ঢাকা, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ঈদ আনন্দ নেই স্বজনহারা জেলে পরিবারগুলোতে

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১১ এপ্রিল, ২০২৪ ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৯ বার


ঈদ আনন্দ নেই স্বজনহারা জেলে পরিবারগুলোতে

বাগেরহাট: ঈদ আনন্দ নেই বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা ও চারাখালি গ্রামের স্বজনহারা জেলে পরিবারগুলোতে। একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যদের হারিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে এসব পরিবারের।

হারানো স্বজনদের স্মৃতিই বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন তাদের। সরকার ও বিত্তবানদের সহযোগিতা চায় স্বজনহারা জেলে পরিবারগুলো।

 

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে বগা জেলে পল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, টিনশেড ঘরের বারান্দায় প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে গভীর মনোযোগে বাবার ছবি দেখছে ১০ বছর বয়সী হামিম। ঈদে অন্য শিশুরা বাবাদের সান্নিধ্য পেলেও, সে সুযোগ নেই তার।  

নয় বছর আগে মাত্র নয় মাস বয়স ছিল হামিমের। তখন তার বাবা অলিয়ার রহমান সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফেরেননি। এরপর থেকেই বাবার ছবিই ভরসা হামিমের।  

কচুয়া উপজেলার বগা ও চারাখালি গ্রামের জেলেপল্লীতে অন্তত ৩০টি পরিবারের গল্প এমনই। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফেরেননি এসব পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যরা।

জীর্ণশীর্ণ ঘরে বসবাস আর, অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে সাগরে প্রাণ হারানো জেলেদের পরিবারের। তীব্র আর্থিক সংকটে ঈদ আনন্দ আসে না এসব পরিবারে। উৎসবের রং লাগে না পরিবারগুলোতে।
 
সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মারা যাওয়া মহিদুল মোল্লার মা হাছিয়া বেগম বলেন, সাগরে গিয়ে আমার একমাত্র ছেলে মারা গেছে। তিনটি ছোট ছোট সন্তান রেখে গেছে। এরপর থেকে কীভাবে যে আমাদের দিন কাটে, তা কাউকে বোঝানো যাবে না। কখনও খেয়ে, আবার কখনও না খেয়ে যায় আমাদের জীবন।

মহিদুলের স্ত্রী মুরশিদা বেগম বলেন, আসলে আমাদের দেখার কেউ নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পরে আর কেউ খোঁজও নেয় না। বেঁচে থাকলে ছেলেদের কখনো সাগরে পাঠাব না, বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মধ্যবয়সী এ নারী।

অলিয়ার রহমানের স্ত্রী নুরুন নাহার বেগম বলেন, গরিবের আবার ঈদ কীসের। তিন বেলা খেতেই পারি না, আবার ঈদ। ছোট ছেলেকে নয় মাসের রেখে স্বামী মারা গেছে। ছেলের বয়স ১০ বছর। কবে যে ওরে ঈদে নতুন জামা দিয়েছি, মনে নেই।

সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলে আবুল হোসেন বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আসলে যা পাই, তাতে সঞ্চয় করার কোনো উপায় থাকে না। এ অবস্থায় যে জেলেরা মারা যান, তাদের পরিবার খুবই সংকটে পড়ে। কী যে কষ্টে থাকে পরিবারগুলো, তা বলে শেষ করা যাবে না।

মো. আইয়ুব আলী নামের এক জেলে বলেন, সাগরে আমার দুই ভাই মারা গেছেন। এরপরও সাগরে যাই। কারণ অন্য কোনো কাজ শিখিনি। লেখাপড়া জানি না। আর্থিক কষ্ট ও জীবনের ঝুঁকি থাকার পরও বংশ পরম্পরায় বাধ্য হয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাই। হয়ত সাগরেই যাবে জীবন।
 
বগা ও চারাখালি গ্রামে চার শতাধিক জেলে থাকলেও সরকারি সুবিধা হিসেবে চাল পান মাত্র ১৫৩ জন। তাদের সরকারি সহযোগিতা দেওয়ার দাবি জানান মৎস্যজীবী নেতা ইব্রাহিম আমানি।

তিনি বলেন, আসলে দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকার মানুষ সাগরে মাছ ধরে জীবনযাপন করেন। কিন্তু তারা তেমন কোনো সহযোগিতা পান না। এলাকার সব জেলেকে সরকারি সহযোগিতার আওতায় আনা উচিত।

জেলে ও মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ২০১৫ সালে ১৯ জন এবং ২০২২ সালে ৮ জনসহ গত ১০ বছরে বগা ও চারাখালি গ্রামের অন্তত ৩০ জন জেলে প্রাণ হারিয়েছেন ।

কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা আক্তার বলেন, বগা ও চারাখালি এলাকার জেলেরা আর্থিক কষ্টে থাকেন। সব জেলে সরকারি চালও পান না। ২০১৫ সালে মারা যাওয়া ১৯ জনের পরিবার এখনো সরকারি সহযোগিতা পায়নি।  

জেলেদের কার্ড বাড়ানো ও নিহত জেলেদের সরকারি সহযোগিতার জন্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।


   আরও সংবাদ