স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ৬ জুলাই, ২০২৩ ২১:০৮ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২১৫ বার
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তামিম ইকবাল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলেই বৃহস্পতিবার (০৬ জুলাই) দুপুরে এমন ঘোষণা দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তামিম ইকবালের এমন বিদায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই তার এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। তবে, তামিমের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা।
মাশরাফি লেখেন, ‘তামিম, তোর সিদ্ধান্ত অবশ্যই একান্তই তোর। এটা কারও ভালো লাগলেও তোর, ভালো না লাগলেও তোর। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথাই হবে। তবে সবচেয়ে ভালো কোনটা, সেটা তুই ছাড়া কেউই ভালো বুঝবে না। তাই তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি ব্যক্তিগতভাবে শতভাগ সম্মান জানাই। তবে কিছু কথা জানতে মন চায়, মাত্র ৩৪ বছর ১০৮ দিনেই বিদায় কেন! আসলেই কি চালিয়ে যেতে পারছিস না? নাকি কোনো চাপ তোকে বাধ্য করেছে! তোর অনেক ভক্ত হয়তো খুঁজে ফিরবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর। আজ খুঁজবে, এমনকি ভবিষ্যতেও আরও অনেক দিন খুঁজবে।’
তামিমের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের কথা তুলে ধরে মাশরাফি বলেন, ‘তোকে প্রথম দেখেছি চট্টগ্রামে তোদের বাসায়, হাফ প্যান্ট পরে খেলছিলি। তোর ভাই, আমার বন্ধু নাফিস ইকবাল তোকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। পরেরবার দেখলাম জাতীয় লীগে ওপেন করতে, খুলনার মাঠে। তারপর ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে একসঙ্গে পথ চলতে চলতে তুই হয়ে গেলি বন্ধুর মতো। কত দিন কত রাত এক সঙ্গে সময় কাটিয়েছি, একসঙ্গে খেতে যাওয়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা, দুষ্টুমি, মজা, তর্ক, খেলা নিয়ে কত কত আলোচনা করেছি, সেসবের কোনো হদিস নেই।’
অতীত স্মৃতির কথা মনে করে সাবেক অধিনায়ক বলেন, “যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলাম, তখন তুই ছিলি আমার অন্যতম ‘স্নাইপার।’ সেটা তুই নিজেও খুব ভালো করেই জানিস। যেদিন দল থেকে বের হয়ে এলাম, সেদিন তুই আমাকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলি। পরে সারা রাত একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছিলাম। যে কোনো সিরিজ বা সফরে তুই ছিলি আমার রুমে আড্ডার অবধারিত সঙ্গী। আরও কত শত স্মৃতি এখন মনে পড়ছে!”
তামিমের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘তোকে যতটুকু চিনি, তাতে তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি অনায়াসে পোস্টমর্টেম করতে পারতাম। কিন্তু তা করব না, কারণ ওই যে, তোর নিজস্ব সিদ্ধান্তকে অবশ্যই সম্মান জানানো উচিত। তোর মানসিক অবস্থা আমি বুঝতে পারছি, সেই সঙ্গে এটাও বলছি যে, তুই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যা কিছু দিয়েছিস, তা আমরা আজীবন মনে রাখব। একজন তামিম হয়ে উঠতে কতটা পরিশ্রম, কতটা সময়, কতটা মেধা আর কত ত্যাগ থাকতে হয়, তা সময় সব কিছু বুঝিয়ে দেবে। তোর প্রতি রইল অফুরন্ত ভালোবাসা। পরবর্তী জীবন পরিবার নিয়ে দারুণ কাটাবি, সেই আশাই করছি।’
তামিমকে বিদায় জানিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আর একটা কথা, দলের ভেতর নানা পরিসংখ্যান নিয়ে বিশ্লেষণ নির্ভর আলোচনা এখন কে করবে, ঠিক জানি না। হয়তো কেউ করবে। তবে তুই এই জায়গায় সবসময়ই থাকবি সেরাদের সেরা। গুড বাই মি. তামিম ইকবাল খান। একজন কিংবদন্তির বিদায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য শুভ কামনা, এগিয়ে চলুক দুর্বার গতিতে। আমাদের এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়।’
১৬ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ তামিম। দলের অন্যতম সেরা ওপেনারও তিনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চোট ও ফিটনেস নিয়ে ভালোই ভুগতে হচ্ছিল বাঁহাতি এই ওপেনারকে। বিভিন্ন সিরিজের আগে ছিটকে যাওয়া কিংবা পারফরম্যান্স তলানিতে পৌঁছানো মিলিয়ে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না তার।
চোট থাকার পরও আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কোচ ও বিসিবি সভাপতির অসন্তোষের কারণও হন তিনি। এসব নিতে না পেরেই নাকি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তামিম।
তামিমের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন ধরেই বোর্ড ও টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না তামিমের। বোর্ডের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে মানসিকভাবে চাপে পড়েন তিনি। সেসব নিতে না পেরেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যদিও তামিম সে রকম কোনো কিছু তার সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করেননি। তবে তার কান্নাভেজা চোখে স্পষ্ট সিদ্ধান্তটা এতটাও সহজ ছিল না।
এর আগে দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রামের একটি হোটেলে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। বলেন, ‘গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমার শেষ ম্যাচ ছিল। আমি এখন অবসরের ঘোষণা দিলাম।’
নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের জন্য তামিম সতীর্থ, কোচ, বিসিবি, পরিবার ও সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ক্যারিয়ারের এই দীর্ঘ পথচলায় আমার সব সতীর্থ, সব কোচ, বিসিবির কর্মকর্তারা, আমার পরিবার ও যারা আমার পাশে ছিলেন, নানাভাবে সহায়তা করেছেন, ভরসা রেখেছেন এবং আমার ভক্ত-সমর্থক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবার অবদান ও ভালোবাসায় আমি চেষ্টা করেছি সব সময় দেশের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে।’
তামিম অবসর পরবর্তী জীবনের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জীবনের নতুন অধ্যায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সবাইকে আবারও ধন্যবাদ।’