ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২ অক্টোবর, ২০২৩ ১১:১৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১২৮ বার
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় মেঘনার বুক চিরে জেগে উঠেছে ছোট-বড় ৩০টি চর। এসব চরে হাজার হাজার একর জমি এখন দৃশ্যমান। প্রকৃতির আশীর্বাদেই জেগে উঠেছে এ ভূখণ্ড। এ চরগুলোকে উৎপাদনমুখী করে গড়ে তুললে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে, তেমনি ভূমির সঠিক ব্যবস্থাপনায় গড়ে উঠতে পারে নতুন এক বাংলাদেশ!
সংশ্লিষ্টরা জানান, এক সময় দক্ষিণ দিকে এ হাতিয়াই ছিলো জেলার শেষ সীমানা। কিন্তু বর্তমানে এ হাতিয়াই শেষ নয়, বরং হাতিয়া থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যেতে যেতে চোখে পড়বে নতুন ভূমি; যার কটিতে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি।
নীলক্ষ্মী, সাগরদি, হরণি, চানন্দী, সুখচর ও নলচিরা ইউনিয়ন নিয়ে হাতিয়া উপজেলা প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৯০ সালের দিকে খরস্রোতা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছিলো নীলক্ষ্মী, সাগরদি, হরণি, চানন্দী ও সুখচর এবং নলচিরার বেশিরভাগ অংশসহ বহু জনপদ। তবে যে পরিমাণ ভূমি বিলীন হয়েছিলো পরবর্তী সময়ে তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ভূমি ফিরিয়ে দিয়েছে মেঘনা। বর্তমানে মেঘনার চারপাশে প্রায় ত্রিশটি চর জেগে ওঠেছে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, নতুন করে জেগে উঠা চরগুলোর মধ্যে চরঘাসিয়ার আয়তন ৫০০১ একর, ঢালচর ৪০০০, চর আতউর ৫৬৮৩, চর মোহাম্মদ আলী ১১৭১, দমারচর ৬৩৬০, চর আয়েশা ৫২১৩, চর গাঙ্গুরিয়া ১০,০০২, চর নুরল ইসলাম ১০,০০৩, চর প্রিয়া ২৯৯৯, চর ওছখালি ৭০০২, চর ইউনুস ৩৭০০, নতুন চর ইউনুস ৭০০, চর কমলা ১৩৩৩৯, চর ওসমান ৫৫০০, চর মুয়িদ ৩৩০০, চর কবিরা ২০০০, চর কালাম ৮৭৮৫, খাজার চর ৪৫০০, চর রৌশন ৪৫০০, চর জোহান ৫৭০০ একর। এর মধ্যে প্রায় সবগুলো চরের ৪৫০০০ একর জমিতে উদ্যানের আওতায় আনা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এরই মধ্যে বসতি গড়ে ওঠেছে চর ঘাসিয়া, ঢালচর, চর আতউরসহ কয়েকটি চরে। চর মোহাম্মদ আলী, দমারচর, চর জোনাক, চর গাঙ্গুরিয়া, চর নুরুল ইসলাম, চর প্রিয়া ও চর ওছখালিসহ কয়েকটি চরে ধান চাষের পাশাপাশি রয়েছে গরু, মহিষ ও ভেড়ার বাতান। প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেলে নৌকা ও গাছে অবস্থান নিয়ে মানুষ রক্ষা পেলেও প্রাণহানি হয় নিরীহ পশুগুলোর। জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় একাধিকবার ধান চাষ করলেও ফলন মিলে একবার। এরপরও প্রতি বছর কয়েক লাখ টাকার কৃষিপণ্য উৎপাদন হয় এ বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে। তবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে চরগুলোতে কৃষির আওতায় আনা হলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. তোফায়েল হোসেন বলেন, হাতিয়ার চারপাশে প্রাকৃতিকভাবে ভূমি জেগে উঠছে। আগামী ১৫/২০ বছর পরে চরগুলো একটি সঙ্গে আরেকটি যুক্ত হবে। সরকারিভাবে যদি এ চরগুলোতে বাঁধ দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাহলে কৃষি, শিল্প কারখানাসহ অনেককিছু করা সম্ভব হবে।
এছাড়া নদীভাঙা ও ভূমিহীন মানুষগুলোকে পুনর্বাসন করা যাবে এসব চরে। চরগুলোকে উৎপাদনমুখী করে গড়ে তুলতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবেন বলে আশাবাদী তিনি।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কায়সার খসরু বলেন, জেগে উঠা চরগুলোর সার্বিক উন্নয়নে এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এসব চরের মানুষগুলোকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হবে।
নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস বলেন, হাতিয়ার চারপাশে জেগে উঠা নতুন চরগুলোতে ধান, বাদাম, সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন হচ্ছে। চরে পালন করা গরু ও মহিষের দুধ দিয়ে মূল্যবান দধি তৈরি হয়। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।