ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ জুন, ২০২৩ ১২:০১ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৬১ বার
ডলারের সংকট এখনো কাটেনি। ব্যাংকগুলো চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে না। আবার যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছে, অনেক ব্যাংক তার বিল পরিশোধ করতে পারছে না। বিদেশি ব্যাংকগুলো দেশের ব্যাংকগুলোকে যেসব ঋণ দিয়েছে, তার বেশ কয়েকটির মেয়াদ শেষ হলেও ডলার ফেরত পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করেছে বেসরকারি খাতে প্রাইম ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এর মাধ্যমে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথমবার ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, অর্থবছরের হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভালো দেখাতে ব্যাংক থেকে ডলার কেনা শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত রয়েছে, জুনের মধ্যে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারে উন্নীত করা।
এ জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার বেসরকারি খাতের প্রাইম ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি ডলারের জন্য ১০৬ টাকা দাম দিয়েছে। পাশাপাশি একই দামে আমদানি দায় মেটাতে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।
গতকাল বিক্রি করেছে ৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৩ কোটি ডলার বা ৩০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। তবে প্রকৃত রিজার্ভ আরও ৬০০ কোটি ডলার কম। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ১২০ কোটি ডলার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধ করতে হবে, তখন আবার রিজার্ভ কমে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সরোয়ার হোসেন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, প্রবাসী আয় বাড়ছে। ব্যাংকগুলোর ডলার ধারণও বাড়ছে। কোনো ব্যাংক ডলার বিক্রি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকে কিনছে। আবার আমদানি দায় মেটাতে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক ব্যাংক আমদানি দায় শোধ করতে পারছে না। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক একরকম জোর করেই ডলার কিনে নিয়েছে। কোনো ব্যাংকে ডলার উদ্বৃত্ত থাকলে অন্য সব ব্যাংক সেই ডলার কেনার জন্য প্রস্তুত আছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক যে ডলার বিক্রি করেছে, তা অফশোর ইউনিট থেকে ঋণ করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রবাসী আয় বাড়ছে। চলতি মাসের ২১ জুন পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৭ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১১৫ কোটি ডলার। ফলে প্রবাসী আয়ে প্রায় ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এদিকে ব্যাংকগুলোর ১৭০ কোটি ৬০ লাখ ডলার ধারণের সীমা থাকলেও ডলার রয়েছে ২৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর নস্ট্রো হিসাব, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব ও নগদ রয়েছে ৩৫৭ কোটি ডলার, যা ডলারের বাজারের তারল্য হিসেবে পরিচিত। গত বছরের শেষে যা ২০০ কোটি ডলারের নিচে নেমেছিল।
জানা যায়, গত মে মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে আসে। এরপর গত বুধবার রিজার্ভ ৩ হাজার ১ কোটি ডলার হয়। সেদিন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ঋণের ৪০ কোটি ডলারের কিছু অংশ দেশে আসে, যুক্ত হয় রিজার্ভে। পাশাপাশি রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) মেয়াদোত্তীর্ণ ডলার বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংক থেকে ফেরত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর গতকাল রিজার্ভ বেড়ে হয় ৩ হাজার ১৩ কোটি ডলার। গতকালই দুটি ব্যাংক থেকে ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতি আইএমএফ মানে না। কারণ, রিজার্ভের অর্থে বিদেশে বিভিন্ন বন্ড, মুদ্রা ও স্বর্ণে বিনিয়োগ; রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন; বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংককে ধার; পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতে অর্থ দেওয়া এবং শ্রীলঙ্কাকে অর্থ ধার দেওয়া বাবদ খরচ ৮২০ কোটি ডলার রয়েছে, যা এখন ৬০০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
আইএমএফ যে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, অন্য অনেক শর্তের মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে জুনের মধ্যে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ অন্তত ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারে উন্নীত করা। আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারের নিচে থাকতে পারবে না।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ডলার-সংকটের উন্নতি হয়নি, কবে হবে, তা-ও কেউ বলতে পারছে না। বিদেশি কত দায় যে অনিষ্পন্ন হয়ে আছে, তা বের করা জরুরি। আইএমএফের শর্ত পূরণ করার জন্য ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের কাছে ডলার নেই, এমন সময়ে ডলার কিনতে নিশ্চয়ই পেশাদারত্ব দেখানো হয়নি। এভাবে রিজার্ভ বাড়ানো কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়।