ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

প্রভিশন রাখতে পারেনি ৮ ব্যাংক

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৩০ মে, ২০২৩ ১২:৪৬ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৪৮ বার


প্রভিশন রাখতে পারেনি ৮ ব্যাংক

ব্যাংক খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেলাপি ঋণ। তিন মাসের ব্যবধানে এই ঋণ বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে সরকারি-বেসরকারি খাতের আট ব্যাংক। এসব ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ ২০ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ঘাটতির তালিকায় রয়েছে সরকারি অগ্রণী, বেসিক, রূপালী। বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স, ঢাকা, ন্যাশনাল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে এই ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ১৫৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যা ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে ছিল ১৯ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে ১ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

খেলাপি ঋণ কম দেখানোর উপায় হিসেবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে করোনার প্রভাব শুরুর পর ২০২০ সালে কেউ কোনো টাকা না দিলেও তাকে খেলাপি করা হয়নি। ২০২১ সালে একজন উদ্যোক্তার যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, কেউ এর ১৫ শতাংশ দিলেই তাকে আর খেলাপি করা হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে বিশেষ ব্যবস্থায় মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য বিপুল পরিমাণের ঋণ পুনঃতপশিল করা হয়। এরও আগে ৫০০ কোটি টাকার বড় অঙ্কের ঋণ পুনর্গঠন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিশেষ বিবেচনায় পুনঃতপশিলসহ বিভিন্ন শিথিলতা দেওয়া হয়। বারবার এরকম শিথিলতার কারণে উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ ঋণ পরিশোধের চেয়ে সুবিধা নেওয়ার পেছনে ছুটছেন বেশি। ২০২০ ও ২০২১ সালজুড়ে কয়েক দফায় করোনার কারণে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে কোনো ঋণ পরিশোধ না করে কিংবা সামান্য পরিশোধ করে খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ ছিল। এ ধরনের বিভিন্ন সুবিধার বেশিরভাগই শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এর পরপরই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ব্যাপকভাবে।

ঝুঁকিপূর্ণ এই খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। তবে কিছু কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করায় পুরো ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা।

নিয়ম অনুযায়ী, সব ধরনের ব্যাংক যেসব ঋণ দেয়, তার গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রভিশন হিসেবে জমা রাখতে হয়। কোনো ঋণ শেষ পর্যন্ত মন্দ ঋণে পরিণত হলে তাতে যেন ব্যাংক আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে, সেজন্য এ প্রভিশন সংরক্ষণের নিয়ম রাখা হয়েছে। ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্ন বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১১ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক ডিসেম্বর শেষে এই তিন ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ১১ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি ঘাটতি বেসিক ব্যাংকে ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর শেষে ছিল ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। এরপরই অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি ৪ হাজার ১১ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর শেষে ছিল ৪ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক। ৩ হাজার ৮০ কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি, যা ডিসেম্বর শেষে ছিল ৪ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা।

বেসরকারি চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৮ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিক ডিসেম্বর শেষে ছিল ৭ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ন্যাশনাল ব্যাংকেরই ঘাটতি ৭ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর শেষে ছিল ৬ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, তিন মাসে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৮৫১ কোটি টাকা। নতুন করে তালিকায় যুক্ত হয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ঢাকা ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ ৪৯৭ কোটি টাকা। যদিও ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটি প্রভিশন ঘাটতির তালিকায় ছিল না। তৃতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ৩৬০ কোটি টাকা। এ ছাড়া স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। আর বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি তিন কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৯২ হাজার ৬২০ কোটি টাকা; কিন্তু সংরক্ষণ করেছে ৭৬ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রেখে দেওয়ায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কম। ফলে ব্যাংক খাতের সার্বিকভাবে নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতি হয়েছে ১৬ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা।


   আরও সংবাদ