ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১৪:২৪ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৮৪ বার
ধামইরহাটে অতিরিক্ত গরমে বাডছে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগী, সংকটে শয্যা ও ডাক্তার।
ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি
নওগাঁর ধামইরহাটে চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত দাবদাহের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। এতে করে শিশু বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষদের মধ্যে দেখা দিয়েছে জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের উপসর্গ।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে বারোটার সময় ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ১৬ মাসের শিশু আমিনা। তার মা রোকসানা বলেন, চার দিন ধরে ডায়রিয়া এবং বোমনের উপসর্গ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান আমিনাকে। ডাক্তারদের নিবিড় পরিচর্যায় কিছুটা সুস্থ হলেও ডায়রিয়া ও বোমনের কারণে বাচ্চার শরীর ভীষণ দুর্বল।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধিকাংশ শিশুর অবস্থাই আমিনার মতো। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে অসুস্থ হওয়া শিশুদের নিয়ে বাবা মায়েরা হাসপাতালে ছুটে আসছেন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। বাদ যাননি ৩৫ থেকে ৬০ বছর বয়সি নারী পুরুষেরাও। অন্যদিকে অভিজ্ঞ ডাক্তার ও শয্যা সংকটে হাসপাতালের কক্ষের বাহিরে ও বারান্দার মেঝেতে শিশুসহ অনেক রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত তাপদাহে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ২৮ তারিখ দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ৮০০৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। শিশু ১১২ জন, বয়স্ক ছেলে ২৬৪ জন এবং মহিলাদের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৪৩২ জন। এদের মধ্যে অধিকাংশ ডায়রিয়া, বুমি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিউমোনিয়া, শারীরিক দুর্বলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা বেশি।
আরও জানা গেছে, হাসপাতালে মোট শয্যা সংখ্যা রয়েছে ৫০টি। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পুরনো আরো ১৫ টি বেড যোগ করা হয়েছে। বর্তমানে ভর্তি হওয়া ৮০ জন রোগীর মধ্যে বাকিদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে গত দুই সপ্তাহে ১০০ জন রোগী সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অফিসার বলেন, হাসপাতালে কনসালটেন্টসহ ২৭ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও জনবল সংকটের কারণে ৪ জন চিকিৎসক নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। একদিকে চিকিৎসকসহ অভিজ্ঞ জনবল সংকট অন্যদিকে শয্যা সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরোজমিনে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা রোগীরা গরমে হাঁসফাঁস করছিলেন। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে অসুস্থ হওয়া শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়েরা ছুটে আসছেন হাসপাতালে। অন্যদিকে অতিরিক্ত গরমের কারণে সেবা নিতে আসা অনেক রোগীর স্বজনকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে দেখা যায়।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে হাসপাতালে মেডিসিনসহ সব বিভাগে অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। অভিজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অনেকে প্রাথমিক সেবা নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট, বগুড়া ও রাজশাহী যেতে দেখা গেছে।
দক্ষিণ চকযদু পৌরসভা এলাকার চানমিয়া বলেন, বয়স প্রায় ৮০ ছুই ছুই। দীর্ঘদিন ধরে হাই প্রেসার আর হার্টের সমস্যা। তীব্র তাপদাহের কারণে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর থেকে এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলার ফারসিপাড়া এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে জ্বর কমছে না। শরীর ভীষণ দুর্বল। এ কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েও জ্বর ভালো হচ্ছে না। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এমন হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা অফিসার ডাক্তার স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, 'আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে অতিরিক্ত তাপদাহ চলছে। শিশুসহ বিভিন্ন বয়সি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে না হাওয়ায় ভালো। বাহিরে গেলে ক্যাপ অথবা টুপি পড়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ঘন ঘন গোসল ও নিয়মিত ঠান্ডা পানি পান করাসহ অতিরিক্ত ঘাম বা ডিহাইড্রেশন দেখা দিলে পরিমান মত স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত তাপদাহে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।'