ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

বলীখেলা ও মেলার গরম চট্টগ্রামে

স্টাফ রিপোর্টার


প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৯৪ বার


বলীখেলা ও মেলার গরম চট্টগ্রামে

চট্টগ্রাম: জব্বারের বলীখেলার ১১৫তম আসর আজ বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল)। প্রতি বছর ১২ বৈশাখ বিকেলে ঐতিহ্যবাহী এ খেলা হয়।

খেলা ঘিরে কোতোয়ালী, লালদীঘি, সিনেমা প্যালেস, আন্দরকিল্লার এক বর্গকিলোমিটারজুড়ে বসেছে বৈশাখী মেলা।  

 

এ মেলার বিশেষত্ব হচ্ছে- বৃহত্তর চট্টগ্রামে গৃহস্থরা মেলা থেকে সংসারে নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি সামগ্রী কেনেন।

একটা কথা প্রচলিত আছে - সুঁই থেকে ফুল শয্যার খাটও মেলে লালদীঘির এ মেলায়। কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা হয় মেলায়।

 

খেলার আগের দিন ও পরের দিন মিলিয়ে তিনদিনের বৈশাখী মেলা হলেও এবার বেশ কয়েকদিন আগেই বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। সকাল ও বিকেলে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা বেশি। দিনের বেলা বৈশাখী হাওয়া, তাপদাহ, সংসারের কাজের চাপে ব্যস্ত নারীরা মেলায় আসেন রাতে। নিরিবিলিতে কেনাকাটা করেন তারা। সারা রাত চলে বেচাকেনা। মেলায় আসা ক্রেতাদের সুবিধার্থে ট্রাফিক বিভাগ গাড়ি চলাচলে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বেশি বিক্রি হচ্ছে হাতপাখা ও পাহাড়ি ফুলঝাড়ু। দেশে তালপাতা, বাঁশ, বেত, কাপড় দিয়ে যত রকমের বৈচিত্র্যময় নকশার হাতপাখা আছে তা মেলাতে মিলছে। গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে হাতপাখার চাহিদা বেশি এবার।  

রাত ১১টায় মোমিন রোডে কথা হয় মেলাফেরত হামিদ উল্লাহর সঙ্গে। হাতে একজোড় ফুলঝাড়ু। বললেন, আড়াইশ টাকা নিয়েছে।  

সিনেমা প্যালেস এলাকায় সস্তা কাঠের তৈরি আসবাবপত্রের বিপুল পসরা। বেতের তৈরি চমৎকার সব আসবাব, দোলনা, শোপিস মিলছে লালদীঘির দক্ষিণ পশ্চিম কোণে। উত্তর পশ্চিম কোণে চারার মেলা। পাশেই শিমুল তুলার হাট।  

মেলার প্রধান আকর্ষণ এখন মাটির তৈরি দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের ব্যাংক, ফুলদানি, হাঁড়ি, কলসি, জগ, গ্লাস, পানি ঠাণ্ডা রাখার পাত্র, পুতুল, খেলনা, দেবদেবী ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি, গহনা, শোপিস ইত্যাদির। সিনেমা প্যালেস থেকে হাজারী লেন সড়কের দুইপাশে এবং লালদীঘির পেট্রলপাম্প ও জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে মৃৎশিল্প সামগ্রীর মেলা। প্রযুক্তির কল্যাণে দিন দিন ডিজাইন যেমন হচ্ছে হৃদয়কাড়া তেমনি টেকসইও। দামও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।  

কুটির শিল্পসামগ্রী বিশেষ করে বাঁশ, বেত, সুতুলির তৈরি ঝুলন্ত বাতির ফ্রেম, রশির তৈরি দোলনা, খেলনা, কাঠের পুতুল, নৌকা, একতারা, দোতারা, ঢোল, ফুলদানি, গহনার কদর বাড়ছে। এসব দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তরুণরা।

যথারীতি রেশমি চুড়ি, কাচের চুড়ি, পায়েল, কানের দুল, গলার সেটের স্টল আছে পুরো মেলা জুড়ে। খই, গজা, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টান্ন, চনাচুরের মুখরোচক খাবারের শতাধিক স্টল আছে লালদীঘির মোড়েই।  

মেলায় আসা গৃহিণী উম্মে সালমা জানান, দা, বঁটি, ছুরি, শীতলপাটি থেকে আস্ত খাট পালঙ্ক পর্যন্ত সংসারে যা যা লাগে সবই আছে এ মেলায়। এ মেলার জন্য চাঁটগাইয়ারা সারা বছর অপেক্ষা করে। তবে দর-কষাকষি করে কিনতে হবে।  

মূল লালদীঘির মাঠের উত্তরপ্রান্তে নাগরদোলা বসেছে একসারি। সেখানেও ভিড় কিশোর তরুণদের।  

বিক্রেতারা জানান, মেলায় লোকসমাগম যেমন বেশি দোকানিও বেশি। তবে ক্রেতার চেয়ে বেড়াতে আসা মানুষ বেশি। অনেকে আসছেন শুধু ছবি তুলতে কিংবা ভিডিও করতে। তারপরও খুশি আমরা।  

আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী বলেন, বলী খেলার জন্য মঞ্চ প্রস্তুত। বলীরা নাম নিবন্ধন করছেন। আজ বলীখেলার দিন। কাল ২৬ এপ্রিল রাত পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা চলবে।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মেলা কমিটি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা কোনো উদ্যোক্তা, বেপারী, দোকানির কাছ থেকে চাঁদা নেয় না। এ বিষয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। কেউ চাঁদা দাবি করলে পুলিশে সোপর্দ করার অনুরোধ জানাই।  

১৯০৯ সালে বকশিরহাটের স্থানীয় ধনী বণিক বদরপাতি এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার সওদাগর বলীখেলা প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। জানা যায়, এই ব্যবসায়ীর শুধু বলীখেলার প্রতি ভালোবাসা ছিল না বরং তার মধ্যে ছিল দেশের প্রতি ভালোবাসা। ওই সময়টায় ভারতে ব্রিটিশ শাসনে অবসানে চট্টগ্রামে দানা বাঁধছিল আন্দোলন। পরে তার নাম অনুসারেই এই আয়োজনের নামকরণ হয়েছে।


   আরও সংবাদ