ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

বরই খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু, কারণ অনুসন্ধান করবে আইইডিসিআর

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১১৪ বার


বরই খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু, কারণ অনুসন্ধান করবে আইইডিসিআর

রাজশাহী: না ধুয়ে বরই খাওয়ার পর ‘অজানা ভাইরাসে’ আক্রান্ত হয়ে পর পর দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে রাজশাহীতে। হঠাৎ করে দুই বোনের এমন মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগও।

 

 

ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম যাচ্ছে রাজশাহী।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন জানিয়েছেন, রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা থেকে রিপোর্ট আসে যে- ওই দুজন শিশুর মৃত্যু নিপাহ ভাইরাসে হয়নি। তাদের নিপাহ ভাইরাসের রিপোর্ট নেগেটিভ। অন্য কয়েকটি নমুনা ভাইরাসের সঙ্গেও ম্যাচ হয়নি। এরপরই এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই দলটি শিগগিরই রাজশাহী আসবে।  

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, নমুনা পরীক্ষা কিছু না পাওয়ার পর তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (প্রশাসন) শরণাপন্ন হন। একটা বিশেষজ্ঞ দলকে রাজশাহী পাঠানোর অনুরোধ জানান।

রামেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, চার থেকে পাঁচজনের বিশেষজ্ঞ দলটি হয়ত কাল-পরশুই রাজশাহী এসে পৌঁছাবেন। তারা প্রথমে রামেক হাসপাতালে আসবেন। পরে এলাকায়ও যাবেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন। আরও বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করবেন। মূলত তারা গভীর অনুসন্ধান চালিয়ে এই বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করবেন।

দুই দিনের ব্যবধানে অজানা ভাইরাসে  মারা যাওয়া ওই দুই শিশুর মধ্যে একজনের নাম মুনতাহা মারিশা ও মুফতাউল মাশিয়া। আগামী ২ মার্চ মুনতাহা মারিশার বয়স হতো দুই বছর। আর আগামী ৩০ মে পাঁচ বছর পূর্ণ হতো মুফতাউল মাশিয়ার। তাদের বাবার নাম মনজুর রহমান (৩৫)। তিনি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) ও তাদের দুই শিশুকন্যা নিয়ে চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ চত্বরে থাকা গাছের বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন তাদের গৃহকর্মী। না ধুয়েই সেই বরই খেয়েছিল এই দম্পতির দুই শিশু সন্তান। এরপর তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে।  

পরদিন বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ ছোট মেয়ে মারিশার শরীরে ভীষণ জ্বর আসে। এ সময় তারা বার বার পানি পান করছিল। দুপুর থেকে বমি শুরু হয়। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে আসছিলেন।  

মাইক্রোবাসেও মারিশা বুকের দুধ পান করে। তবে শহরের অদূরে কাটাখালী এলাকায় মায়ের বুকেই মৃত্যু হয় মারিশার।

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মাশিয়ার শরীরেও জ্বর আসে। একই সঙ্গে শুরু হয় বমি। অবস্থা বেগতিক দেখে দুর্গাপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখান থেকে পরে তাকে রাজশাহী সিএমএইচে নেওয়া হয়। এরপর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাশিয়ার পুরো শরীরেও ছোপ ছোপ কালশিটে দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টার দিকে তাকে রামেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। কিন্তু আইসিইউতে পর্যবেক্ষণ থাকা মাশিয়াও পরদিন শনিবার বিকেলে মারা যায়।

শনিবার বিকেলে নিকট স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পরে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। সেখানে গত বুধবার রাতে ছোট মেয়ে মারিশাকেও দাফন করা হয়েছে।

রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা মনজুর রহমান ও তার স্ত্রী পলি খাতুনের অবস্থা এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল। তবে তাদের পাশাপাশি শয্যায় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শিশুদের বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকরা। তারা দুই মেয়ের দাফনেও অংশ নিতে পারেননি। বর্তমানে এই দম্পতি রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন।


   আরও সংবাদ