ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৬ মার্চ, ২০২৩ ১৮:১৩ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৪৭ বার
হজ ব্যবস্থাপনায় খরচ কমাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট ধর্ম মন্ত্রণালয়কে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে চলতি মৌসুমে নির্ধারণ করা হজের খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৪ লাখ টাকার মধ্যে পুনর্নির্ধারণ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
আজ সোমবার (৬ মার্চ) ধর্ম মন্ত্রণালয়কে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আল কোরআন স্ট্যাডি সেন্টার সুপ্রিম কোর্টের কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট আশরাফ-উজ-জামান। তিনি নিজেই জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
বিমান ভাড়া, বাড়ি ভাড়া ও মোয়াল্লিমের খরচ অস্বাভাবিক বাড়ানো হয়েছে দাবি করে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান আশরাফ-উজ্-জামান।
তিনি জানান, সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমে হজের খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। আর কোরবানি ছাড়াই এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য সর্বনিম্ন প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর আগের বছরে যা ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা।
গত ১ ফেব্রুয়ারি হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়। সভা শেষে কমিটির সভাপতি ও ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান সাংবাদিকের হজ প্যাকেজ সম্পর্কে জানান। এ বিষয়ে স্মারক জারি করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সেখানে বিমান ভাড়া দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা।
চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে সৌদি আরব যেতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ পালনের অনুমতি পাবেন।
চলতি বছর সরকারিভাবে ঘোষিত হজ প্যাকেজ অনুযায়ী, হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা খরচ হবে। গত বছরের তুলনায় খরচ সর্বোচ্চ এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেড়েছে। গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এ পাঁচ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
গত ২ ফেব্রুয়ারি বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর বাইরে প্রত্যেক হাজিকে কোরবানি বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা বলা হয়। গত বছর বেসরকারিভাবে হজ পালনে খরচ হয়েছিল পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। এবার তা প্রায় দেড় লাখ টাকা বাড়ানো হয়।
লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো আইনজীবীর বক্তব্য হলো, বর্তমানে বাংলাদেশ-সৌদি-বাংলাদেশ রুটে প্লেন ভাড়া ৭৬ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতি বছর দুদেশের সরকার হজযাত্রীদের সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট কিনতে বাধ্য করে। এ কারণে টিকিট কিনতে হজযাত্রীদের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। এছাড়াও মোয়াল্লেম খরচ বেশি ধরা হয়েছে, সৌদি ট্রাভেল খরচ ধরা হয়েছে, কিন্তু হাজিরা তো মাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে মক্কা ও মদিনায় যান এবং হজ করে দেশে ফিরে আসেন। এছাড়া বাড়ি ভাড়া সৌদি আরবে না বাড়লেও এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাড়ানো হয়েছে, তাই আমরা চাই এসব অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ কমানো হোক।
এসব কারণসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে নোটিশে চার লাখ টাকার মধ্যে হজ প্যাকেজ-২০২৩ সংশোধন,পরিবর্তন এবং পুনর্নির্ধারণ করতে অনুরোধ করা হয়। সাতদিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে করতে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষপ নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশের অনুলিপি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সৌদি আরবের বাদশা, ওআইসি ইরানের প্রধানমন্ত্রী, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি), তুরস্কের রাষ্ট্রপতি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, কাতারের সরকারপ্রধানসহ বিশ্বের মুসলিম সব অ্যাম্বাসিকে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বিমান ভাড়া কমানোসহ হজ প্যাকেজের মূল্য পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)।
প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের অনুসারে- ২০১৫ সালে হজের সর্বনিম্ন খরচ ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা। ২০১৬ সালে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা। ২০১৭ সালে সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
আটাবের চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা এবং ২০২৩ সালে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসাব বিবেচনায় নিলে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে হজের ব্যয় বেড়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। অথচ এ বছর সৌদি সরকার হজের আনুষঙ্গিক ব্যয় কমিয়েছে।
গত জানুয়ারিতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান জানিয়েছিলেন, ২০২৩ সালে দেশের সম্ভাব্য হজযাত্রীর কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন।