ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ফেনী শহরে কমছে জলাশয়, বাড়ছে অগ্নিঝুঁকি

আমির হোসেন মামুন


প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১০:০২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১২২ বার


ফেনী শহরে কমছে জলাশয়, বাড়ছে অগ্নিঝুঁকি

ফেনী: দখল আর দূষণে ফেনী শহর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পুকুর, জলাশয়। পানির প্রবাহ হারিয়ে মৃতপ্রায় খালগুলো।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, বড় ধরনের কোনো অগ্নিকাণ্ড হলে তা উত্তরণের জন্য পানির উৎস না থাকায় চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা থেকে শুরু করে আবাসিক ভবনগুলো। এছাড়া ঝুঁকিতে রয়েছে ৬০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ ও অবকাঠামো।

 

লালচে জং ধরা টিনের অবকাঠামোগত যে জঞ্জাল ফেনী বড় বাজারে দৃশ্যমান, এমনটা ছিল না এখানটায়। দেড় দশক আগেও ছিল বিশাল জলাশয়। অজু, গোসলসহ মানুষের প্রাত্যহিক কাজে প্রয়োজন মেটাতো জলাশয়টি। শহরের কোথাও আগুন লাগলে নেভানোর ভরসাও ছিল এটি। প্রথমে দূষণ, এরপর দখল। সময়ের পরিক্রমায় শহরের বুক থেকে হারিয়ে গেছে জলাশয়টি। নিউমার্কেট নামে নির্মাণ হয়েছে কয়েক শতাধিক দোকান। অপরদিকে জলাশয়টি ভরাট করায় অগ্নিঝুঁকিতে পড়েছে কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পদ ও অবকাঠামো।

এখনও সুবিশাল সেই জলাশয়গুলোর অভাববোধ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অগ্নিঝুঁকি থেকে বাঁচতে কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক ভূমিকার আশা তাদের।  

দাওয়াখানা অফসেট প্রেসের মালিক আবদুর রহমান আলমগীর বলেন, বিশাল জলাশয় ছিল, মানুষ সেখানে অজু-গোসল করতো। সেই জলাশয়টি বিলীন করে এখন সেখানে মার্কেট হয়েছে। বাজারে কোনো অগ্নিদুর্ঘটনা হলে তা নেভানোর জন্য এখন কোনো পানি নেই।  

তিনি বলেন, পৌরশহরে এখন যেখানে সবজি আড়ত, সেখানে একসময় ছিল খাজা আহম্মদ লেক। একসময় কৃষির সেচ ব্যবস্থায় অন্যতম ভরসা জলাশয়টি ভরাট করে নির্মাণ হয়েছে তিন শতাধিক দোকান। লেকের বিপরীতের জলাধারটিও হয়েছে ভরাট।

শহরের দাউদপুলের ওপর থেকে করুণ দৃশ্য দেখা গেছে পাগলি ছড়ার। দখল ও দূষণের ফলে এখন সেটি মৃত প্রায়। স্থানীয়রা বলছেন, পাগলি ছড়ার প্রশস্ততা একসময় ছিল ৩০ ফুটের বেশি। খালটির বুকে চলতো নৌকা। নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পণ্যবাহী তরিগুলো ভিড়তো ঘাটে। প্রবহমান সেই খালটির এখন কোথাও কোথাও ৩ ফুটও নেই। দমদমা খালসহ বাকি খালগুলো পরিণত হয়েছে ড্রেনে।

শহরের রামপুর সওদাগর বাড়ির বাসিন্দা ইয়াসির আরাফাত রুবেল বলেন, একসময় খালটি ৩০ ফুটের বেশি প্রশস্ত ছিল। দখল হতে হতে এখন সেটি কোথাও কোথাও ৩ ফুটে ঠেকেছে।  

একই কায়দায় ফেনী শহর থেকে গত দুই দশকে তিন শতাধিক জলাশয় বিলীন হয়ে গেছে। ভরাট হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে খাল ও পানির প্রবাহ। ফায়ার সার্ভিস বলছে, একটি শহর থেকে জলাশয় কমে যাওয়ায় সে শহরের জন্য বড় ঝুঁকি অগ্নিঝুঁকি।  

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, ফেনীর সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুল মাজেদ বলেন, জলাশয়গুলো বিলীন হয়ে যাওয়ায় অগ্নিঝুঁকিতে পড়েছে ফেনী শহর। বড় ধরনের কোনো অগ্নিকাণ্ড হলে নেভানোর পানি পাওয়া যাবে না। এটি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য পানির জন্য একটি প্রাকৃতিক উৎস খুব প্রয়োজন।  

অপরদিকে শহরের রাজাঝির দীঘি, বিজয় সিংহ দীঘিসহ অন্যান্য জলাশয়গুলোর সৌন্দর্যবর্ধন, দখল-দূষণরোধে নানা উদ্যোগের কথা জানান ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী।

গত এক দশকে ফেনী শহর থেকে কতটি পুকুর, জলাশয় ও খাল দখল হয়েছে তা জানাতে না পারলেও দখল-দূষণের অভিযোগ এলে নিয়মতান্ত্রিক প্রন্থায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।  

পরিবেশ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক মোসাম্মৎ শওকত আরা কলি বলেন, আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।  

প্রবাসী আয়ে সমৃদ্ধ অগ্রসরমান এ জনপদকে অগ্নিকাণ্ড ও উষ্ণায়ন থেকে রক্ষা করতে পরিকল্পিতভাবে জলাশয় ও পানির উৎসগুলোকে সংরক্ষণ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে পরিবেশ সচেতন নাগরিকসহ সচেতন মহল।  


   আরও সংবাদ