ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

শত কোটি টাকার ব্যবসা খলিফাপট্টিতে, ব্যাংক নেই একটিও

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২১ মার্চ, ২০২৪ ১৩:৩৮ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১০০ বার


শত কোটি টাকার ব্যবসা খলিফাপট্টিতে, ব্যাংক নেই একটিও

চট্টগ্রাম: শুধু রমজান মৌসুমেই শত কোটি টাকার তৈরি পোশাকের ব্যবসা হয় খলিফাপট্টিতে। চট্টগ্রামের মানুষ দর্জিকে খলিফা নামে ডাকে।

তাই এলাকার নাম হয়ে গেছে খলিফাপট্টি।  

 

নগরের ঘাটফরহাদবেগে বিশেষায়িত এ ক্ষুদ্রশিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার পৌনে একশ’ বছরেও কোনো ব্যাংকের শাখা স্থাপিত হয়নি।

এর ফলে আড়াইশ ছোট ছোট কারখানার উদ্যোক্তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে বাধাসহ ভোগ করছেন নানা অসুবিধা। প্রতিনিয়ত উদ্বেগে থাকেন শঙ্কায়।  

 

শাহিনুর গার্মেন্টসের মালিক সিরাজুল ইসলাম। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে ১৯৬৭ সালে কাজ শিখতে এসেছিলেন। দুই বছর কাজ শিখেছেন। তারপর ব্যবসা শুরু। নিজের কারখানায় কারিগর দিয়ে জামা বানিয়ে শোরুমে বিক্রি করে এখনো দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করছেন খলিফাপট্টিতে।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এখানে যখন প্রথম এসেছিলাম সব ছিল ছনের ছাউনি কাঁচা ঘর। তারপর কিছু ঘর হলো বেড়া দেওয়া টিনের চালার। আরও পরে আধাপাকা ঘর, কারখানা। এখন বহুতল ভবন, বিপণি কেন্দ্র অনেক। কারখানা বেড়েছে, শ্রমিক বা কারিগর বেড়েছে। লেনদেন বেড়েছে। রমজানে কয়েকশ’ কোটি টাকা লেনদেন হয় একদিনে। কিন্তু একটি ব্যাংকের শাখা হলো না। এটাই বড় প্রতিবন্ধকতা আমাদের। বলতে পারেন মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়েছে। কিন্তু এতে খরচ বেশি। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা হলে আমাদের ঋণ পেতে, সঞ্চয় করতে সুবিধা হতো।  

প্রবীণ এ উদ্যোক্তার আক্ষেপে সুর মেলান খলিফাপট্টি শ্রমিক লীগের সভাপতি, লিটন গার্মেন্টসের মালিক মো. জামাল উদ্দিন লিটন। তিনি বলেন, ব্যাংক আছে আন্দরকিল্লায়। তা-ও অনেক ঘুরপথে, অলিগলি পেরিয়ে যেতে হয়। ঝুঁকি থেকেই যায়।  

এবার কেমন বেচাকেনা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশানুরূপ বেচাবিক্রি হচ্ছে না। প্রতিবছর বাকি থাকে অনেক। আমাদের মনে হয়, স্কুল বন্ধ না দিলে শপিং সেন্টার, হাট-বাজারের পোশাকের দোকানে কেনাকাটা জমবে না। চাকরিজীবীরা বেতন-বোনাস পাবেন ২০ রমজানের পর। তখন গ্রামগঞ্জ, শহর নগরে ঈদের কেনাকাটা জমবে। দোকানির লাভ হবে। কিন্তু আমাদের লোকসান। কারণ আমাদের পাইকারি বেচাকেনার সময় এটি।  

তিনি বলেন, প্রতিবছর রমজান মৌসুম আসলে কাঁচামালের দাম বাড়ে। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকটসহ নানা কারণ। তারপরও খলিফাপট্টির পোশাকের দাম কম। অন্তত দোকানিরা কিনে নিয়ে লাভ করতে পারছেন।  

