ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১ মে, ২০২৩ ১৭:৪১ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৭৫ বার
চিনির স্বাদ নিতে ভোক্তাকে কেজিপ্রতি দিতে হচ্ছে ১৪০ টাকা। যদিও সরকার খোলা ও প্যাকেট চিনির কেজি ১০৪ ও ১০৯ টাকা নির্ধারিত করেছিল। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতি টন পরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৬ হাজার টাকা এবং অপরিশোধিত চিনির জন্য ৩ হাজার টাকা শুল্ক প্রত্যাহারের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে ছাড় দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যদিও তার কোনো প্রভাব রোজায় দেখা জায়নি। এখন ঈদ শেষে বাজারে চিনির সংকট আরও চরম হয়ে উঠেছে। চিনি কিনতে ভোক্তাদের পাঁচ থেকে ১০ দোকান ঘুরতে হচ্ছে। দামও দিতে হচ্ছে বেশি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ২০২২ সালের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত লাগাতার বাড়ছে চিনির দাম। ইন্টারন্যাশনাল সুগার অর্গানাইজেশন বা আন্তর্জাতিক চিনি সমিতির তথ্যমতে, বিশ্ববাজারে গত ৩ জানুয়ারি প্রতি টন চিনি বিক্রি হয়েছে ৫৩৭ মার্কিন ডলারে, যা গত ২৭ এপ্রিল দাঁড়িয়েছে ৭১৩ মার্কিন ডলারে। এ হিসাবে চার মাসে প্রতি টন চিনতে দাম বেড়েছে ১৭৬ ডলার।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া চিনির দাম এক লাফে ১০০ টাকা ছাড়ায়। পর্যাক্রমে তা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা ওঠে। পরবর্তী সময়ে রোজার আগে কিছুটা দাম কমে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে তখনো দেশজুড়ে ছিল চিনির সংকট।
মূলত সেই সময় গ্যস সংকট ও এলসি জটিলাতার ইস্যুতে বাড়তে থাকে চিনির দাম, যা বছর শেষ দীর্ঘ এ সময়ে দফায় দফায় দাম বাড়লেও কাটেনি সংকট। যদিও বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর দেশব্যাপী ১০৩টি অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কারসাজিতে জড়িত ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয় ১৪ লাখ টাকার বেশি। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিলে সংকট সমাধানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই ও ভোক্তা অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের নিয়ে দফা দফায় সভা করে। এসব সভায় মিল মালিক, ডিলার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা একে অন্যকে দায়ী করেন। পরবর্তী সময়ে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করে ভোক্তা অধিদপ্তর একটি প্রতিবেদন এবং সুপারিশ তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অংশীজনের কাছে জমা দেয়। পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে চিনি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেয় এনবিআর। এতে প্রতি টন পরিশোধিত চিনি আমাদানিতে ৬ হাজার টাকা এবং অপরিশোধিত চিনির জন্য ৩ হাজার টাকা শুল্ক কমানো হয়। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এর পরও চিনির দাম না কমে উল্টো থেমে থেমে বাড়তে থাকে।
এ বিষয়ে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার কালবেলাকে বলেন, চিনি নিয়ে কোনো কথা বলতে পারব না। আমাদের কোনো কথা নেই। বলার মতো অবস্থা নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জিজ্ঞেস করেন কী হয়েছে। আমাদের দিক থেকে কিছু করার নেই।
দাম বাড়ার পেছনে কারখানার উৎপাদন সমস্যা ও এলসি জটিলতার আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি এ-সংক্রান্ত কোনো সমস্যা আছে বা নেই কোনো তথ্য জানায়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ কালবেলাকে বলেন, আমরা একটা দাম ঠিক করে দিয়েছি। তার কার্যকর হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে আসলেই চিনির দাম অনেক বেড়েছে। ফলে সহসায় চিনির দাম কমার সম্ভাবনা দেখছি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজার দাম পর্যালোচনা করার জন্য ট্যারিফ কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত এ বিষয়ে মতামত জানাবে। ট্যারিপ কমিশনের সুপারিশ পেলে দামের সমন্বয় করা হবে।
পরিস্থিতি সম্পর্কে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, চিনি নিয়ে আমরা আগেও কাজ করেছি। রোজার আগে শুল্ক বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে। এখন ঈদ গেল, তার পরও বাজারে কেন সমস্যা হচ্ছে। সে বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করব। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।