ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০ জুন, ২০২৪ ১৬:৪২ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১১৯ বার
ফরিদপুর: ফরিদপুরের চরাঞ্চলে বাদাম তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। তবে চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় ভয়ে ক্ষেতে যাচ্ছেন না শ্রমিকরা, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষেত থেকে বাদাম তুলছেন জমির মালিকরা।
চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম অবলম্বন বাদাম, তাই সারা বছরের সংসারের খরচ চালাতে বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে বাদাম তুলতে হচ্ছে তাদের।
বাদাম চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, বাদাম লাগানোর সময় ১২-১৫ হাজার টাকা মণ দরে বাদাম কিনে লাগাতে হয়েছে। প্রতি বিঘাতে খরচ হয়েছে ১৫-১৮ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল ১০-১৫ মণ, কিন্তু এ বছর ফলন হয়েছে ৫-৮ মণ। দাম ভালো না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবো আমরা।
আরেক বাদাম চাষি ছালাম শেখ বলেন, সম্প্রতি রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রব বেশি দেখা দিয়েছে। গত দুমাসে সাপের ছোবলে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ কারণে কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ভয়ে কেউ ক্ষেতে নামতে চাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজেদের বাদাম তুলতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের অন্যতম আয়ের উৎস বাদাম চাষাবাদ। বাদামের ওপরই সারা বছরের সংসার খরচ চলে, সে কারণে ঝুঁকি নিয়েই বাদাম তুলতে হচ্ছে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্ষেতে বাদাম তুলতে এসেছেন আসমা আক্তার। তিনি বলেন, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাদামের ফলন এবার ভালো হয়নি। তারপর আবার পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ক্ষেতে পানি ঢুকে গেছে। যে কারণে অপরিপক্ব বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। কেননা, এখন যাও পাওয়া যাবে, পানিতে ডুবে গেলে কিছুই পাওয়া যাবে না। তাই স্বামীর সঙ্গে ক্ষেতে বাদাম তুলতে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, সাপের ভয়ে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অনেককে বলেছি কিন্তু কেউ রাজি হননি। এ কারণে পরিবারের সবাই মিলে বাদাম তুলছি। কী করব, বাদামই আমাদের একমাত্র অবলম্বন। তাও এবার ফলন ভালো না হওয়ায় মন খারাপ, তবে দাম যদি একটু বেশি পাই তাহলে লোকসান হবে না। বাদাম থেকে যা আয় হয়, তা দিয়েই সারা বছরের সংসার চলে।
করিমন বেগম বলেন, আমি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কাজ করি। বাদাম তোলার সময় প্রতিবছরই বাদাম তোলার কাজ করি। প্রতিদিন বেতন ভালো পাই। এবছরও বাদাম তুলতে আইছি, কিন্তু ভয় লাগে সাপের।
তারপরও এসেছেন কেন প্রশ্নের জবাবে করিমন বলেন, বাড়িতে কাজ করার চেয়ে টাকা বেশি পাই তাই আইছি। বয়স হয়েছে। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে আইছি। যদি সাপের ছোবলে মরে যাই যাব, কিন্তু কাজে না আইলে খাব কি, চলব কীভাবে। ঘরে বসে থাকলেতো আর কেউ খাবার দেবে না। দু-মুঠো খাবারের জন্যই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাদাম ক্ষেতে এসেছি।
ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু বলেন, এবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বাদাম এবং তিলের ফলন ভালো হয়নি। পাশাপাশি পদ্মার পানি বাড়ায় নদী সংলগ্ন এলাকার বাদাম ক্ষেতে পানি প্রবেশ করেছে। তাড়াহুড়ো করেই বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে চাষিদের। এছাড়া আরেকটি সমস্যা রাসেলস ভাইপার সাপের কারণেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। চরাঞ্চলের বেশ কয়েকজন সাপের ছোবলে মারা যাওয়ায় অনেকে ভয়ে ক্ষেতে যেতে চাচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও যখন চরাঞ্চলে যাই তখন ভয়ে ভয়ে যাই। রাসেলস ভাইপার সাপ এমনিতে দেখা যায় না। হঠাৎ করেই চলে আসে। অন্য সাপ মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়, কিন্তু রাসেলস ভাইপার মানুষ দেখলে এগিয়ে আসে। আমরাও খুব চিন্তিত। উপজেলার মাসিক সভায় বিষয়টি সবাইকে অবগত করব।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় এবার ৪ হাজার ৫৭২ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ করা হয়। উৎপাদন হয়েছে ৮ হাজার ২২৯ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮২ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, যারা আগাম বাদাম লাগিয়েছিলেন তাদের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। তবে পরে যারা বাদাম লাগিয়েছে পদ্মার পানি বাড়ায় তাদের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে তার পরিমাণ খুবই সামান্য। চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বৃষ্টির মধ্যে যাতে বাদাম না তোলে, রৌদ্রের মধ্যে বাদাম তুললে কালারটা ভালো থাকবে।
কৃষিবিদ আরও বলেন, এছাড়া রাসেলস ভাইপার সাপ থেকে বাঁচতে কৃষকদের ক্ষেতে মশার কয়েল জ্বালিয়ে কাজ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ ধোয়া সাপের চোখে গেলে সেখান থেকে দ্রুত তারা সরে যায়। কৃষকরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সফলও হচ্ছেন। তাছাড়া চাষিদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।