আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ২০:১১ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৬৫ বার
সাত দিনের যুদ্ধবিরতি ভাঙার পেছনে ইসরায়েল হামাসকে দায়ী করেছে। আর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও বলেছেন, যুদ্ধবিরতি ভাঙার জন্য দায়ী হামাস। কারণ তারা ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও যুদ্ধবিরতি ভাঙার জন্য হামাসকে দায়ী করেছেন। অথচ ইসরায়েল আগে থেকেই হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছে। কারণ ইসরায়েল গাজাকে ২৩টি অঞ্চলে ভাগ করেছে। যদি যুদ্ধ না করার ইচ্ছা থাকে তাহলে তো গাজার এই নতুন মানচিত্র তৈরিরও দরকার নেই।
ব্লিনকেন ইসরায়েলে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি বলেছেন, এরপরের টার্গেটের জন্য ইসরায়েলি সংস্থাকে বেসামরিক নাগরিকদেরকে মারতে হবে। শুক্রবার গাজায় ফের হামলা চালানোর পরপরই সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, আমাদের ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে। ফের হামলা চালানোর জন্য ইহুদিরাও ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে। মূলত নেতানিয়াহু গাজায় সমর্থন দিতে কট্টর ডানপন্থিরা তাকেই ভোট দেয়।
গাজায় আগ্রাসন দেখলে মনে হতেই পারে যে, এই হামলা করা, হত্যা ও নির্যাতন করা ইসরায়েলের অধিকার। দেশটিকে হয়তো ফিলিস্তিনিরাই দায়িত্ব দিয়েছে যে, তোমরা হামাসকে নির্মূল করো। প্রয়োজনে আমাদেরকেও মারো। কারণ হামাস সন্ত্রাসী সংগঠন। এসব লেখা পড়তে হয়তো অনেকের ভালো লাগে। কিন্তু একবার ফিলিস্তিনি শিশুদের কথাই ধরা যাক। এই বয়সেই পৃথিবী থেকে তাকে বিদায় নিতে হচ্ছে। হাসপাতালের মর্গে দেহটা পড়ে আছে। কিন্তু কারো কিছু করার নেই, কারণ এটা ওদের নিয়তি। এই নিয়তি ঠিক করতেই হয়তো ইসরায়েলকে বিনা মূল্যে হত্যার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
এ কেমন অধিকার ইসরায়েলের?
হালিমা খালিল পশ্চিম তীরের খিরবেত সুসিয়া গ্রামে থাকেন। জার্মান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চেভেলেক তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি মধ্যরাতে তাদের বাড়িতে হামলা হয়। পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বাসিন্দারা তার বাড়িতে যায়, তার স্বামীকে মারধর করে। কয়েক দিনের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। এবং একই সঙ্গে বলে দেওয়া হয়, বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় নিজেদের হাতে বাড়িটি যেন ভেঙে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতির মধ্যে এখন তারা কোথায় যাবেন, জানেন না অসহায় হালিমা।
হালিমা একা নন, তাদের এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই একই ঘটনা ঘটেছে বলে সাংবাদিককে জানিয়েছেন তিনি। প্রায় প্রতিদিনই তাদের প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে লুঠপাট চলছে। বাড়িঘর ভাঙচুর হচ্ছে। অসহায় হয়ে তা দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই এই মানুষগুলোর। হালিমা জানিয়েছেন, তার বোনের স্বামীকেও একইভাবে মারধর করা হয়েছে। ভয়ে বমি করে ফেলেছে তাদের সন্তান। রিপোর্ট বলছে, গত দেড় মাসে ১৬৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে পশ্চিম তীরে। ইসরায়েলি বাহিনী তাদের হত্যা করেছে বলে অভিযোগ। আট জনের মৃত্যু হয়েছে স্থানীয় ইসরায়েলি বাসিন্দাদের মারধরে।
হত্যার স্বাধীনতা, অতঃপর জয়:
গত ৭ অক্টোবর থেকে চালানো সামরিক অভিযানে ইসরায়েল ১৫ হাজার ২০৬ জনকে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী। ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। সাত দিনের যুদ্ধবিরতির পর এক দিনেই ইসরায়েল ১৮৪ জনকে হত্যা করেছে। দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি চিকিত্সক, ১১২ জন জাতিসংঘ কর্মকর্তা, ১৫ বেসামরিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা। ৭৩ সাংবাদিককে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। কয়েক লাখ ঘরবাড়ি ধুলোয় মিশে গেছে। হামাসের ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল ১৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে।
ইসরায়েলের নৈতিক সেনাবাহিনী দাবি করে তারা মতপ্রকাশের ও স্বাধীনতার সংবাদ মাধ্যমে কত লোক মারা যায়। অথচ মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের ফরিদ জাকারিয়া জানিয়েছেন, ইসরায়েল গাজায় সম্প্রতি সাংবাদিককের প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। বিনিময়ে হত্যাযজ্ঞ, নীপিড়নের কাহিনীর ছবি তোলা, সব কিছুর ভিডিও সংবাদ প্রকাশ করার আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী থেকে অনুমতি নিতে হবে। তারা ভিডিও ফুটেজ দেখে অনুমোদন দেবে কোনোগুলো প্রকাশ করা যাবে। ফরিদ জাকারিয়া জানিয়েছেন, তারা এই নীতি মেনেই নিয়েছেন।
নীতি-নৈতিকতায় হার:
ইসরায়েলকে হয়তো পশ্চিমা বিশ্বের সরকারগুলো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের জনগণ তো নয়। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, আর্জেন্টিনাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে জোরালো প্রতিবাদ হচ্ছে। প্রতিদিনই বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েল যা করছে তা যুদ্ধাপরাধ এবং ইসরায়েলি আগ্রাসন গণহত্যার শামিল। তাই মনুষ্য নীতিতে জয় হচ্ছে ফিলিস্তিনের তথা হামাসের। কিন্তু মরে গিয়ে এই জয় দিয়েই তারা কী করবে সেটাই দেখার বিষয়। ফলে নীতি-নৈতিকতায় বড় ধরনের হার ইসরায়েলের।