ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২১ মে, ২০২৩ ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩১১ বার
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতা বৃদ্ধি কিংবা তাদের মিত্র দেশগুলো থেকে নতুন করে অনুরূপ নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে বাংলাদেশ। বিভিন্ন অসমর্থিত ও দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কাউন্টার পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশও যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়, তখন অর্থনৈতিকভাবে কতটা ভারসাম্য ধরে রাখতে পারবে দেশ—চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে এই নিয়েও।
যতদূর জানা গেছে, কাউন্টার নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে এখনো যায়নি বাংলাদেশ। যাবে কি না, তা-ও নিশ্চিত নয়। তবে কোনো অনভিপ্রেত পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে কাউন্টার পদক্ষেপে যাওয়ার মতো আগাম প্রস্তুতি রাখছে সরকারও।
সূত্রগুলোর দাবি, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আর দেশের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি এক নয়। এ ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় পড়ার মতো পরিস্থিতিতেও নেই বাংলাদেশ। শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ কমিশনের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি না হলে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা তার কোনো একক মিত্র দেশের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর করা মন্তব্যের পর থেকেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো কাজ শুরু করেছে। সংগ্রহ করা হচ্ছে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির হিসাব। খতিয়ে দেখা হচ্ছে আমদানিকৃত পণ্যের দেশীয় বাজার পরিস্থিতি। একই সঙ্গে পর্যালোচনা করা হচ্ছে আমদানি-রপ্তানির বিকল্প বাজারেরও।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ কালবেলাকে জানান, সরকার কাউন্টার স্যাংশনে যাওয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। পরিকল্পনার কথাও জানা নেই। তবে সিদ্ধান্ত নিলে কী করা উচিত—কী উচিত নয়, তা অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব জানান, একক দেশ হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের আমদানি খুব বেশি নয়। যৎসামান্য। সেখানে লেনদেন ভারসাম্য বাংলাদেশের অনুকূলে। অর্থাৎ অনেকগুণ বেশি রপ্তানি করছি আমরা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে গেলেও সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব তেমন একটা থাকবে না।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) ৩০ আগস্ট, ২০২২-এর তথ্যমতে, দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের রপ্তানির তুলনায় আমদানি কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করেছে ৬৯৭ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। আর আমদানি করেছে ২২৬ কোটি ৮১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারসাম্যের জায়গায় বাংলাদেশ ৪৭০ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। একইভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৬০ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীতে রপ্তানি করেছে ১ হাজার ৪১ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের। এ বছর বাংলাদেশ প্রায় ৭৮১ কোটি ডলারের অনুকূল বাণিজ্যে ছিল। যার ধারাবাহিকতা চলতি অর্থবছরও অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানির মধ্যে ৮৮ শতাংশই তৈরি পোশাক। বাকি ১২ শতাংশ অন্যান্য পণ্য। এখন বাংলাদেশ আমদানি বন্ধ করলে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রও যদি বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাক বা অন্যান্য পণ্য কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে শঙ্কার বেশ কারণ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বন্ধ হবে না বলেই ধরে নিচ্ছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তার একটি যৌক্তিক কারণ হলো, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশই একমাত্র সস্তা দামে পোশাক রপ্তানি করতে পারে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য কেনা বন্ধ করলে বাংলাদেশের পণ্য বর্জনের কোনো কারণ দেখছেন না সরকারঘেঁষা খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রও এখন উচ্চমূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। এ অবস্থায় কম দামে মানসম্মত পোশাক ছেড়ে, ক্রেতাদের বাড়তি দামে পোশাক কেনার সিদ্ধান্তে বাধ্য করতে যাবেন না। এ ধরনের কোনো আশঙ্কা নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, মোট আমদানির মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়। এফবিসিসিআইর তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ মোটাদাগে খনিজ পণ্য, জ্বালানি উপকরণ, বিটুমিন, আয়রন, স্টিল, তৈলবীজ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, সুতা, ওষুধ পরমাণু উপকরণ, শিল্পের যন্ত্রপাতি, রেলওয়ে সামগ্রী, ইলেকট্রনিক ও ফটোগ্রাফিক উপকরণ, রাসায়নিক পণ্য, জাহাজ, আধুনিক নৌকা ও জৈব পণ্য আমদানি করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হচ্ছে খনিজ পণ্য। এর বিপরীতে বাংলাদেশ দেশটিতে রপ্তানি করছে তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, পাটজাত পণ্য, চামড়া ইত্যাদি।
এ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জানান, ভূমিকম্প হলে ক্ষতি কী হবে, সেটি আপনি-আমি কেউ বলতে পারব না। তবে আশঙ্কা করতে পারি, ভূমিকম্পের ফল কী হয়। সেটি দেশে দেশে ভূমিকম্পের নজির থেকে দেখেছি। এখন কাউন্টার স্যাংশনে গেলে তার প্রভাব কী হবে, সেটি এখন বলা মুশকিল। আদৌ যাবে কি না, সেটিও তো স্পষ্ট নয়। আগে স্যাংশন কিংবা কাউন্টার স্যাংশন আসুক, তারপর সেটি নিয়ে ভাবা যাবে। বাংলাদেশ সেই সিদ্ধান্তই নেবে, যা তার মোকাবিলার সক্ষমতা রয়েছে।
এফবিসিসিআইর বর্তমান সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সরকার দক্ষ হাতে দেশ পরিচালনা করছে। অর্থনীতিকে বিশ্বের কাছে ঈর্ষণীয় কাতারে নিয়ে গেছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমাদের সক্ষমতার উন্নয়ন ঘটেছে। যার কারণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবও আমরা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। কাউন্টার স্যাংশনে যাওয়ার আগে সরকার তার সক্ষমতা নিশ্চয়ই বিবেচনা করবে।