ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

নববর্ষের উল্লাসে মেতে উঠেছে বিশ্ব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


প্রকাশ: ১ জানুয়ারী, ২০২৩ ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৪৮ বার


নববর্ষের উল্লাসে মেতে উঠেছে বিশ্ব

আর কয়েক ঘণ্টা পরেই শুরু হতে যাচ্ছে নতুন বছর ২০২৩ সাল। নতুন বছরের আগমনকে ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। বর্ষবরণের এই রাতে আকাশেও আলোর ফুলকি ছোটে। হাওয়ায় ভাসে ফানুস। দৃষ্টিনন্দন সব আয়োজন। এর মাধ্যমে ২০২২কে বিদায় জানিয়ে ২০২৩ সালকে বরণ করে নেবে বিশ্ব।

 

তাই নববর্ষের বাধভাঙা উদযাপনে পুরো উল্লাসে মেতে উঠেছে বিশ্ব। আজ হাসি-আনন্দ, দুঃখ-বেদনা, পাওয়া-না পাওয়ার ২০২২ সালকে বিদায় জানিয়ে নতুন বর্ষবরণে প্রস্তুত বিশ্ববাসী। 

 

আর এই প্রস্তুতি যে জমকালোভাবেই নেওয়া হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে পূর্ণ সক্ষমতায় নববর্ষ উদযাপন যজ্ঞ দেখে। এই শহরের কর্তৃপক্ষ বলেছে, দুই বছরের বিরতির পর এবারই প্রথমবারের মতো টাইমস স্কয়ারে পূর্ণ ধারণক্ষমতায় লোকজন সমবেত হবেন। আর সেখানে নববর্ষের প্রাক্কালে বার্ষিক আলোর ঝলকানি ও আনন্দ উৎসবে মেতে উঠবেন তারা।

 

 

গত বছর সীমিত পরিসরে মাত্র ১৫ হাজার মানুষকে টাইমস স্কয়ারে সমবেত হয়ে নববর্ষ উদযাপনের অনুমতি দেওয়া হলেও এবারে লোকজনের উপস্থিতির সংখ্যা বেধে দেওয়া হয়নি। প্রায় ২ হাজার ৭০০টি ওয়াটারফোর্ড স্বচ্ছ কাচের তৈরি একটি বল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় টাইমস স্কয়ারের শীর্ষে রাখা হবে। মধ্যরাতে প্রায় এক মিনিটের মতো সেই বলে চলবে আলোর ঝলকানি।

 

টাইমস স্কয়ারে নববর্ষ উদযাপনে মেতে উঠতে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতে শুরু করেছেন। নিউইয়র্ক শহর কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক বছর নববর্ষ উদযাপনের জন্য একটি নতুন থিম বেছে নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের নতুন বছরের থিম ‘ভালোবাসার উপহার’।

 

নতুন বছর উদযাপনের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সাথে সাথে নিউজিল্যান্ডের কেন্দ্রীয় শহর অকল্যান্ডের স্কাই টাওয়ারে আতশবাজির ঝলকানি চলছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ এই উদযাপনে অংশ নিয়েছেন। কোভিড বিধি-নিষেধের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে নতুন বর্ষবরণে যোগ দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দারা।

 

চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন দেশ কীভাবে পালন করে নতুন বছর—

 

স্কটল্যান্ড

 

স্কটল্যান্ডে তিন দিনব্যাপী বর্ষবরণ উৎসব চলে। মানুষ টর্চলাইট হাতে নিয়ে রাস্তায় ‘রিভার অব ফায়ার বা আগুনে নদী’ তৈরি করেন। সেই শোভাযাত্রার তালে চলতে থাকে ড্রাম ও বংশীবাদকের দল। এরপর তারা একটি পারিবারিক মিলনমেলার আয়োজন করে, যেখানে তাদের আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধবরা অংশ নেন। নিজেদের তৈরি মদ পান করেন সবাই। সেই সঙ্গে চলে স্কটিশ মিউজিক ও ট্র্যাডিশনাল নাচ ও গল্প। এই অনুষ্ঠানকে বলা হয় ‘সিলিধ’। সবাই তাদের বন্ধুবান্ধবদের বাসায় লবণ, কয়লা, পাউরুটি ও হুইস্কি ইত্যাদি উপহার হিসেবে নিয়ে যান।

 

ডেনমার্ক

 

ড্যানিশরা নববর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে প্রতিবেশীদের বাড়ির সামনে বাসনপত্র ছোড়াছুড়ি করেন। তাদের বিশ্বাস, যার বাড়ির সামনে সবচেয়ে বেশি বাসন থাকবে, সে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান। কারণ তার সবচেয়ে বেশি ভালো বন্ধু আছে।

 

জার্মানি

 

প্রতিবছর ‘নিউ ইয়ার ইভ’, অর্থাৎ নববর্ষের আগের রাতে জার্মানরা ব্রিটিশ শো ‘ডিনার ফর ওয়ান’ দেখে নববর্ষ উদযাপন শুরু করে। ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এই এক শো দেখে নববর্ষ উদযাপন করছে তারা।

 

স্পেন

 

