ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৯ মে, ২০২৩ ০৯:১১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৭৪ বার
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের চার ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে। তারল্য সংকট কাটানোর পাশাপাশি ব্যাংকের মূলধন আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জেনে বুঝেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো এবি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
নিয়মানুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে বোনাস লভ্যাংশের সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। সেটি না হলে ঘোষিত লভ্যাংশের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে বা আয়কর অধ্যাদেশের আওতায় ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। এ ছাড়া কোম্পানিগুলোকে মুনাফার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের দেওয়ার বিধান রয়েছে। যদি ঘোষিত লভ্যাংশ ৩০ শতাংশের কম হয়, সেক্ষেত্রে রিটেইন আর্নিংসে স্থানান্তর করা পুরো অংশ বা কোম্পানির তহবিলে রেখে দেওয়া পুরোটার ওপরে আরও ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
তবে এসব ব্যাংক এ জরিমানা দেওয়াকে মেনে নিয়েই সদ্য সমাপ্ত আর্থিক বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য শুধু বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা এসেছে।
ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কালবেলাকে বলা হয়েছে, কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা অর্থাৎ পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির লক্ষ্যেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেজন্য তারা নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে। ফলে ঘোষিত বোনাস শেয়ারের ওপর তাদের ১০ শতাংশ হারে জরিমানা এলেও নগদ লভ্যাংশের টাকা কোম্পানির কাছে থেকে যাচ্ছে। এতে জরিমানা থেকে মুনাফার পরিমাণ বেশি হওয়া কোম্পানিগুলো জেনে বুঝেই সে পথে হেঁটেছে। এরই মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমতির জন্য পাঠানো হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
এবি ব্যাংক : জানুয়ারি-ডিসেম্বর অর্থবছর কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ৭১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৯ টাকা। কিন্তু শেয়ারহোল্ডারদের জন্য শুধু ২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে বোনাসের সঙ্গে নগদ লভ্যাংশ না থাকায় ঘেষিত বোনাসের ওপর এবং লভ্যাংশ মুনাফার ৩০ শতাংশের কম হওয়ায় আরও ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ বা জরিমানা দিতে হবে। দেখা গেছে, এবি ব্যাংকের ২০২২ সালের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি শূন্য দশমিক ৮৩ টাকা হিসেবে ৭১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। এর মধ্যে থেকে ২ শতাংশ বোনাস শেয়ারবাবদ ১৭ কোটি ২২ লাখ টাকা দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হবে। মুনাফার বাকি ৫৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা বা ৭৬ শতাংশ রিটেইন আর্নিংসে যোগ হবে। কোম্পানিটিকে শুধু ওই বোনাস শেয়ার ঘোষণার কারণে ১৭ কোটি ২২ লাখ টাকার বোনাস শেয়ারের ওপর ১০ শতাংশ হারে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকার অতিরিক্ত কর দিতে হবে। এ ছাড়া মুনাফার ৩০ শতাংশের কম লভ্যাংশ ঘোষণা করায় বাকি ৫৪ কোটি ২৪ লাখ টাকার ওপর ১০ শতাংশ হারে আরও ৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার অতিরিক্ত কর বা জরিমানা দিতে হবে। এর আগে ২০২১ সালে নগদের চেয়ে বেশি বোনাস ও ২০২০ সালে শুধু বোনাস শেয়ার দিয়ে অতিরিক্ত আয়করের শাস্তির কবলে পড়েছিল ব্যাংকটি।
অন্যদিকে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক কোম্পানির সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের মুনাফার ওপর শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ারের ঘোষণা দিয়েছে। ওয়ান ব্যাংক ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নিয়মানুযায়ী, বোনাসের পাশাপাশি নগদ লভ্যাংশ না থাকায় তাদের সিদ্ধান্তের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ হবে।
জানা গেছে, বিদায়ী বছরের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৬৫ পয়সা করে। আর কর-পরবর্তী মুনাফার হয়েছে ২৩৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশের টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর ওপর ১০ শতাংশ হারে জরিমানামূলক কর আরোপ হবে। বাকি টাকা রিটেইন আর্নিংসে যোগ হবে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২০২২ সালে মোট মুনাফা হয়েছে ২৯৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সেখান থেকে শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস শেয়ারের ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ারের টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর ওপর ১০ শতাংশ জরিমানা পরবর্তী বাকি টাকা রিটেইন আর্নিংস রাখা হবে।
ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ৭৩ পয়সা। মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার ৫৪১ টাকা। ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশের হিসাবে শেয়ারহোল্ডাররা ৪৯ কোটি ৩ লাখ ৭১ হাজার ২৩৯ টাকার বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ পাবেন। এর ওপর জরিমানা বা ১০ শতাংশ হারে কর দেওয়ার পর মুনাফার বাকি টাকা ব্যাংকটির মূলধন বা রিটেইন আর্নিংসে যোগ হবে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এবি ব্যাংকের কোম্পানি সচিব মো. জসিম উদ্দিন এফসিএ কালবেলাকে বলেন, লভ্যাংশ নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আর্থিক প্রতিবেদনটি আমরা বিএসইসির অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি, আশা করছি কোনো সমস্যা হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য ব্যাংকগুলো থেকে জানা গেছে, লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম মেনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি আয়কর অধ্যাদেশ নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে। আয়করের ক্ষেত্রে আমাদের যে বিধান, সেটি আমরা পালন করব। বোর্ড মনে করছে, কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন, সেজন্য শুধু বোনাস শেয়ারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।