ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

মসলার বাজারে বাড়ছে ঝাঁজ

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১২ মে, ২০২৩ ০৮:২০ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৫১ বার


মসলার বাজারে বাড়ছে ঝাঁজ

কোরবানি ঈদের বাকি দেড় মাসেরও বেশি; কিন্তু এর আগেই দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে বাড়ছে পেঁয়াজ ও জিরার দাম। কয়েকদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা। খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে ১০ দিনের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকার বেশি। সেইসঙ্গে বাড়ছে কাজুবাদামের দাম। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা আসছে কোরবানির ঈদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, ব্যবসায়ীরাই কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। এ মুহূর্তে মসলাজাতীয় পণ্য ও পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।

ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন কালবেলাকে বলেন, ‘বাজারে এখন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে। ব্যবসায়ীরা নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করছেন না। তারা যে দাম প্রস্তাব করেন, তাও মানেন না। ভোগ্যপণ্যের বাজার হযবরল অবস্থায় আছে। দাম না মানার সংস্কৃতি বেড়ে গেছে। অথচ এ সময়ে এমন কোনো ক্রাইসিস নেই যে, মসলা ও পেঁয়াজের দাম বাড়াতে হবে।’

নাজের হোসাইনের মতে, কোরবানি ঈদ সামনে রেখে আগেভাগেই পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে কোনো উৎসবের মাস দুয়েক আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ১০ টাকা বাড়িয়ে পরে দুই টাকা কমান। ভোগ্যপণ্যের দাম মূলত কারসাজি করেই বাড়ানো হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ছোট আকারের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয় ৫৫ টাকায়। মাঝারি আকারের পেঁয়াজ ৬০ ও বড় পেঁয়াজ ৬৫ টাকা করে বিক্রি হয়, যা চলতি মাসের প্রথমে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫৫ টাকায়। সেই হিসাবে দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। মিয়ানমারের আদা কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়। আর চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৫০ টাকায়। বাজারে এখন কোনো ভারতীয় পেঁয়াজ নেই, নেই মিয়ানমারের পেঁয়াজও। অন্যদিকে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি, মোগলটুলী, দেওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে। খাতুনগঞ্জে চীনা রসুন কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হলেও কাজীর দেউড়িতে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়।

সরকার গত ১৫ মার্চ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র বন্ধ করে দেয়। ফলে এখন চাহিদার পুরোটা মেটানো হচ্ছে দেশি পেঁয়াজে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাতুনগঞ্জের বাজার পুরোপুরি ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল। আমদানি বন্ধ থাকায় চাপ বাড়ছে দেশীয় পেঁয়াজের ওপর। শিগগির পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না দিলে দাম আরও বাড়বে। আর এর প্রভাব পড়বে কোরবানির ঈদে।

এই বাজারের ব্যবসায়ী কাজী স্টোরের মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। ক্রয়মূল্য বেশি পড়ার কারণে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। খাতুনগঞ্জে মানভেদে পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ ট্রাক পেঁয়াজ ঢুকছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। প্রায় দুই মাস ধরে আমদানি বন্ধ থাকার কারণে এখন শুধু দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না দিলে কোরবানিকে সামনে রেখে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে।

তার মতে, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মাঠপর্যায়ের আড়তে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া যায় কি না, বিষয়টি সরকারের ভেবে দেখা উচিত। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি না হলে দাম আরও বাড়বে। তবে পেঁয়াজের বাজারে ব্যবসায়ীদের কোনো কারসাজি নেই বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে জিরার দাম গত ১০ দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০০ টাকার মতো বেড়েছে। ২ মে খাতুনগঞ্জে জিরা বিক্রি হয় ৭২০ টাকা কেজি দরে। আর গতকাল বৃহস্পতিবার সেই জিরা বিক্রি হয় ৮১০ টাকা। আর ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে। এলাচ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৪০ টাকা কেজিতে। এ মাসের শুরুর দিকে এলাচ বিক্রি হয় ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজিতে। কাজুবাদাম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজিতে। অথচ গত সপ্তাহেও কাজুবাদাম ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আল মদিনা ট্রেডার্সের মালিক এবং খাতুনগঞ্জের আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ জায়েদী বলেন, মসলা আমদানি করতে হয়। বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির ওপর দেশের মসলার বাজার নির্ভর করে। এ ছাড়া ডলার সংকটের কারণে এখনো আমদানি স্বাভাবিক হয়নি। ঈদের আগে মসলার দাম কমার কোনো আশঙ্কা দেখছি না। তবে সরকার যদি মসলার ভ্যাট বাড়ায়, তাহলে বাজার আরও বাড়বে। তিনি মনে করেন, আমদানি পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণেই জিরার দাম বাড়ছে। সামনে কোরবানির আগে মসলার দাম কমার তেমন সম্ভাবনা নেই। জিরা রোজার ঈদের আগে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৬৬০ টাকায়। আর তা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮১০ টাকা দরে। জিরা সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় ভারত থেকে। আর ধনিয়া গত রোজার ঈদের আগে বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। ধনিয়া গতকাল বিক্রি হয়েছে মানভেদে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। এ ছাড়া কাজুবাদাম ও পেস্তাবাদাম কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবে কাজুবাদাম কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। গতকাল বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। দেশি চীনাবাদাম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। আর এলাচ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৪০ টাকায়। এই মাসের শুরুর দিকে এলাচ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজিপ্রতি।

কাজীরদেউড়ি বাজারে বাজার করতে আসা চাকরিজীবী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে রয়েছে চাল, তেলসহ অনেক পণ্য। এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে। কিছুদিন আগে এই পেয়াঁজ কিনেছি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। বেড়েছে রসুনের দামও। দিন দিন সবকিছু ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।


   আরও সংবাদ