ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

করমুক্তই থাকছে সর্বজনীন পেনশন

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ অক্টোবর, ২০২৩ ১৭:৪৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৬০ বার


করমুক্তই থাকছে সর্বজনীন পেনশন

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের চাঁদার বিপরীতে করছাড় পাওয়া এবং পেনশন বাবদপ্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকা নিয়ে যে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছিল তার সমাধান হতে যাচ্ছে। ফলে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের অর্থ সর্বজনীন বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে কর রেয়াত সুবিধা ও পেনশনে প্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে শিগগির সর্বজনীন পেনশন স্কিমের চাঁদা করমুক্ত সুবিধা দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এসআরও জারি করবে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, নতুন আয়কর আইনের বিধান ও সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে দু-রকম তথ্য থাকায় এ ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছিল। সর্বজনীন ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী, এ স্কিমের চাঁদা করছাড় পাবে। তবে নতুন আয়কর আইনে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের চাঁদা করছাড় দেওয়ার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা নেই।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩-এর ১৪ (১) (ঢ) ধারায় বলা আছে, পেনশনের চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদপ্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। তবে, আয়কর আইনের ৭৬ (২) ধারায় বলা হয়েছে, আয়কর আইন ব্যতীত অন্য কোনো আইন বা আইন হিসেবে পরিগণিত দলিলের মাধ্যমে যদি কোনো ব্যক্তিকে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে ওই আইন বা আইন হিসেবে পরিগণিত দলিলে যা-ই থাকুক না কেন, এনবিআর প্রজ্ঞাপন দ্বারা ওই ব্যক্তিকে কর অব্যাহতি না দিলে সেই বিধান কার্যকর হবে না।
নতুন আয়কর আইন, ২০২৩-এর ষষ্ঠ তফসিলে (কর অব্যাহতি, রেয়াত ও ক্রেডিট) পেনশন স্কিমের চাঁদার কথা উল্লেখ নেই। এ আইনের ষষ্ঠ তফসিলে (অংশ-৩) বলা হয়েছে, জীবন বিমার প্রিমিয়াম, প্রভিডেন্ট ফান্ডের চাঁদা, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলের চাঁদা, সরকারি সিকিউরিটিজ বা মিউচুয়াল ফান্ডে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ, বছরে এক লাখ ২০ হাজার টাকা (মাসিক ১০ হাজার) ডিপিএসে বিনিয়োগ, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে সেই অর্থের ওপর কর রেয়াত বা করছাড় পাওয়া যাবে।
এক্ষেত্রে উল্লিখিত খাতে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে, তার ১৫ শতাংশ বা ১০ লাখ টাকার কম যে অর্থ, সে পরিমাণ অর্থ করছাড় পাওয়া যাবে। ষষ্ঠ তফসিলে পেনশন স্কিমের চাঁদার কথা উল্লেখ নেই। এর ফলেই সর্বজনীন পেনশন স্কিমের চাঁদা করমুক্ত থাকবে কি না তা নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়। এ ধুম্রজাল দূর করতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। 
যুগ্ম সচিব শাববীর আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি পেনশন স্কিমে নিবন্ধন করেছেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর ধারা ১৪ (১) (ঢ) এ উল্লেখ করা হয়েছে, নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে। এমতাবস্থায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমের অধীনে দেওয়া চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত করার জন্য এসআরও জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এনবিআরের আয়কর কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেদের আইনে কর অব্যাহতি দিচ্ছে, যার আইনগত ভিত্তি নেই। আয়কর আইন অনুযায়ী কর অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে শুধু এনবিআরের। এ বিষয়ে নিজেরা নিজেদের কর অব্যাহতি দিয়ে কোনো আদেশ, প্রজ্ঞাপন বা এসআরও জারি করলেও আয়কর আইনে এর বৈধতা নেই। আয়কর আইনে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে রিটার্ন জমা থেকে অব্যাহতি বা বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত দেওয়া হয়েছে, শুধু সেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান করছাড় পাবে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পরই বিষয়টি নিয়ে সর্বজনীন পেনশনের ধুম্রজাল দূর হবে।
সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, বিষয়টি নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এছাড়া পেনশন স্কিম চলতি বছরের আগষ্টে শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে এটি করদাতাদের রিটার্ন জমা দেওয়ায় প্রভাব ফেলবে না। আগামী অর্থবছরের কথা মাথায় রেখে আলোচনা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে। এটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন। এছাড়া ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।
পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে পেনশনারের নমিনি পেনশন স্কিম গ্রহণকারীর ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের প্রেক্ষিতে কেবল তার জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে।
সর্বজনীন পেনশনের আওতায় এলেন কতো মানুষ: গত ৫ অক্টোবর দুপুর পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশনে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ২২৩ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৪০ লাখ ৩ হাজার টাকায়। শুরুর মতো এখনো চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। জমা পড়া চাঁদার অর্ধেকের বেশি দিয়েছেন তারা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য চালু করা প্রগতি স্কিমে নিবন্ধন করে এরই মধ্যে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৬ হাজার ৫৪৩ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৫ কোটি ৫১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশনে এখন পর্যন্ত যে চাঁদা জমা পড়েছে তার ৫২ দশমিক ৯৯ শতাংশ জমা দিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি পেশার ব্যক্তিরা। তাদের জন্য চালু করা হয়েছে সুরক্ষা স্কিম। এই স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৫ হাজার ৬৮০ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা। যাদের বর্তমান আয়সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা, তাদের জন্য চালু হয়েছে সমতা স্কিম। এ স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন এক হাজার ৫৬৫ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৩০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এ স্কিমের মাসিক চাঁদার হার এক হাজার টাকা। এরমধ্যে স্কিম গ্রহণকারী চাঁদা দেবেন ৫০০ টাকা এবং বাকি ৫০০ টাকা দেবে সরকার। সর্বজনীন স্কিম গ্রহণকারী প্রবাসীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও এরই মধ্যে তারা এক কোটি টাকার ওপরে জমা দিয়েছেন। বিদেশে অবস্থান করা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য চালু করা হয়েছে প্রবাস স্কিম। এই স্কিম গ্রহণ করে এরই মধ্যে চাঁদা দিয়েছেন ৪৩৫ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ এক কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।


   আরও সংবাদ