ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৮ জুন, ২০২৩ ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৬৭ বার
বাদশা বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তাঁর/ পুত্র তাঁহার হুমায়ুন বুঝি বাঁচে না এবার আর!/ চারিধারে তার ঘনায়ে আসিছে মরণ-অন্ধকার।/...মরিল বাবর– না, না ভুল কথা, মৃত্যু কে তারে কয়?/ মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়,/ পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরণের পরাজয়!”
‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় গোলাম মোস্তফা তুলে ধরেছেন সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার হৃদয়স্পর্শী চিত্র। যেখানে সন্তানের রোগমুক্তির আশায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেন বাবা।
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর সন্তানের প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছেন। একজন বাবাকে সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। তাই বাবা দিবসে সন্তানদের সামনে সুযোগ আসে বাবাকে ভালোবাসা আর ধন্যবাদ জানানোর।
আজ রবিবার, ১৮ জুন ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্ববাসী বাবা দিবস হিসেবে পালন করে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে বাবা দিবস পালনের প্রচলন হয়। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই যার শুরু। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।
১৯০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ভার্জিনিয়ার মোনোনগাহ্য় কয়লা খনিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৩৬২ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন সন্তানের বাবা। ফলে প্রায় এক হাজার শিশু পিতৃহারা হয়ে পড়ে। পরের বছর ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার এক গির্জায় একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। নিহতদের সম্মান জানাতে সন্তানরা মিলে এই প্রার্থনাসভার আয়োজন করে। এটি ছিল বাবাকে সম্মান জানাতে ইতিহাসের প্রথম আয়োজন।
বাবা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে সনোরা স্মার্ট ডড নামে এক নারীর। ১৯০৯ সালের আগে ওয়াশিংটনে বাবা দিবস বলে কোনও বিশেষ দিন ছিল না। সে সময় স্থানীয় গির্জায় ডড মা দিবস পালনের কথা শোনেন। মা দিবস পালনের রীতি রয়েছে কিন্তু বাবা দিবস পালনের রীতি নেই জেনে তিনি ভীষণ অবাক হন। তারপর তিনি বাবা দিবসের স্বীকৃতির জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ডড তার বাবাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। মা ছিল না তার। মায়ের মৃত্যুর পর শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও তাদের সাত ভাইবোনকে বড় করে তুলেছিলেন তাদের সিঙ্গেল বাবা। বাবার এই ত্যাগ দেখে ডডের মনে হলো, মা দিবসের এত আয়োজন হলে বাবা দিবস কেন বাদ থাকবে। বাবাকে সম্মান জানানোর জন্যও একটা দিন থাকা দরকার।
তারপর অনেক চেষ্টা করে দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় স্থানীয় কমিউনিটিগুলোতে বাবা দিবস পালন করতে পারেন ডড। ১৯১০ সালের ১৯ জুন বিশ্বে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস।
ওয়াশিংটন থেকে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এ দিবস পালনের কথা। আস্তে আস্তে মা দিবসের পাশাপাশি বাবা দিবসের প্রতিও সচেতন হতে থাকেন সন্তানরা। এরপর ১৯২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলি বাবা দিবসে সম্মতি দেন। তারপর ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন জুন মাসের তৃতীয় রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস উদযাপনের কথা ঘোষণা করেন। এবং সবশেষে ১৯৭২ সালে তখনকার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন একটি আইনে স্বাক্ষর করে বাবা দিবসকে জাতীয় মর্যাদা দেন। তারপর থেকে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার সারা বিশ্বে বাবা দিবস পালন হয়ে আসছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দিবসটি ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালন করা হয়। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাবা দিবস পালন করা হয় জুন মাসের তৃতীয় রবিবার। দক্ষিণ আমেরিকায় দিবসটি পালিত হয় ১৯ মার্চ। আর অস্ট্রেলিয়া ও ফিজিতে পালন করা হয় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম রবিবার।
বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের এই বিশেষ দিবসে সন্তানরা বাবাদের কোনও না কোনও উপহার দিতে পছন্দ করে। বিশ্বের অনেক দেশে ঘটা করে বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। সমাজ, সংস্কৃতি, দেশভেদে উদযাপনে কিছুটা বৈচিত্র্য দেখা যায়। কোনও দেশে হয়তো সন্তান বাবাকে ফুলের তোড়া ও কার্ড উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়, আবার কোনও দেশে নেকটাই, টুপি, মোজা ও বিভিন্ন স্পোর্টস সামগ্রী উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। তবে দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি কিংবা উপহার ভিন্ন হলেও বাবার প্রতি সন্তানদের ভালোবাসায় নেই কোনও ভিন্নতা। যেখানে প্রকাশভঙ্গি নয়, ভালোবাসা প্রকাশই মুখ্য।