিস্থিতিতে ঋণের সুদহার নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে ব্যাংকগুলো।

 

অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট দুই মাসে আমানত কমেছে দুই হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যেখানে আমানত এসেছিল ১৪ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। আমানত কমে যাওয়ায় সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ রেপো ও বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ ধার নিচ্ছে। এ সঙ্কট কাটাতে কিছু কিছু ব্যাংক বাড়তি সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। কিন্তু ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ৯ শতাংশের বেশি সুদে ঋণ দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো। আর এর ফলেই ব্যাংকগুলো পড়েছে বিপাকে। গতকাল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে ঋণের সুদহার না বাড়ানোর পক্ষে জোরালো মত দিয়েছে এফবিসিসিআই সভাপতি মো: জসিম উদ্দিন অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফের এক সংলাপে বলেছেন, গ্যাস- বিদ্যুৎ এখন বড় ইস্যু। ব্যবসা-ব্যয় বেড়ে গেছে। এ সময়ে ঋণের সুদহার বাড়ালে শিল্প টিকে থাকবে কি না- এমন প্রশ্ন থেকে যায়। বর্তমান অবস্থায় সুদহার বাড়ালে শিল্প কোথায় যাবে। তিনি বলেন, সুদহার না বাড়িয়ে বাড়তি ব্যয় কমিয়ে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। ব্যয়বহুল শাখাসহ ব্যাংকের অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয় কমাতে হবে।

দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আমানতকারীদের অর্থ দিয়ে ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু ওই ঋণের অর্থের বড় একটি অংশ তারা নানা অজুহাতে ফেরত দিচ্ছেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাড় দেয়া হচ্ছে। এতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়ে গেছে। এক দিকে ঋণের অর্থ ফেরত দিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা, অন্য দিকে আস্থা ধরে রাখতে আমানতকারীদের অর্থ সুদ-আসলে পরিশোধ করতে হচ্ছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় যেটুকু মুনাফা করা হচ্ছে তার বড় একটি অংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ব্যয় হচ্ছে। সব মিলেই অনেক ব্যাংক এখন চাপে পড়ে গেছে।

ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধ করলে ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা আপনাআপনিই বেড়ে যেত। তিনি বলেন, সবধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। মানুষ এখন আর কম সুদে ব্যাংকে আমানত রাখতে চাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে অনেক ব্যাংক সুদহার বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ঋণের সুদহার বাড়ছে না। এক দিকে আমানতের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, অন্য দিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঋণের সুদহারে কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় ব্যাংকগুলোর তহবিল পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। কমছে মুনাফার হার। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ব্যাংকগুলোর অভিভাবক কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে; অন্যথায় ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা আরো কমে যাবে।


   আরও সংবাদ