জ্যোতি ফ্যাশনের নুরুল আমিন জানান, খলিফাপট্টির পোশাকের দাম কম, মান ভালো। কুমিল্লা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা-উপজেলায় এখানে তৈরি করা পোশাক যাচ্ছে। গাউন, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিসই বেশি তৈরি হয়। ছোটদের আলিয়া চলছে বেশ।

তিনি জানান, ১০০ টাকার পোশাক এবার দেড়শ’ টাকা হয়েছে। সকাল ১১টা থেকে রাত চারটা পর্যন্ত কারখানাগুলোতে কাজ চলে। আমাদের ৪০-৫০ জন কারিগর ১২টি জুকি মেশিনে কাজ করছেন পালাক্রমে।  

কাপ্তাই সড়কের ধোপপুল থেকে পাইকারি কাপড় কিনতে এসেছেন মো. জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানে রিয়াজউদ্দিন বাজার বা টেরিবাজার থেকে কম দামে কাপড় কিনে ব্যবসা করতে পারি। প্রতিটি আইটেম ৩ বা ৬ পিস কিনতে হয়। মান, ডিজাইন, আকারভেদে দর কষাকষি করে কিনতে পারলে লাভবান হওয়া যাবে।  

কবির সওদাগর কাঁচা মার্কেটে কাপড়ের কারখানা মনির হোসেনের। তিনি বলেন, খলিফাপট্টিতে কাপড়ের দাম কম। আর খলিফাপট্টির মধ্যে আমাদের মার্কেটে সবচেয়ে দাম কম। কারণ কাঁচাঘর ও পেছনের গলির ভেতরে হওয়ায় এখানে অনেক পাইকারি ক্রেতা আসেন না।  

শাহীনুর গার্মেন্টসের সাইফুল ইসলাম বলেন, এখানে আড়াইশ’ ছোট-বড় কারখানা আছে। একেকটি কারখানায় কম করে হলেও ৪-৫ জন করে শ্রমিক। একেকটি পোশাকের দাম ২৫০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা পাইকারিতে। একেকটি ডিজাইনের পোশাকের জন্য ১২ ডজনের থান কাটি আমরা। অর্ডার অনুযায়ী সরবরাহ দিই। আবার নিজেরা ডিজাইন করেও তৈরি করে রাখি।  

মৌমিতা গার্মেন্টসের জসিম উদ্দিন জানান, তাদের আটটি আধুনিক মেশিন আছে। কারিগরও আটজন। এবার আলিয়া, সারারা, গারারা, আফগান ডিভাইডার চলছে বেশি।  

শারমিন গার্মেন্টসের হাবিবুল বাশার বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার প্রতি গজে ৫০-৬০ টাকা বেশি। একসময় হাতে, পায়ে মেশিন চালানো হলেও এখন সব আধুনিক বৈদ্যুতিক মেশিন। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, ঘরভাড়া বেড়েছে, কাঁচামালের দাম বেড়েছে। দক্ষ কারিগরদের মজুরি বেড়েছে। এখন ৪০০ টাকা খরচ করে ৫০০ টাকাও বেচতে কষ্ট হয়।  

খলিফাপট্টিতে পুরুষ কারিগরদের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করেন। তাদের একজন পারুল। ২ মাস ধরে একটি কারখানায় কাজ করছেন। তিনি জানান, আগে গার্মেন্টসে কাজ করে বেতন পেতেন ৬ হাজার। খলিফাপট্টিতে পাচ্ছেন ৯ হাজার।  

জনশ্রুতি রয়েছে, ১৯৪৭ সালের পর আইয়ুব আলী নামের নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এক ফেরিওয়ালা নিজের গ্রামের কিছু লোকজন এনে খলিফাপট্টিতে কাপড় তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। এখানকার কারখানার বেশিরভাগ শ্রমিক নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার। কারিগররা একেকটি কারখানার মালিকের সঙ্গে এক বছরের চুক্তি করেন। শতাধিক আলাদা শো-রুম থাকলেও বেশিরভাগ কারখানা, শোরুম একসঙ্গেই। সেখানেই তাদের থাকা-খাওয়া চলে।  


   আরও সংবাদ