১২টি আঙুর খেয়ে স্পেনের মানুষ নতুন বছর বরণ করেন। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা বাজার আগেই মাদ্রিদের প্লাজা ডি এস্পানায় জড়ো হয় অসংখ্য মানুষ। তারপর বছরের শেষ ১২ সেকেন্ডে প্রতি সেকেন্ডে একটি করে আঙুর খাওয়া হয়। এভাবেই নতুন বছরকে বরণ করে নেয় স্প্যানিশরা।

 

ইকুয়েডর

 

কাকতাড়ুয়া পোড়ানোর মধ্য দিয়ে ইকুয়েডরে নববর্ষ পালন করা হয়। এভাবে নতুন বছরে খারাপ ভাগ্যকে বিদায় দেন ইকুয়েডরবাসীরা। কাকতাড়ুয়া তৈরি করে প্রতিটি পরিবার মাঝরাতে তা পোড়ায়। তাদের বিশ্বাস, কাকতাড়ুয়া পোড়ালে তা সবার জন্য নতুন বছরে সৌভাগ্য বয়ে আনবে।

 

ফিলিপাইন

 

গোল আকৃতিকে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করেন ফিলিপাইনের মানুষেরা। তাই নববর্ষে গোল জিনিস দিয়ে মাতিয়ে তোলেন। উপহারে গোল কয়েন দেন। বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে এদিন তারা খান গোলাকৃতির খাবার।

 

জাপান

 

জাপানের মানুষরা নতুন বছরকে বরণ করে নেয় ঘণ্টা বাজিয়ে। মন্দিরের ঘণ্টা ১০৮ বার বাজিয়ে নতুন বছরের আগমন উদযাপন করে তারা। তাদের ধারণা, ১০৮ বার ঘণ্টা বাজালে জীবনের ১০৮টি ইচ্ছা পূরণ হবে ও ১০৮টি বিপদ কেটে যাবে।

 

সুইজারল্যান্ড

 

আইসক্রিম খেয়ে ও মেঝেতে ফেলে বর্ষবরণ করেন তারা। তাদের বিশ্বাস, এতে তাদের জীবনে সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধি আসবে।

 

চীন

 

চীনের বর্ষবরণ উৎসবে থাকে রঙের ছড়াছড়ি। তারা বাড়ির সামনের দরজায় লাল রং করেন। বড়রা লাল খামে টাকা ভরে তাদের ছোটদের দেন। আকাশে দেখা যায়, আতশবাজির ছটা। তাদের মতে, আতশবাজির শব্দ অশুভ আত্মাকে দূরে ঠেলে দেয়।

 

মেক্সিকো

 

মেক্সিকানরাও মৃত ব্যক্তিদের আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করে ও তাদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়। তারা বিশ্বাস করে, প্রিয় ব্যক্তিদের আত্মা তাদের কথা শুনতে পায়। তাই মৃত ব্যক্তিদের শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে তারা নতুন বছর বরণ করে।

 

আয়ারল্যান্ড

 

আয়ারল্যান্ডের অবিবাহিত নারীরা অদ্ভুত এক রীতি পালন করেন নববর্ষের আগের রাতে। তারা বালিশের নিচে মিস্টলটো নামক লতানো গাছের পাতা রেখে দেয়। তাদের ধারণা, এই পাতা বালিশের নিচে রাখলে তারা ভালো বর পাবে ও দুঃখ-কষ্ট দূর হবে।

 

দুবাই

 

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বাড়ি দুবাইয়ের বুর্জ আল খলিফায় নতুন বছর উদযাপনের নানা আয়োজন করা হয়। আলোকসজ্জা ও আতশবাজির মাধ্যমে সেখানে নতুন বছর উদযাপন করা হয়। এর কিছুটা দূরে বুর্জ প্লাজাতেও বিপুল পরিমাণ আতশবাজির মধ্য দিয়ে নতুন বছর উদযাপন করা হয়।

 

লন্ডন

 

জাঁকজমক বর্ষবরণের তালিকায় লন্ডনের অবস্থান বেশ ওপরে। ইংল্যান্ডের টেমস নদীর ওপরের আলোকসজ্জা দেখার মতো দৃশ্যের সৃষ্টি করে। এ ছাড়া নতুন বছরের রাতে টেমস নদীতে ‘রিভার ক্রজ’ বিশেষভাবে আকর্ষণ করে দর্শকদের।

 

ভিয়েতনাম

 

ভিয়েতনামের অধিবাসীরা নতুন জামা পরে বর্ষবরণ করেন। আমস্টারডামে তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব উদযাপিত হয়। রাস্তার ধারের রেঁস্তোরা থেকে ‘অলিবলেন’ নামের একধরণের খাবার কিনে খান। এগুলো খেলে নাকি তারা অশুভ জিনিস থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে পারবে।

 

এ ছাড়াও, বেলজিয়ামের কৃষকেরা তাদের গরুকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে নতুন বছর শুরু করেন। বলিভিয়ার বাসিন্দারা মিষ্টি ও কেকের মধ্যে কয়েন লুকিয়ে রাখেন। যে কয়েনটা খুঁজে পাবে, পুরো বছরটা তার জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে। আর কয়েন নদীতে ফেলে নতুন বছর উদযাপন করেন রোমানিয়ানরা।


   আরও সংবাদ