ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ২১২ বার
সমান তালে চলছে বৈঠা, সঙ্গে মাঝি-মাল্লাদের হই-হুল্লোড়ের ছন্দ। আছে জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। নদীর দুই পাড় জুড়ে ট্রলার ও ডিঙ্গি নৌকায় হাজারো দর্শক। দুই পাড় ভিড় করে আছেন শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সের মানুষ। এ যেন নদীর বুকে আনন্দের ঢেউ খেলা করছে। নদীমাতৃক আবহমান বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে শরীয়তপুরে এমনই এক নৌকা বাইচের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলার সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নের বিনোদপুর সুবেদারকান্দি এলাকায় আতাউর রহমান খান স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোগে এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ২০টি নৌকা অংশগ্রহণ করে। প্রতিটি নৌকায় ৫০-৬০ জন মাঝি বৈঠা হাতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় তাইজুল ইসলাম সরকার ও শাওন মুন্সীর বাচারী নৌকা যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করে।
এ ছাড়াও সুমন সরদারের নৌকা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। পানসী নৌকার মধ্যে আলী হোসেন চৌকিদারের নৌকা প্রথম, মুমিন হোসেনের নৌকা ২য় ও স্বপন বেপারীর নৌকা ৩য় স্থান অধিকার করেন। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে ৩টি ফ্রিজ, ৩টি টেলিভিশন ও সান্ত্বনা পুরষ্কার হিসেবে প্রেসার কুকার ও রাইচ কুকার উপহার দেওয়া হয়।
মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার কুলচরী থেকে বাচারী নৌকা নিয়ে এসেছেন জুলহাস মিয়া। তিনি কালবেলাকে বলেন, আমরা বিভিন্ন জেলায় নৌকা বাইচে অংশগ্রহণ করি। আমাদের নৌকাটি প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এখানে নৌকা বাইচ নিয়ে আসতে পারছি এটাই বড় আনন্দের। আমাদের দাবী এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আগামীতেও বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হোক।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী হাসান রাজা বলেন, আমরা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পেরে খুবই আনন্দিত। এখানকার আয়োজন খুব সন্তোষজনক। এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে মানুষের আনন্দ দিতে পেরেছি, এখানেই আমাদের সার্থকতা।
মাদারীপুরের মঠের বাজার এলাকা হতে আসা রাইসা ইসলাম বলেন, খুব সুন্দর একটি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেছি। এর আগে এতো বড় নৌকা বাইচ দেখা হয় নাই। আমার মামাতো বোনের দাওয়াতে মায়ের সঙ্গে এসেছি। আগামীতে যদি এ প্রতিযোগিতা হয় তাহলে আবার আসবো।
প্রথম স্থান অধিকারকারী বাচারি নৌকার মাঝি তাইজুল ইসলাম সরকার বলেন, আবহমান বাংলার নৌকা বাইচ এখন মানুষ ভুলে যেতে বসেছে। নৌকা বাইচকে নতুন করে প্রাণ দিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। প্রথম স্থান অধিকার করায় আমার দলের অন্যান্যরা খুব বেশি আনন্দিত। আয়োজক কমিটির প্রতি অনুরোধ তারা যেন বারবার এমন আয়োজন করেন।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজক কমিটির সভাপতি সুরুজ আহমেদ খান বলেন, নৌকা বাইচ আমাদের হাজারো বছরের একটি ঐতিহ্য। তবে এখন তা বিলুপ্তির পথে। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও মানুষকে আনন্দ দিতে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আগামীতেও এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।