ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ জুলাই, ২০২৩ ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৮১ বার
পশ্চিমা কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল গতকাল রোববার বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার তাগিদ দিতে বিভিন্ন দেশকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বরাবর একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইইউ। এ ব্যাপারে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে বলে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, ইইউর গণতন্ত্র ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা হিল্লেরি রিকার্ডো ছয় সদস্যের অনুসন্ধানী মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ এবং নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মিশনটি তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। গতকাল তারা দিনভর ২৭ সদস্যের ইউরোপীয় জোটের ঢাকার আট দেশের দূতাবাসসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনীতিক এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন। ইইউর ঢাকা অফিস ও ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলির বাসভবনে বৈঠকগুলো হয়। তবে এ ব্যাপারে ইইউ কোনো তথ্য সরবরাহ করবে না বলে জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বিভিন্ন বৈঠকে ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক, কানাডীয় হাইকমিশনার লিলি নিকোলাস ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। হিল্লেরি রিকার্ডো ছাড়াও ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন প্রতিনিধিদলের বাকি পাঁচ সদস্যও। তারা হলেন প্রতিনিধিদলের উপপ্রধান পর্যবেক্ষক ইয়ানো দিমিত্রা, আলভেজ ক্রিটিনা দস রামোস, মিলার ইয়ান জেমস, শ্যামেইন ক্রিস্টোফার ও মারিয়া হেলেন এন্ডালিন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইইউ অনুসন্ধানী মিশন আসার আগে ইইউ রাষ্ট্রদূত গত বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত ১২ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে চা চক্র করেন। চার্লস হোয়াটলির বাসভবনে অনুষ্ঠিত ওই চা চক্রে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দূত ছাড়াও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুই, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো সেইজফ্রিড রেংলি, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ক্রিস্টোফার, স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো দি আসিস বেনেতিজ সালাস, জার্মানির ডেপুটি হাইকমিশনার জ্যান জেনোভস্কি, জাপানের ডেপুটি রাষ্ট্রদূত তাতসুয়া মাসিদা, সুইডেন দূতাবাসের কাউন্সিলর জ্যাকব ইতাত, ইতালি দূতাবাসের ডেপুটি প্রধান মাতিয়া ভেঞ্চুরা, ব্রিটিশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা সাইমন লিভার ও নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি রাষ্ট্রদূত ম্যাটথিজিস জেল উডস্ট্রা অংশ নিয়েছিলেন।
ওই বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, চা-চক্রে সেদিন ইইউসহ সবাই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার ব্যাপারে একমত হন। সে সময় ইইউর পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতের তাগিদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে কোনো যৌথ বিবৃতি দিতে পারে কি না। বেশ কিছু দেশ সম্মতি দিলেও কয়েকজন বলেন, তারা এ ব্যাপারে এখনই যৌথ বিবৃতি দিতে চান না। বরং বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এ ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করবেন। তারা নিজেদের মতো করে নির্বাচনী ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
জানা গেছে, গত ৫ জুলাই চা চক্রে যারা বিবৃতি দিতে রাজি হয়েছিলেন সেসব দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা ইইউ অনুসন্ধানী মিশনের সঙ্গে গতকাল রোববার কয়েক দফা বৈঠক করেন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে যৌথ বিবৃতির বিষয়ে ইইউ মিশনের সঙ্গে গতকাল আলোচনা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আমন্ত্রণে আসা ইইউ প্রতিনিধিরা সফরের তৃতীয় দিনে আজ সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। ইইউ দল ১৬ দিনের (৮-২৩ জুলাই) এ সফরে সরকারের প্রতিনিধি, নির্বাচন কমিশন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে।
সূত্র আরও জানায়, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের চাপ রয়েছে। সরকারও চায় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হোক। তাই ইইউ দলটিকে স্বাধীনভাবে নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি নির্বাচন কমিশন দেখছে। অগ্রগামী ইইউ প্রতিনিধি দলটির ওপর নির্ভর করছে ইইউ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না। সফর শেষে ফিরে গিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলকে এই ইইউ মিশন যে প্রতিবেদন দেবে, তারই ভিত্তিতে আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে ইইউ।