ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১৪:৫৮ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১২৪ বার
ঢাকা: মূল্যস্ফীতি মজুরি বৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণে দেশের জনগণ আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। দেশব্যাপী অর্থনৈতিক কষ্টকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছে না শ্রমজীবি মানুষ। মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভোক্তা। নতুন বছরেও মূল্যস্ফীতিতে কোনো স্বস্তির দেখা মেলেনি।
ঢাকার মিরপুরে বসবাসকারী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জোবায়দুর রহমান হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বাজারে সব নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে আমার বেতন দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। চাহিদা কমিয়ে দিয়েও সংসার চলছে না। তাই উপায় না পেয়ে আমি আমার পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়েছি। এরই মধ্যে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাসের কারণে বেশ কিছু টাকা ঋণের মধ্যেও পড়েছি।
মতিঝিলের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সুমন মিয়া। সকাল থেকে নিজ চাকরির কাজ করেন। বিকেল হলে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন প্যাসেঞ্জারের খোঁজে। দুই-তিনজন রাইডার বহণ করে এ সময়টিকে। কিন্তু তাতেও তার সংসার চলে না। সুমন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি মাসে বেতন দিয়ে বাড়ি ভাড়া এবং সন্তানদের পড়ালেখার ব্যয় মেটাতে গিয়ে হাতে কিছু থাকছে না। তাই অফিস শেষে প্রতিদিন সংসারের বাজার খরচ তুলতে মোটরসাইকেল দিয়ে রাউড শেয়ার করেন। মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর আগের মতো আয়ও হচ্ছে না, ছেলেমেয়ে নিয়ে দারুণ কষ্টে দিন পাড় করছি, ঋণ করেও সংসার চলছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ক্রমবর্ধমান দামের কারণে প্রতিদিনের কষ্টের মুখোমুখি হচ্ছেন নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্য পরিবারগুলো। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের আর্থিক দুরবস্থাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, মজুরির তুলনায় মানুষের ব্যয় দ্রুত হারে বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মাসে গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯.৭০ শতাংশ, গড় মজুরি বৃদ্ধির হার ৭.৬৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এ প্রবণতা গত সাড়ে তিন বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে, মূল্যস্ফীতির হার দ্বিগুণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আয় স্থবির হয়ে পড়েছে।
মূল্যস্ফীতির হার অর্থবছর যথাক্রমে ২০২১-এ ৫. ৫৬ শতাংশ, ২০২২ এ ৬.১৫ শতাংশ এবং ২০২৩ এ ৯. ০২ শতাংশ। যেখানে মজুরি বৃদ্ধির হার ২০২১-এ ৬.১২ শতাংশ, ২০২২ এ ৬.০৬ শতাংশ এবং ২০২৩ এ ৭. ০৪ শতাংশ ছিল।
নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বৃদ্ধি করেছে বাড়িভাড়া। আয়ের বেশির ভাগ অংশ ব্যয় হচ্ছে বাড়ি ভাড়ায়। এখানেও বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর ভাড়াটিয়ারা।
বিবিএসের তথ্য অনুসারে, মূল্যস্ফীতির হার এবং মজুরি বৃদ্ধির হারের মধ্যে প্রায় ২ শতাংশ ব্যবধান রয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার অবশ্য মজুরি বৃদ্ধির হারের তুলনায় দ্রুত গতিতে বাড়ছে।
এদিকে, বিবিএসের হাউস রেন্ট ইনডেক্স (এইচআরআই) অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয় বাড়ি ভাড়ায় ৫.৮৯ শতাংশ বৃদ্ধি প্রকাশ করে, যা গত বছরের তুলনায় ০.০৩ শতাংশ বেশি।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। অর্থাৎ এ সময়ে নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ।
ডলার সংকট ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চাপে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। নিত্যপণ্যে অস্বাভাবিক দাম ও বাড়ীভাড়া বৃদ্ধি কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
তাদের মতে, আমাদের মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে, এটা কমানো দরকার। ডলার সরবরাহ বাড়লে কাঙ্ক্ষিত পণ্য আমদানি করা সহজ হবে। পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাজার মনিটরিং ও জোরদার করতে হবে। নাগরিকদের উপর আর্থিক বোঝা কমাতে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে বলেও মনে করেন তারা।
অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশে সফরে এসে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশনস) অ্যানা বেজার্ড বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এটি নিয়ন্ত্রণ সরকারের উদ্যোগে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাসও জানান তিনি।
তবে এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, রাতারাতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। এটা নিয়ে কাজ চলছে, এজন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আল্টিমেটলি এ ক্রাইসিসটা তো ম্যানেজ করতে হবে।