ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ২৩:০৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১০০৬ বার
খাদ্য উৎপাদন নিয়ে সারা বিশ্বেই উদ্বেগ রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্য নিরাপত্তার উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। উচ্চমূল্যে খাদ্য আমদানি করতে গিয়ে অনেক দেশই বিপাকে পড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আমদানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে নানান উদ্যোগ। কিন্তু অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে কৃষির ব্যাপক অবদান থাকলেও ঋণপ্রাপ্তিসহ অনেক জায়গায় অবহেলিত কৃষি খাত।
সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগের পরও অনেক ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণে অনীহা প্রকাশ করছে। ফলে প্রযুক্তি ও অর্থের সরবরাহ বাড়িয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে মাত্র ৬৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে কৃষি খাতে। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের মোট বিনিয়োগের মাত্র ৪ দশমিক ৯ শতাংশ কৃষি খাতে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে দেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান মাত্র ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে মাত্র ছয় বছর আগেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান কমছে। বরাবরের মতোই এই খাতকে উপেক্ষিত চোখে দেখায় এর উৎপাদন কমেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু আমদানি নির্ভরতার কারণে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে পণ্য আমদানিতে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গম, সয়াবিনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য অস্বাভাবিক মূল্যে আমদানি করতে হয়েছে। ২০২০ সালের শেষ দিকে ভারতে বন্যার প্রভাবে দেশটি রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। এতে দেশের বাজারে পেঁয়াজ, রসুনসহ বেশ কয়েকটি মসলা জাতীয় পণ্যের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২০ সালের আইপিইর জরিপ অনুযায়ী, ভারতে দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে ৬০ শতাংশ মানুষ। সে হিসাবে দেড় কোটি মানুষের দেশটি আসন্ন খাদ্য সংকটে নিজেদের রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে। এতে বাংলাদেশ বড় ধরনের খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে পড়বে। তাই আসন্ন খাদ্য সংকট মোকাবিলায় কৃষি খাতের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট জমির ৭০ শতাংশই আবাদযোগ্য, শতাংশের হিসাবে যা বিশ্ব রেকর্ড। এ ছাড়া কৃষিতে উৎপাদনশীলতাও বেশি। এক জমিতে বছরে চার থেকে পাঁচবার ফসল ফলানো যায়। এত সুবিধা সত্ত্বেও জিডিপিতে কৃষির অবদান কমছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুযায়ী, দেশের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এই খাতটিতে দেশের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৯ দশমিক ৬৪ শতাংশই শিল্প খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। অথচ, আসন্ন সংকট মোকাবিলায় কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও কৃষি খাতের বিনিয়োগে মনোযাগ দেওয়া হচ্ছে না। এতে দেশজ খাদ্য উৎপাদনে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যদিও সরকার বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে, কৃষি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে করোনা মহামারীর পর থেকেই বিভিন্ন প্রণোদনা স্কিম ঘোষণা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ গত নভেম্বরে কৃষকদের জন্য আরও ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০২০ সালে কভিড-১৯ এর প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আরও ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ববাজারে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের দাম। এ কারণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ২০২৩ সালে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্য ঘাটতি তৈরি হওয়ার বিষয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেও কৃষিতে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।