আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২ মে, ২০২৩ ১০:০৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৭৪ বার
মুসলিম জনসংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে এবং সীমান্তের ওপার থেকে আসা লোকজনরাই এজন্য দায়ী। ভারতের গুয়াহাটি হাইকোর্টে চলমান এক মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে একথা বলা হয়েছে।
গত শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) আদালতে ওই মামলার শুনানিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এ বক্তব্য পেশ করেন ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রঞ্জিত কুমার দেব চৌধুরী। তিনি বলেন, ভারতের এই অংশটিকে দেশের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আলাদা করার জন্যই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
আসামে যারা বিদেশি বা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে ইতোমধ্যেই শনাক্ত হয়েছেন তাদের ডিপোর্টেশনের আগে ভারতে থাকাকালীন কী কী অধিকার প্রাপ্য, সেই সংক্রান্ত একটি মামলাতেই কেন্দ্র তাদের এই অবস্থান জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের বহু আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার আইনজীবী । আসামের মুসলিম সিভিল সোসাইটির নেতৃস্থানীয়রা বলছেন, রাজ্যের মুসলিম জনসংখ্যা যদি বেড়েও থাকে তাহলে সেটার জন্য সীমান্তের অন্য দিক থেকে হওয়া অনুপ্রবেশ দায়ী এরকম দাবির কোনও ভিত্তি নেই, প্রমাণও নেই।
কোনও কোনও আইনজীবী আবার মনে করেন, আসামে যে বছরের পর বছর ধরে বেআইনি অনুপ্রবেশ ঘটেছে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর খসড়া পরিসংখ্যান থেকেই তা স্পষ্ট। আদালতে কেন্দ্রীয় সরকারের এই বক্তব্য সম্ভবত সেই উপলব্ধিরই প্রতিফলন।
আসামে বহু পুরনো ও স্পর্শকাতর একটি রাজনৈতিক ইস্যু অবৈধ অনুপ্রবেশ। টানা বেশ কয়েক বছর ধরে রাজ্যে এনআরসি অভিযান চালানোর পরও সেই বিতর্কের কোনও মীমাংসা হয়নি। এখন আদালতে কেন্দ্রের এই অবস্থান সেই বিতর্কেই নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা।
২০১৬ সালের এক মামলার সূত্র ধরেই এই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আসামের মরিগাঁও জেলার এক মুসলিম বাসিন্দার কাগজপত্রে বাবার নামে কিছু অসঙ্গতি ছিল। তার ভিত্তিতে জেলার পুলিশ সুপার একটি রেফারেন্স রিপোর্ট দেন এবং আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তাকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করে। তবে এই ব্যক্তিকে এখনও অন্য দেশে ডিপোর্ট করা যায়নি। ইতিমধ্যে ২০২২ সালে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল অন্য একটি মামলায় তাকে আটক করে।
এই আটকাদেশের বিরুদ্ধেই গুয়াহাটি হাইকোর্টে তিনি আপিল করেছেন এবং ট্রাইব্যুনাল যাদের ‘বিদেশি’ বলে শনাক্ত করেছে ভারতে থাকাকালীন তাদের কোন কোন অধিকার প্রাপ্য, সেই প্রশ্নেই এখন শুনানি চলছে।
গুয়াহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি এ এম বুজর বড়ুয়া ও বিচারপতি রবিন ফুকনের বেঞ্চে ২৮ এপ্রিল এই মামলার শুনানিতেই রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য তুলে ধরেন ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রঞ্জিত কুমার দেব চৌধুরী। তিনি বলেন, আদমশুমারির তথ্য বলছে, ১৯৫১ থেকেই আসামে মুসলিমদের জনসংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে।
রঞ্জিত কুমার দেব চৌধুরী বলেন, এখানে স্বাভাবিক নিয়মে জনসংখ্যা বাড়ছে বলেই এটা হচ্ছে তা কিন্তু নয়, বরং (সীমান্তের) অন্য পার থেকে তারা আসছে বলেই এই বিপুল বৃদ্ধি ঘটছে। আর প্রথমে এসেই তারা আশ্রয় নিচ্ছে রিজার্ভ (সংরক্ষিত) এলাকায়। ভারতের এই অংশটাকে ছিনিয়ে নিয়ে অন্য দেশের সঙ্গে জুড়ে দিতেই এটা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯০৫ সালে ব্রিটিশরা যে ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা ভাগ করেছিল, তখন থেকেই মুসলিমদের আসামে এনে বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। ব্রিটিশরা তাদের এনে আসামের চরাঞ্চলে বিভিন্ন নদী বরাবর বসানোর ব্যবস্থা করে। তখন মুসলিমরা কোন এলাকায় থাকবে তার জন্য একটা লাইনও টানা হয়েছিল, যেটাকে বলা হত ইনার লাইন।
ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল বলেন, এই চিহ্নিত বিদেশিরা যদি আগে কোনও জমির কেনাবেচা বা লেনদেন করে থাকেন তাহলে সেটাও বাতিল বলে গণ্য হবে। সেই জমি তখন রাষ্ট্রের হেফাজতে চলে আসবে, ক্রেতা তা ভোগ করতে পারবেন না।
গুয়াহাটি হাইকোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের এই বক্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক বলে বর্ণনা করেছেন দেশের একাধিক প্রথম সারির আইনজীবী। গুয়াহাটি হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও আসামে নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ চৌধুরী বলেন, অনুপ্রবেশের কারণে আসামে মুসলিমদের সংখ্যা বেড়েছে এই দাবির বিন্দুমাত্র ভিত্তি নেই।
সূত্র: বিবিসি