ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

আনস্মার্ট বাসে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যাত্রা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১১:০৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৩২ বার


আনস্মার্ট বাসে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যাত্রা

ঢাকা: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়ে টানা চতুর্থবারের বারের মত ক্ষমতায় এসেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।  

স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে বোঝায় প্রযুক্তিনির্ভর জীবনব্যবস্থা, যেখানে সব ধরনের নাগরিক সেবা থেকে শুরু করে সবকিছুই স্মার্টলি করা যাবে।

ভোগান্তি ছাড়া যেখানে প্রতিটি নাগরিক পাবে অধিকারের নিশ্চয়তা এবং কর্তব্য পালনের সুবর্ণ সুযোগ।

 

স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম একটি অনুষঙ্গ হচ্ছে স্মার্ট গণ পরিবহণ ব্যবস্থা। যেখানে ভোগান্তি ছাড়াই নাগরিকরা গণপরিহন ব্যবহার করে দৈনিন্দন কার্যক্রম পরিচালিত করবেন। বর্তমানে ঢাকা মহানগরীসহ আন্তঃজেলায় চলাচলকারী লক্কর ঝক্কর বাস বা আনস্মার্ট যা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে অন্যতম অন্তরায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।  

গণপরিবহনের সৌন্দর্যের ওপর নগরের সৌন্দর্য এবং দেশের ভাবমূর্তি অনেকাংশে নির্ভর করে। কিন্তু খোদ রাজধানীতে চলাচল করা অধিকাংশ বাস রংচটা, লক্কর-ঝক্কর, জরাজীর্ণ, জানালার কাঁচ ভাঙা, কোনটার সামনের আবার কোনটার পিছনের লাইট ভাঙা। কোনও বাসে ফ্যান থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ভাঙা বা অচল থাকতে দেখা যায়। বাস থেকে কালো ধোঁয়াও নির্গমন হয় হরহামেশা।

এসব বাসে অধিকাংশের নেই যথাযত টিকেটিং ব্যবস্থা। সরকারের চাপে মাঝেসাঝে টিকেটিং চালু হলেও কদিন পরপরই তা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া বাসের ড্রাইভার বা হেল্পার কারোরই যাত্রী সেবার ওপর কোনো বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ থাকে না। ফলে যাত্রাপথে সেবা দূরে থাক হয়রানির শিকারই বেশি হন এইসব বাস ব্যবহারকারীরা।

এছাড়াও ঢাকা মহানগরে চলাচলা করা অধিকাংশ বাসের ভিতরের পরিবেশ এবং সিটের কভার অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। এমন ত্রুটিযুক্ত যানবাহনে যাত্রীদের চলাচলে নানা ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ তাদের মর্যাদা নিয়ে এসব পরিবহনে যাতায়াত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। পাশাপাশি এসব ত্রুটিযুক্ত বাস চলাচলের ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা এবং হতাহতের ঘটনা।

সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা-২৫ অনুযায়ী ত্রুটিমুক্ত যানবাহন চলাচলের বাধ্যবাধকতা এবং এর ব্যত্যয়ে আইনের ধারা ৭৫ অনুযায়ী কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান থাকলেও প্রয়োগ খুব কম হতেই দেখা যায়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সম্প্রতি একটি সভায় বলেন, দেশে বর্তমানে ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। এসব যানবাহনের মধ্যে ৭০ শতাংশ রাস্তায় চলাচল করছে, যা দেশের পরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তায় বড় সংকট তৈরি করছে।

লক্কর-ঝক্কর বাস বর্তমান সরকারের অভাবনীয় উন্নয়ন এবং অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে, কোন বিদেশি যখন বাংলাদেশে এসে এসব লক্কর ঝক্কর বাস দেখে, যানজটের মুখোমুখি হয়, তখন সে বর্তমান বদলে যাওয়া বাংলাদেশের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি পায়না জানিয়ে সরকারকে বিষয়টি অনুধাবন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরি বলে জানান যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।  

লক্কর ঝক্কর বাস স্মার্ট বাংলাদেশের অন্তরায় কি না জানতে চাইলে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, অবশ্যই লক্কর ঝক্কর বাস স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সাংঘার্ষিক। এটা একটা স্মার্ট গভার্নেন্সের ফলাফল হতে পারেনা। আমাদের গণপরিবহন বছরের পর বছর পরিত্যাজ্য থেকেছে। উন্নয়নের নামে আমরা মেঘা প্রজেক্টের নামে ধনীতোষন নীতিমালায় প্রাইভেট কার ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। এমন কি আমরা পাঠাও উবারকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হিসেবে বাসকে জনবান্ধব করার জন্য সাধারণ মানুষ অনেক আকুতি মিনতি করেও পায়নি।

তিনি আরও জানান, পরিবহণ কৌশলপত্রে অগ্রাধিকার থাকা সত্ত্বেও সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করিনি। যার ফলে  লক্কর ঝক্কর ছাল ওঠা কুকুরের মত বাসের উপরে নির্ভর করেই আমাদের নগর অভ্যন্তরীণ বাস সার্ভিস চালু রেখেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত মেয়র আনিসুল হককে নগর পরিবহণ ব্যবস্থাপনার যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সেটা এবার অন্তত নতুন কোন নেতৃত্বের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করলে একটি অন্তর্ভুক্তি মূলক নগরীতে পরিণত হবে, যেখানে সকলের অন্তর্ভুক্তি প্রাধান্য পাবে বলেও তিনি জানান।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং এই ধারাবাহিকতার প্রথম ধাপ হিসেবে রাস্তা থেকে লক্কর-ঝক্কর সব বাস উচ্ছেদ করতে হবে হবে বলেও সংশ্লিষ্টদের মতামত।


   আরও সংবাদ