ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

রিজার্ভ আরও কমলো

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৬ জুলাই, ২০২৩ ২২:৪৭ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৮১ বার


রিজার্ভ আরও কমলো

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। আজ বৃহস্পতিবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) কাছে মে-জুন মাসের দায় হিসেবে ১১০ কোটি ডলার পরিশোধ নিষ্পত্তির পর রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৯৭০ কোটি ডলারে। গতকাল বুধবার রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ১১৬ কোটি ডলার।

এর আগে মার্চ-এপ্রিল সময়ের আকুর বিল পরিশোধের পর গত ৮ মে সাত বছর পর প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমেছিল। এরপর বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ঋণ ছাড় এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ আবার বেড়ে ৩১ বিলিয়নের ওপরে উঠে যায়। কিন্তু আকুর বিল পরিশোধের পর বৃহস্পতিবার তা আবার ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে যায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। আর গত বছরের একই সময়ে রিজার্ভ ছিল ৪১ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার।

আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। খারাপ অবস্থার কারণে গত অক্টোবরে আকু থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় শ্রীলঙ্কা। বাকি দেশগুলো প্রতি দুই মাস অন্তর নিজেদের মধ্যকার দায় নিষ্পত্তি করে। গত মে মাসে মার্চ-এপ্রিল সময়ের জন্য ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন, মার্চে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির ১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার, গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন, মে-জুন সময়ে ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন এবং জুলাই-আগস্টে ১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছর ধরেই রিজার্ভ কমার ধারায় রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে কোভিড মহামারি শুরু হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত বাড়তে থাকে। বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় ওই সময় সব প্রবাসী আয় বৈধ পথে তথা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসে। আবার আমদানিও কমে যায়। ফলে রিজার্ভ বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো চার হাজার ৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।

কোভিড পরবর্তী সময়ে লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে আমদানি ব্যয়। এ ছাড়া গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে। ফলে বাড়ে দেশের আমদানি খরচও। তবে সেই তুলনায় বাড়েনি প্রবাসী ও রপ্তানি আয়। এই কারণে আমদানি দায় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে একদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করতে হচ্ছে আর অন্যদিকে রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। তারপর থেকেই দেশের রিজার্ভ কমতে থাকে।

২০২২ সালের ৫ জুলাই শেষে রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ১৮৮ কোটি ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ১ হাজার ১৯১ কোটি ডলার। অবশ্য এর বড় অংশই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করার কারণে। মূলত সরকারি কেনাকাটা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি দায় পরিশোধে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় গতকালও ৭ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

যদিও করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আমদানি কম থাকার পাশাপাশি উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে ২০২১ অর্থবছরে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের একক দর নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলোকে বাজার দরেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে। অর্থাৎ, এতদিন কম দামে ডলার বিক্রি করলেও গতকাল ১০৯ টাকা দরে ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কেনার আগ্রহ কমতে পারে ব্যাংকগুলোর। তা না হলে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ বাড়ানো সম্ভব হবে না।

আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৮০ ডলারের নিচে থাকতে পারবে না।


   আরও সংবাদ