কবির হোসেন
প্রকাশ: ৮ অক্টোবর, ২০২৩ ১৮:০৭ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২০৫ বার
পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকে এক কোটি করে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়াতে ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে আরও পাঁচ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল এক বিবৃতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকে এক কোটি করে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে গত এক মাসে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দিলো সরকার। চলতি বছরের আগস্টে এক হালি ডিমের দাম ৬০ টাকায় পৌঁছালে জনসাধারণের ক্ষোভের সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছিল।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, আমদানি করা ডিম এখনো বাজারে আসেনি, তাই ঢাকায় আজ হালি প্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়দার আলী জানান, চলতি সপ্তাহেই আমদানি করা ডিমের কিছু চালান আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর চার প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ২১ সেপ্টেম্বর আরও ৬ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিমের প্রয়োজন হয়। সম্প্রতি ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়। উৎপাদনের সঙ্গে চাহিদার সামঞ্জস্য না হওয়ায় এ ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ডিমের সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখার জন্য পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে সর্বমোট পাঁচ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঁচটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো— অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুমুক্ত দেশ হতে ডিম আমদানি করতে হবে; আমদানি করা ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রপ্তানিকারক দেশের সরকারের মাধ্যমে নির্ধারিত কিংবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত সনদ দাখিল করতে হবে; সরকার নির্ধারিত শুল্ক বা কর পরিশোধ করতে হবে; নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করা যাবে না ও সরকারের অন্যান্য বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। আর ডিম আমাদানির অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইউনিয়ন ভেনচার লিমিটেড, জে এফ জে প্যারাডাইস কানেকশন, লায়েক এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স লাকি এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স পিংকি ট্রেডার্স।
জানা গেছে, ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে আপাতত পাঁচ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাঁচ প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমদানি করা ডিম খুচরা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি পিস ১২ টাকায় বিক্রি হবে।
গত শনিবার বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। দুদিন আগেও রাজধানীতে ফারমের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা ডজন। যা এখন ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে প্রতি ডজন ডিম ১৫৫ টাকা আর পাড়া-মহল্লার দোকানে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে ডিমের সরবরাহ কম। এছাড়া বৃষ্টি হলে বাজারে ডিমের চাহিদাও বাড়ে। তাই দামও বেড়েছে।
এদিকে তিন সপ্তাহ আগে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা বেঁধে দিয়েছিল সরকার। এরপরও দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে ১০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। ওই সময় কিছুটা দাম কমতে শুরু করেছিল। তবে এখন টানা তিন দিন বৃষ্টির পর ঢাকায় নতুন করে ডিমের দাম বেড়ে গেলো। বর্তমান হিসেবে ডিমের দাম সাড়ে ১৩ টাকার কাছাকাছি চলে গেছে। এতে এক ডজন ডিম সাধারণ মানুষদের নির্ধারিত দামের থেকে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ১৬ টাকা। ফলে নিত্যদিনের খাদ্যতালিকার অন্যতম অনুষঙ্গ ডিমের দাম বাড়ায় অসন্তোষ জানিয়েছেন ক্রেতারা।
অপরদিকে আমদানি নিয়ে পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন ভিন্ন মত দিয়েছে। তাদরে মতে আমদানি করে সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না। আমদানি নয়, বরং ডিম ও মুরগি রপ্তানি করার সময় হয়েছে দাবি জানায় তারা।
সংগঠনটি দাবি করে, বাজারের ৮০ শতাংশ চাহিদা প্রান্তিক খামারিরা পূরণ করেন। মুরগির বাচ্চা এবং খাবারের দাম কমানোর ব্যবস্থা করে করপোরেট সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এতে বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে। একটি চক্রকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ডিম আমদানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে আরও বিপর্যয় হবে। দেশে উৎপাদন ধরে রাখতে না পারলে একটি ডিম ২০ টাকায় কিনে খেতে হবে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার আরও বলেন, ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস, উৎপাদন হচ্ছে ৫ কোটি। পোলট্রি শিল্পে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ৫০-৬০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই অবস্থা ধরে রাখতে আমদানি বন্ধ করতে হবে এবং প্রান্তিক খামারিদের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। পোলট্রি ফিড এবং বাচ্চার দাম কমিয়ে উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব বলে মত দেন তিনি।
আমদানির সিদ্ধান্তে দেশের শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ভারতে ৫০ কেজির এক বস্তা ব্রয়লার ফিডের মূল্য বাংলাদেশের টাকায় ২৭০০, লেয়ার ফিডের মূল্য ১৮৭৫, ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ২৮, লেয়ার মুরগির বাচ্চার মূল্য ২৫-৩০ টাকা। সেখানে ডিমের উৎপাদন খরচ ৫-৬ টাকা। একটি ডিম বিক্রি হয় ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকা। এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১০-১২০ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে এক বস্তা ব্রয়লার ফিডের দাম ৩৫০০ টাকা, লেয়ার ফিড ২৯০০ টাকা। ব্রয়লার বাচ্চার মূল্য ৫০-৬০, লেয়ার বাচ্চার মূল্য ৭০-৭৫ টাকা। ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ থেকে ১১ টাকা। বাচ্চার দাম ৩৫ টাকা ধরে এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬৭ টাকা। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ। খাবার ও বাচ্চার দাম কমানো না গেলে ডিম ও মুরগির দাম কখনোই কমবে না।
সিন্ডিকেট মুরগির বাচ্চা বিক্রিতে প্রতিদিন সাড়ে ৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে দাবি করে সুমন হাওলাদার বলেন, খামারিদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রান্তিক খামারিদের জন্য পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা আমদানির ব্যবস্থা করুন।