ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

চার উৎস থেকে বাড়তি ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৬ মে, ২০২৩ ১০:২১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৫১ বার


চার উৎস থেকে বাড়তি ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ভ্যাট। এজন্য আগামী অর্থবছরে ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এই বাড়তি ভ্যাট আদায়ে এরই মধ্যে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আদায়ের একটি রূপরেখা তৈরি করেছে এনবিআর। এতে ভ্যাট অব্যাহতি, ইলেকট্রনিকস ফিজিক্যাল ডিভাইস (ইএফডি), সিগারেটে সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য নির্ধারণসহ চারটি উৎসকে টার্গেট করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে এনবিআরকে। তাই আগামী অর্থবছরের বাজেটে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভ্যাট আদায়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর বাড়তি ভ্যাট আদায়ে চারটি উৎসকে টার্গেট করা হয়েছে। এই চার উৎস থেকে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাড়ানোর কৌশল নির্ধারণ করেছে এনবিআর। এর মধ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সিগারেট খাত থেকে কর বাড়িয়ে আরও সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। এ ছাড়া সিগারেট বিক্রিতে নানা ধরনের টালবাহানা হয়ে থাকে।

প্রতিবছর বাজেটের আগে একটি সিন্ডিকেট প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম বাড়িয়ে দেয়। অথচ এই টাকার কোনো রাজস্ব পায় না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আর বাজেটের পরে নতুন প্যাকেট তৈরির নামে থাকে এক ধরনের টালবাহানা বা সময়ক্ষেপণ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন প্যাকেট তৈরি না করে সময়ক্ষেপণ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়। এবার আর কোনো সমালোচনা শুনতে রাজি নয় এনবিআর। এবার সিগারেটের সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দিচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে এসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ হিসেবে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এনবিআর রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর কৌশল তুলে ধরেছেন। ভ্যাট আদায় বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি মিলেছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

সূত্র আরও জানায়, ভ্যাট আদায় বাড়াতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে দশটি পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এক্ষেত্রে কিছু কিছু পণ্যের অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হবে। আর কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হবে। আর এই খাত থেকে অর্থাৎ ভ্যাট অব্যাহতি তুলে নিলে নতুন করে আরও ১ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায় বাড়বে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন খাতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া আছে। যার কারণে বড় অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। এ ছাড়া আগামী বাজেটে ভর্তুকি কমানোর চাপ রয়েছে আইএমএফের। যার কারণে অত্যাবশকীয় পণ্য ছাড়া দশ পণ্যের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে আগামী বাজেটে। এতে সরকারের রাজস্বও বাড়বে, আইএমএফের শর্তও পূরণ হবে। যার কারণে এই পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  বলেন, ভ্যাট আদায় বাড়ানোর জন্য কিছু কিছু পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। আর কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া সিগারেটের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের চিন্তা-ধারণা করা হচ্ছে। আগামী বাজেটে সিগারেটের প্যাকেটে সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য বা এমআরপি নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এনবিআর সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ইএফডির মাধ্যমে ভ্যাট আদায় বাড়াতে জোর দেওয়া হয়; কিন্তু আদতে কোনো কাজ হয়নি। প্রতিমাসে লটারির মাধ্যমে ইএফডি ব্যবহারে উৎসাহিত করা হলেও কার্যকর ফল পায়নি এনবিআর। সর্বশেষ ইএফডি সরবরাহের জন্য একটি তৃতীয়পক্ষ নির্ধারণ করা হয়। যদিও এনবিআরের সর্বশেষ হিসাবে সারা দেশে মাত্র ৯ হাজার ইএফডি মেশিন বসানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এই ইএফডির মাধ্যমে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায় বাড়নোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আর দৈনন্দিন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভ্যাট আদায়ে মনিটরিং বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে জোরদার করা হবে গোয়েন্দা কার্যক্রম। এ ছাড়া দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি জোর দেওয়া হবে। এসব দৈনন্দিন কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে ভ্যাট আদায় বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। এই উৎস থেকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট আদায় বাড়ানো হবে ১২ হাজার ৪০০ থেকে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।


   আরও সংবাদ