ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১৬:২৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১২৪ বার
ঢাকা: সরবরাহ ঘটতির অজুহাতে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। সম্প্রতি তিন দিনের ব্যবধানে রাজধানী পাইকারী ও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়ে ছিল কেজিতে ২০-৩০ টাকা।
সরবরাহ বাড়ায় আজ দাম কিছুটা কমলেও, আগামীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম আরও বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শুক্রবাদ ও রাজাবাজারের বিক্রেতারা এমন শঙ্কার কথা জানান।
বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রয়েছে। অবৈধভাবে কিছু ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে এলেও চাহিদার বেশিরভাগই পূরণ হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে। তবে বর্তমানে বাজারে থাকা মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় সরবরাহে ঘটতি দেখা দিয়েছে। এর ফলে তিন দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে অনেকখানি। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করবে এমন খবরে আজ সরবরাহ বাড়ায দাম কিছুটা কমেছে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ যদি না আসে, তাহলে সামনের দাম আবার বাড়বে। মাস খানেক পর হালি পেঁয়াজ বাজারে ওঠা পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে।
সকালে কারওয়ান বাজারের পাইকারী পেঁয়াজের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে পাবনা ও রাজশাহীর মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিক্রি হয়েছিল ১১৫ থেকে ১১৬ টাকা কেজি। এর তিন দিন আগে অর্থাৎ মঙ্গলবার ( ৬ ফেব্রুয়ারি) একই বাজারে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৯০ টাকা কেজি।
ফরিদপুরের মুড়িকাটা পেঁয়াজ বর্তমানে পাইকারী বাজারে ১০৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা শনিবার ছিল ১১৪ টাকা এবং এর তিনদিন আগে ছিল ৯০ টাকা। মেহেরপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৬ থেকে ৮৮ টাকা কেজি দরে। যা গতকাল ছিল ৯০ টাকা এবং তিন দিন আগে ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এছাড়া বর্তমানে চীনের পেঁয়াজ ৯০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে, যা গতকালও একই দাম ছিল। তিন দিন আগে ছিল ৮০ টাকা। অবৈধভাবে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ বর্তমানে ১১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গতকাল ছিল ১১৬ টাকা এবং তিন দিন আগে ছিল ১০৪ থেকে ১০৫ টাকা।
খুচরা বাজারে বর্তমানে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা চার-পাঁচ দিন আগে ১শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।
পেঁয়াজের হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারে পাইকারী পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. মানিক বাংলানিউজকে বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। গত কয়দিন বাজারে পেঁয়াজই ছিল না। এর কারণে দাম বাড়ছে। আজকে আবার পেঁয়াজ এসেছে দাম কিছুটা কমেছে। সামনে নতুন হালি পেঁয়াজ এলে তখন দাম আবার কমবে। তবে এর মধ্যে যদি ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে এলে দাম আগেই কমতে পারে। যদি তা না হয় তাহলে হালি পেঁয়াজে বাজার সয়লাব না হওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বাড়তে পারে।
সোহেল নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আসবে শুনছি। যদি আসে তাহলে বাজারে দাম কমে যাবে। আর যদি না আসে তাহলে দাম আরও বাড়তে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আড়তদার বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আসবে শুনে অনেকে লসে এখন পেঁয়াজ বিক্রি করছে। কেনা ১১৮ টাকা কেজি, কিন্তু বিক্রি করছে ১১০ টাকা। হালি পেঁয়াজ আজকে এক ট্রাক আসছে। তবে পুরোপুরি বাজারে আসতে এক মাস সময় লাগবে। ততদিন দাম কমবে না। আবার আভাস পাওয়া যাচ্ছে রমজান উপলক্ষে ভারতীয় পেঁয়াজ আসবে। যদি সেটি সত্য হয় তাহলে দাম কমে যাবে। তা না হলে হালি পেঁয়াজ আসার আগ পর্যন্ত দাম তেমন কমবে না। বরং আরও বাড়তে পারে।
বিক্রেতারা পেঁয়াজের সরবরাহ কমের কথা বললেও কারওয়ান বাজার ঘুরে পেঁয়াজের কোনো সংকট দেখা যায়নি। বরং বস্তার পর বস্তা পেঁয়াজ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ায় মোটেও অবাক হননি ক্রেতারা। তাদের মতে, রমজান কাছাকাছি আসায় বিক্রেতারা ইচ্ছা করেই পণ্যের দাম বাড়ানোর খেলায় নেমেছে। সরকারের যথাযথ তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা প্রতিবছরই এমন কারসাজি করেন। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
সাহেলা বেগম নামের এক গৃহিনী বলেন, রোজার গন্ধ পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের দামতো বাড়াবেই। এটা আর নতুন কি। প্রতিবছরই তো এমন হয়। রমজানের আগে অনেকখানি দাম বাড়ায়, তারপর রোজার মধ্যে ২-৪ টাকা কমিয়ে বলে মানুষের কষ্টের কথা ভেবে দাম কমিয়েছি। যে মুড়িকাটা পেঁয়াজ গত বছরও ২০-৩০ টাকায় কিনেছি, সেটি এবার ১৩০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, দাম নাকি আরও বাড়বে।
শুভ আহাদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, সরকার যথাযথভাবে বাজার মনিটরিং করতে পারছে না। সরকার যদি কড়াকড়িভাবে বাজার মনিটরিং করতো, তাহলে ব্যবসায়ীরা এভাবে দাম বাড়াতে পারতো না। বাজারে পেঁয়াজের সংকট মোটেও নেই। বরং মজুদ করে বাজারকে অস্থিতিশীল করছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম বলেছেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। দুপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ বিক্রয় প্রতিরোধ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।