ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর, ২০২৩ ১৯:৪৩ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৯৬ বার
ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচেও পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। মিশেল মার্শের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে টাইগার বাহিনী। এর মাধ্যমে শেষ হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ২০২৩।
গতকাল পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩০৬ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে মিশেল মার্শের অপরাজিত ১৭৭ রানের তাণ্ডবে ৮ উইকেট ও ৩২ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সেরা আটের সমীকরণ আগেই সহজ করেছিল সাকিব বাহিনী। বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারালে নিশ্চিত হতো আইসিসি ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তবে তা করতে পারেনি টাইগাররা। ৩০৭ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে হেসে-খেলেই বাংলাদেশকে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তবে এখনও জিইয়ে আছে বাংলাদেশের আসন্ন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের স্বপ্ন। তবে সেক্ষেত্রে ভারতের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডস হারলেই নিশ্চিত হবে সাকিব-শান্তদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্বপ্ন।
শনিবার (১১ নভেম্বর) পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৩০৬ রান তুলেছে বাংলাদেশ। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মার্শের ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ১৭৭ রানে ভর করে ৩২ বল বাকি থাকতেই ৮ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে অজিরা।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বেশ দেখেশুনেই খেলতে থাকেন ডেভিড ওয়ার্নার ও হেড। তবে দলীয় ১২ রানে তাসকিনের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ট্রাভিস হেড।
এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন মার্শ ও ওয়ার্নার। দুইজনে মিলে চড়াও হন টাইগার বোলারদের ওপর। এতে প্রথম পাওয়ার প্লেতে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৮ রান তুলেন মার্শ-ওয়ার্নার। মারকুটে ব্যাটিংয়ে ইনিংসের ১৫তম ওভারেই নিজের ক্যারিয়ারের ১৯তম অর্ধশতক তুলে নেন মার্শ। এরপর ক্রিজে থিতু হয়ে তুলে নেন নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরিও।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১০০ রান পূরণ করেন এই দুই ব্যাটার। তবে ইনিংসের ২৩তম ওভারে ওয়ার্নারকে ফেরান মোস্তাফিজ। ব্যক্তিগত ৫৩ রানে ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে ১২০ রানের জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজ। এতে দলীয় ১৩২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় অজিরা। দ্য ফিজের ফুললেংথের বলটি আলতো করে তুলে দিতে চেয়েছিলেন অজি ওপেনার। তবে তাতে ভুল করেননি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক শান্ত। মিড-অনে লুফে নেন সেই ক্যাচ। তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলের রানের চাকা সচল রাখেন মার্শ ও স্মিথ। দ্বিতীয় উইকেটে ১০০ রানের জুটির পর তৃতীয় উইকেটেও শত রানের জুটি গড়ে অজিরা।
এরপর ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ১৫০ ছুঁয়ে ফেলেন মার্শ। এর আগে, সর্বোচ্চ ১২১ রানের ইনিংসও খেলেছিলেন চলতি বিশ্বকাপেই।
শেষ পর্যন্ত স্মিথ-মার্শের ১৭৫ রানের জুটিতে ৩২ বল হাতে রেখেই ৮ উইকেটের বড় জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে, ব্যাটিংয়ে নেমে দেখে-শুনে শুরু করেছিলেন টাইগার দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তারা। দুই ওপেনারের দারুণ ব্যাটিংয়ে প্রথম পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৬২ রান তুলে বাংলাদেশ। তবে ১২তম ওভারে আউট হয়ে যান জুনিয়র তামিম।
অজি পেসার শন অ্যাবটের বলে তাকেই ক্যাচ দিয়ে ৩৬ রান করে তামিম ফেরায় ভাঙে ৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। তামিমের বিদায় রান রেটে কোনো প্রভাব ফেলেনি। ক্রিজে এসেই শট খেলতে শুরু করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তাতে ১৬তম ওভারেই তিন অঙ্ক ছুঁয়েছে বাংলাদেশ।
তবে ব্যাটিংয়ে আরও একবার হঠাৎ ছন্দ পতন লিটনের। সবলীল ব্যাটিংয়ে ফিফটি পথে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু ১৭তম ওভারে অ্যাডাম জাম্পাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ল্যাবুশেনের হাতে ধরা পড়েন এই ওপেনার। সাজঘরে ফেরার আগে লিটনের ব্যাট থেকে এসেছে ৪৫ বলে ৩৬ রান।
লিটনের বিদায়ের পর তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে শান্তর রসায়নটা বেশ ভালোই জমেছিল। দুই প্রান্তেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলের রানের চাকাও দ্রুত ঘুরছিল। তবে এই সুখ বেশিক্ষণ সইলো না! ২৮তম ওভারে রান নিতে গিয়ে হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে ৪৫ রানে সাজঘরে ফিরেন শান্ত।
শান্তর পর রান আউটে কাটা পড়ার পর আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আত্মবিশ্বাসী এই ব্যাটার ২৮ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় ৩২ রান করে রান আউটে কাটা পড়েন তিনি। রিয়াদের বিদায়ের পর ৬১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়।
বিশ্বকাপের আসরটা খুব একটা ভালো যায়নি হৃদয়ের। প্রত্যাশার সিকি ভাগও পূরণ করতে পারেননি এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। তবে শেষ ম্যাচে এসে কিছুটা হলেও নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করলেন তিনি। ৭৯ বলে ৭৪ রান করে আউট হয়েছেন তিনি।
মিডল অর্ডারে দ্রুত রান তোলায় মনযোগ বাড়াতে চেয়েছিলেন মুশফিক। জাম্পাকে স্লগ সুইপে ছক্কাও হাঁকিয়েছিলেন। তবে রানের গতি বাড়াতে গিয়েই যেন বিপদ ডেকে আনলেন। এগিয়ে এসে মিড উইকেটের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন প্যাট কামিন্সের হাতে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৪ বলে ২১ রান।
মুশফিক ফেরার পর দারুণ ব্যাটিং করেছেন মিরাজ। সাজঘরে ফেরার আগে ২০ বলে করেছেন ২৯ রান। তিনি ব্যাটিং করেছেন প্রায় ১৪৬ স্ট্রাইকরেটে। তবে মিরাজ ফেরার পর আর কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি। মাহেদি-নাসুমরা চেষ্টা করেও রানের গতি বাড়াতে পারেননি। তবে ৩০৬ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় টাইগাররা।