আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ২০:৪১ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৩৫ বার
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট বলেছেন হামাসের বিরুদ্ধে তাদের চলমান যুদ্ধ ‘নতুন ধাপে প্রবেশ করেছে।’ তিনি জানিয়েছেন, গত শুক্রবার তারা সবদিক দিয়ে গাজায় হামলা চালিয়েছেন। এ হামলায় গাজার মাটি কেঁপে উঠেছে। তিনি হুমকির সুরে বলেছেন, তাদের এ ‘মাটি কাঁপানো হামলা’ অব্যাহত থাকবে।
গত শুক্রবার গাজা উপত্যকায় অনেকটা কৌশলে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এর একদিন পর তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘গাজার মাটি কেঁপেছে। আমরা মাটির উপর থেকে, মাটির নিচে থেকে হামলা চালিয়েছি। আমরা হামাসের উপর সব দিক দিয়ে, সব জায়গায় হামলা চালিয়েছি। সেনাদের কাছে বার্তা পরিষ্কার; অভিযান পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চলবে।’ দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, তারা ইসরায়েলিদের রক্ষা ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবদিক দিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইয়োয়াভ গ্যালান্ট শনিবার ইসরায়েলের জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তিনি গাজায় হামলা অব্যাহত রাখার হুমকি দেন। গত শুক্রবার বিকেলের দিকে একটি খবর বের হয় হামাস ও ইসরায়েল মধ্যে যে কোনো সময় যুদ্ধবিরতি হতে পারে। এরমধ্যেই হঠাৎ করে গাজায় তীব্র বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। বিমান হামলা চলার সময় গাজায় ট্যাংকসহ অসংখ্য ইসরায়েলি সেনা ঢুকে পড়ে। ইসরায়েলিরা গাজায় ঢোকার পর হামাস তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় স্থল অভিযান চালানোর জন্য সীমান্তের যেসব স্থানে ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো জড়ো করা হয়েছিল, সে স্থানগুলো এখন খালি পড়ে আছে। অর্থাৎ সীমান্তের কাছে জড়ো হওয়া ট্যাংকগুলো গাজায় প্রবেশ করেছে।
গাজায় সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন: ইসরায়েলের অস্বাভাবিক ও অনবরত বোমা হামলায় বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। আর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গাজায় টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে গাজায় বিমান হামলার তীব্রতা বাড়িয়ে দেয় ইসরায়েল। ওই সময় গাজার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ইসরায়েলি সেনারা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় এদিনও ইসরায়েলের টানা হামলা চলছিল। ইসরায়েলিদের সামরিক হেলিকপ্টার ও বিমান গাজার আকাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে গাজায় যে হামলা হয়েছে সেগুলো বেশ তীব্র এবং অব্যাহত ছিল। এর আগে কখনো তারা এ ধরনের হামলা দেখেননি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে, গাজাকে বহিঃবিশ্ব থেকে ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আর পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হয়ে যাওয়ায় গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করবে সেগুলো প্রকাশ না পাওয়ার শঙ্কা থেকে যাবে। ফিলিস্তিনের রামাল্লাহ থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক নিদা ইব্রাহিম শনিবার জানান, গাজায় কি ঘটছে সে ব্যাপারে তারা খুবই কম তথ্য জানতে পারছেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ছাড়া গাজা অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ার পর, পশ্চিমতীরসহ অন্যান্য জায়গার ফিলিস্তিনিরা মনে করছেন… গাজায় কি হচ্ছে সে বিষয়ে তাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে।’ ইসরায়েল সবধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় এখন গাজার মানুষ চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া অনেকে ভেঙে পড়েছেন। কারণ তারা তাদের প্রিয়জনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না।
গাজা উপত্যকায় স্থল হামলা অব্যাহত রাখার বিপদ সম্পর্কে ইসরাইলকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে সৌদি আরব। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। বিবৃতিতে গাজাবাসীদেরকে 'আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম ফিলিস্তিনি' হিসেবে অভিহিত করা হয়। এতে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জীবনের প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী ইসরাইলের স্থল অভিযানের নিন্দাও জ্ঞাপন করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন নির্লজ্জ ও অযৌক্তিকভাবে লঙ্ঘন অব্যাহত রাখার বিপদ সম্পর্কে সৌদি আরব হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছে।' ইসরাইল গাজায় তাদের সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ করার কথা ঘোষণা করার প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব এই বিবৃতি প্রদান করল।
ভূগর্ভস্থ ১৫০ স্থাপনায় বিমান হামলা: ইসরাইলি বিমানবাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ ১৫০টি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের ইতিহাসে দেশটি ভয়াবহ হামলার শিকার হওয়ার তিন সপ্তাহ পর রাতে গাজায় ব্যাপক অভিযান চলাকালে তারা এসব হামলা চালায়। শনিবার সেনাবাহিনী এ কথা জানিয়েছে। ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিমান হামলা চালানো স্থানগুলোর মধ্যে ‘সন্ত্রাসী হামলা চালাতে ব্যবহার করা বিভিন্ন সুড়ঙ্গ পথ, ভূগর্ভস্থ যুদ্ধের স্থান এবং ভূগর্ভস্থ অবকাঠামো রয়েছে। এসব হামলায় আরো অনেক হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছে।’ গাজা উপত্যকা এবং ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থানরত সাংবাদিকরা শনিবার গোলাবর্ষণ এবং বিমান হামলা অব্যাহত থাকার কথা জানান। পৃথক এক বিবৃতিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের এক অভিযানে হামাস বিমান হামলার প্রধান আসাম আবু রাকাবা নিহত হয়েছে। ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ৭ অক্টোবর ইসরাইলে চালানো হামাসের হামলায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আর এই হামলা তাদের মধ্যে যুদ্ধের সূচনা করে। ইসরাইল বলেছে, ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা থেকে হামাসের চালানো ভয়াবহ হামলায় কমপক্ষে ১,৫০০ জন নিহত হয়েছে। হামাসের হামলায় নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রথম দিনে তাদের নির্বিচারে গুলি করে ও পুড়িয়ে মারা হয়। এছাড়া তারা ২২০ জনেরও বেশি লোককে আটক করে। গাজায় হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৭,৩০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। এদের বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিক। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানায়, আবু রাকাবা হামাসের ড্রোন হামলা এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেখভাল করতেন।