ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ মে, ২০২৪ ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১২০ বার
ধামইরহাট, (নওগাঁ) প্রতিনিধি
আরাফাত হোসেন। নওগাঁর ধামইরহাটে চকময়রাম সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। আরাফাতের বাবা একজন পান ব্যাবসায়ী। মা গৃহীনি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অনান্য শিক্ষকদের সহযোগিতায় বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে ১৩০০ মার্কসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২৪৫ মার্কস পেয়ে উপজেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে সে। ভালো ফলের খবর পেয়ে বাবা ও মায়ের মুখে গর্বের হাসি আর চোখে বাধভাঙ্গা আনন্দ অশ্রু। যেনো ছেলেকে ডাক্তার বানানোর প্রথম ধাপ পুর্ণ হলো তাদের।
তবে ভালো কলেজে ভর্তি এবং ছেলের পড়ালেখার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে আরাফাতের পরিবারের। এমন অবস্থায় কিংকর্তব্যমিমূর হয়ে পড়েছেন বাবা আব্দুল খালেক। অর্থের অভাবে ছেলের পড়ালেখা যেনো বন্ধ হয়ে না যায় একারণে পরিবারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা কামনা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) স্থানীয় প্রতিবেশী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদে সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয় পান ব্যাবসায়ী আব্দুল খালেককে। অভাবের সংসারে ব্যাবসা থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে ছেলেকে ডাক্তার বানানোর ইচ্ছে আরাফাত হোসেনের বাবা মার। বাবা মার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে পরিবারের অভাব অনটনও দমাতে পারেনি মেধাবি শিক্ষার্থী আরাফাতকে। তার বিজয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুরাও খুশিতে আত্মহারা হয়েছে।
আরাফাতের বাবা আব্দুল খালেক বলেন, পড়ালেখায় দারিদ্র্যতার ছোঁয়া যেন স্পর্শ করতে না পারে একারণে পান বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ ও আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে কোনরকমে সংসার চালাতে হয়। এতে করে ছেলের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। এরসাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ছেলেকে ভালো কলেজে ভর্তি করার বাড়তি চাপ।
এ বিষয়ে মেধাবি শিক্ষার্থী আরাফাতের সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, অর্থের অভাবে প্রাইভেট পরতে না পারলেও বাবা ও মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে ডাক্তার হতে চায় সে। একারণে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুল ছুটি শেষে পানের দোকানে বসে বাবাকে সহযোগীতা করতো সে।
পরবর্তী প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে আরাফাত সময়ের আলোকে জানায়, প্রথম পছন্দ ঢাকা নটরডেম কলেজ। এরপর রাজশাহী ও বগুড়া আজিজুল হক কলেজ। এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করার পর ঢাকা মেডিক্যালে পড়াশুনার মধ্য দিয়ে একজন বড়ো ডাক্তার হয়ে দেশের সেবা করার ইচ্ছে রয়েছে তার।
আরাফাতের মা আরমিন বেগম বলেন, 'ছেলে আমাকে বলে, 'মা তোমার স্বপ্নই আমার স্বপ্ন। তোমার স্বপ্নকে পূরণ করতে আমাকে অনেক দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করতে হবে। ডাক্তার হয়ে দেশের সেবা করতে হবে। এবং উপার্জিত অর্থ দিয়ে বাবার সীমিত আয়ের ব্যাবসাকে সমৃদ্ধি করতে চায় সে।'
চকময়রাম সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম খেলাল-ই রব্বানী বলেন, স্কুলে সে মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। রোল নম্বর ছিল দুই। এবছর এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলায় সর্বোচ্চ নম্বর (জিপিএ-৫) পেয়ে বিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আরাফাতের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন যেনো শত ভাগ পূর্ণ হয় তার জন্য অফুরন্ত দোয়া ও সফলতা কামনা করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আসমা খাতুন বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী আরাফাত এসএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর (জিপিএ-৫) পেয়ে উপজেলায় প্রথম হওয়ার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। ওই শিক্ষার্থীর পারিবারিক অবস্থাও খুবই অসচ্ছল। সে জেনো উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারে এবং সামনের দিনগুলোতে পড়াশোনার যেনো কোন ব্যাঘাত না ঘটে সে কারণে উপজেলা প্রশাসন সবসময় আরাফাত এবং তার পরিবারের পাশে থেকে সহযোগিতা করবে।