ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ক্লাস্টার বোমা নিয়ে কেন এত বিতর্ক?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


প্রকাশ: ৮ জুলাই, ২০২৩ ২১:৫৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৬৯ বার


ক্লাস্টার বোমা নিয়ে কেন এত বিতর্ক?

ইউক্রেনকে নিষিদ্ধ ও বহুল বিতর্কিত ক্লাস্টার বোমা বা গুচ্ছ বোমা দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিয়েভের চলমান পাল্টা অভিযান জোরদার করতে ভয়াবহ এ অস্ত্র দেয়া হচ্ছে। এই বোমায় বহু বেসামরিক নাগরিক হত্যার রেকর্ড থাকায় এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। কিন্তু এই ক্লাস্টার বোমা আসলে কী? কেন এ নিয়ে চলছে এত বিতর্ক? চলুন জেনে নেয়া যাক।

ক্লাস্টার বোমা এমন এক ধরনের বোমা যার মধ্যে একাধিক বিস্ফোরক বা বোমা থাকে। গুচ্ছ বোমার একটি ক্যানিস্টার ১০টি থেকে শুরু করে শত শত ছোট বোমা বহন করতে পারে। ক্যানিস্টারগুলো বিমান, আর্টিলারি, নৌ বন্দুক অথবা রকেট লঞ্চার থেকে নিক্ষেপ করা যায়।

লক্ষ্যবস্তুর ওপর নির্ভর করে ক্যানিস্টারগুলো একটি নির্ধারিত উচ্চতায় এসে খুলে যায়। এরপর ভেতরে থাকা বোমাগুলো নির্দিষ্ট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ভূমির কাছাকাছি অথবা ভূমিতেই যেন বিস্ফোরণ ঘটে সে লক্ষ্যে বোমা বিস্ফোরণে টাইমার ব্যবহার করা হয়।
  
ইউক্রেনকে যে ধরনের ক্লাস্টার বোমা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে ডিপিআইসিএমএস নামে পরিচিত ক্লাস্টার বোমার মজুত রয়েছে। ২০১৬ সালে পর্যায়ক্রমে বোমার ব্যবহার বন্ধের পর আর এটি ব্যবহার করা হয়নি। 

মার্কিন সেনাবাহিনীর ই-আর্মার ওয়েবসাইট বলছে, ডিপিআইসিএমএস ওয়াশিংটন কিয়েভকে যেসব ক্লাস্টার সরবরাহ করছে তার প্রতিটি ক্যানিস্টারে ৮৮টি বোমা রয়েছে; যা ১৫৫ মিমি হাউইটজার থেকে গুলি করতে সক্ষম।
 
প্রতিটি বোমার প্রাণঘাতী পরিসীমা ১০ বর্গমিটার। নিক্ষেপের উচ্চতার উপর নির্ভর করে প্রতিটি  একক ক্যানিস্টার কোনও এলাকার ৩০ হাজার বর্গমিটার (প্রায় ৭.৫ একর) পর্যন্ত ধ্বংস করতে পারে।
 
১০টি বা তার বেশি বোমা একটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করতে সক্ষম। তবে শুধু একটি ক্লাস্টার বোমা একটি সাঁজোয়া যানের অস্ত্র নিস্ক্রিয় অথবা অচল করে দিতে পারে।
 
ইউক্রেন যুদ্ধে আগেও ব্যবহার হয়েছে ক্লাস্টার বোমা
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর উভয় দেশই ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তুরস্কের দেয়া ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার শুরু করে ইউক্রেন। ক্লাস্টার অস্ত্র সরবরাহের জন্য গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা।
 
ক্লাস্টার বোমা যে কারণে বেশি বিতর্কিত
ক্লাস্টার বোমা নিক্ষেপের পর তা বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে যায়। যার ফলে সামরিক বাহিনী ছাড়াও বহু বেসামরিক ক্ষতির মুখে পড়েন।এছাড়া রেড ক্রসের ইন্টারন্যাশনাল কমিটির মতে, বোমা নিক্ষেপের পর কখনও কখনও ১০ থেকে ৪০ শতাংশ বোমার বিস্ফোরণ ঘটে না। অবিস্ফোরিত বোমাগুলো কয়েক বছর এমনকি কয়েক দশক পরও বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
 
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এই অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। কনভেনশন অন ক্লাস্টার মিনিশনস (সিসিএম) অস্ত্রের মজুত, উৎপাদন এমনকি স্থানান্তরকেও নিষিদ্ধ করেছে। সেই কনভেনশনে ১২৩টি দেশ যোগ দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন, রাশিয়াসহ ৭১টি দেশ যোগ দেয়নি।
 
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের সেনা বা তাদের গাড়িবহরে হামলা করলে তা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় অপরাধ বলে গণ্য হবে না। তবে যদি এই বোমা কোনও বেসামরিককে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় তাহলে সেটি যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য হবে।
 
এর আগেও যেসব জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে ক্লাস্টার বোমা
ক্লাস্টার মিউনিশন কোয়ালিশনের মতে, ক্লাস্টার বোমা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পর্যন্ত ৩৬টিরও বেশি সংঘর্ষে ব্যবহৃত হয়েছে। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে সর্বশেষ এই বোমা ব্যবহার করে।
 
ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের ২০১৭ সালের বিবৃতি অনুসারে, বেসামরিক নাগরিকদের বিপদের কারণে মার্কিন বাহিনী ২০১৬ সালে ক্লাস্টার বোমা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হয়।


   আরও সংবাদ