ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩ ১০:১১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩১২ বার
চার বছর পর বড় পর্দায় ফিরলেন বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। পাঠান-এর মধ্যদিয়ে তার কামব্যাক একেবারে বাদশার মতোই।
ইতোমধ্যে পাঠান প্রত্যাশার চেয়ে ছাপিয়ে যাচ্ছে। কিং খানের হাত ধরেই হিন্দি ছবি দেখতে আবার হলমুখী হচ্ছেন কলকাতাবাসী।
পরিসংখ্যান বলছে পাঠান -এর প্রথম দু’দিনের রোজগার এখনও পর্যন্ত ভারতে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ছবিগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি। মাত্র দু’দিনে সারা বিশ্বে ২১৯ কোটি ৬০ লাখের গণ্ডি ছোঁয়ার নজির আর কোনো হিন্দি ছবির নেই।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ভারতীয় ছবির ডাবিং এবং সম্প্রতি কিছু বাংলা ছবির কারণে কলকাতাবাসী অনেকটাই হিন্দি ছবির বিপরীতে হাঁটছিল। কিন্তু পাঠান সেই শেকল ভেঙে দিয়েছে। আর তা ভাঙতেই পাঠান-এর জেরে কোণঠাসা হয়েছে টলিপাড়ার বাংলা সিনেমা। পশ্চিমবাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর শাহরুখ খান। সেখানে তার সিনেমার জন্য পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ছবি-ই ব্রাত্য। যা মেনে নিতে পারছেন না টলিপাড়ার পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতারা।
একদিকে যখন পাঠন হিট, অপরদিকে তখন প্রতিবাদ করছে টলিপাড়া। টলিউডের অভিযোগ, বলিউডের সঙ্গে টলিউডের কোনো তুলনা চলে না। তাদের বাজেটের কাছে বাংলা ছবির বাজেট নস্যি। কিন্তু, পাঠান দেখানো হবে বলে বাংলা ছবি দেখানো যাবে না! এটা কোন ধরনের প্রস্তাব।
প্রসঙ্গত, পাঠান-এর প্রযোজনা সংস্থা যশরাজ ফিল্মসের তরফে কড়া নির্দেশ ছিল, যে সব প্রেক্ষাগৃহে পাঠান চলবে, সেখানকার সবকটা শো-ই পাঠানকে দিতে হবে, অন্য কোনো সিনেমা চালানো যাবে না। কোনো আঞ্চলিক ভাষার সিনেমাও চলবে না। যার জেরে লোকসানের ভয়ে হল মালিকরাও বাংলা সিনেমা উঠিয়ে পাঠান নিয়েছে। যার বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে টলিউড ইন্ডাস্ট্রির একাংশ।
গায়ক, পরিচালক অভিনেত অঞ্জন দত্ত বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য কোনো রাজ্যে এটা করতে পারবে না। এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয় যে, এক সুপারস্টারের সিনেমার জন্য বাংলা সিনেমাগুলোকে হল থেকে উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ওরা নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছে। আমি নিশ্চিত যে, আমাদের দেশের আর কোনো রাজ্যে এটা সম্ভব নয়। ব্লকবাস্টার হিন্দি সিনেমাগুলোর জন্য পশ্চিমবঙ্গে এটা একটা প্রতিদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুব লজ্জার!
পরিচালক ও অভিনেত কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, আমি কোনো ছবির বিরোধী নই। শাহরুখ বা তার ছবি, এমনকী তার ভক্তদের বিরুদ্ধেও কোনো ক্ষোভ নেই। আমি বলতে চাইছি, কেনো যে হলে পাঠান চলবে, সেখানে বাংলা ছবি চালানো যাবে না! আমি মুম্বাইয়ের এই অসভ্যতামি মেনে নিতে পারছি না। পাঠান নিয়ে মুম্বাইয়ের ডিস্ট্রিবিউটর যে হুলিয়া জারি করেছে, তা কোনোদিন পারবে না দক্ষিণ ভারতে অথবা তাদের নিজেদের রাজ্য মহারাষ্ট্রেও। তারা এখানে একটা কারণেই এসব করতে পারছে, কারণ পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা নিয়ে রাজ্য সরকারের কোনো নিয়ম-কানুন নেই।
পরিচালকের কথায়, সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা করছিল বাংলা ছবি ‘প্রজাপতি’,‘কাবেরী অন্তর্ধান’-সহ আরও কয়েকটা ছবি। সব তুলে নিতে হলো! এটা কেবল পশ্চিমবাংলায় সম্ভব। কারণ, বাঙালিরা সহনশীল। নিজের রাজ্যে মহারাষ্ট্রেও যশরাজ এটা করতে পারবে না। বলিউডের একটা ঘাগড়া-চোলির দামে টলিউডের তিনটা সিনেমা হয়ে যায়। বাংলায় ১ থেকে ২ কোটি রুপির সিনেমা তৈরি হয়। এর থেকে ওখানকার ক্যামেরাম্যানরা বেশি টাকা পান। আমরা কিন্তু আজ রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছি। সরকারের ওপর আমার আস্থা আছে।
অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায় সরসারি বলেছেন, আমি এরজন্য প্রশাসনকে দোষ দেবো। কেনো এত বছরেব সিনেমা নিয়ে রাজ্যে কোনো নিয়ম তৈরি হয়নি। যা পেরেছে দক্ষিণ ভারত বা মহারাষ্ট্র। এভাবে কতদিন চলবে। কলকাতায় হলিউড মুভি অ্যাভাটার ব্যবসা করে গেল। সারা ভারতে ৪০০ কোটির রুপির ব্যবসা করেছে। কই তারা তো বলেনি আঞ্চলিক ছবি সরিয়ে তাদের ছবি দেখাতে। এখনও যদি প্রশাসন না বোঝে আগামীদিনে হিন্দি আগ্রাসীদের দাপট আরও বাড়বে। আমি আবার বলছি, হিন্দি ছবি বা পাঠান নিয়ে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। কিন্তু একদল বান্দ্রা (মুম্বাই) থেকে নির্ধারণ করে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে বাংলা সিনেমা চলবে কি চলবে না! আমার এখানে আপত্তি।
তিনি আরও বলেন, এটা কাদের ব্যর্থতা। সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ব্যর্থতা। আসলে আমরা এত বেশি মেনে নিতে শিখেছি। যার ফল এটা। বম্বে ঠিক করে দিচ্ছে, কলকাতায় কোনো ছবি চলবে, আমরা মেনে নিচ্ছি। রাজনৈতিক অত্যাচার হচ্ছে, মেনে নিচ্ছি। চাকুরি চুরি হচ্ছে, মেনে নিচ্ছি। টাকা চুরি মেনে নিচ্ছি, ধর্মের নামে লড়াই, তাও মেনে নিচ্ছি। বাঙালি সহনশীল, আবেগি, কিন্তু এবার ধৈর্য়ের বাধ ভেঙে পড়ছে। এবার সময় হচ্ছে ঘুরে দাঁড়াবার। আমি এর চরম প্রতিবাদ জানাচ্ছি।