ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ জুন, ২০২৪ ১১:২৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৮৭ বার
সিলেট: দুর্ভোগের মধ্যেও এলো দুঃসংবাদ। বন্যার মধ্যেও ফের ভারী বর্ষণের খবর আতঙ্ক বাড়াচ্ছে সিলেটবাসীর মনে।
বন্যায় পানিবন্দি মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। সুরমার তীরবর্তী এলাকার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কুশিয়ারা তীরবর্তী মানুষ এখনও আছেন দুর্ভোগে।
কুশিয়ারা নদীর পানি স্তব্ধ হয়ে আছে। গত তিনদিন বৃষ্টি না হলেও মন্থর গতিতে মাত্র এক সেন্টিমিটার করে পানি কমেছে এ নদীতে। এ অবস্থায় সোমবার সকালের বৃষ্টিতে সিলেটজুড়ে আবারও আতঙ্ক দেখা দেয়।
এর মধ্যেও আগামী ২৮ জুন থেকে সিলেটে আবার ভারী বর্ষণের দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। বন্যার মধ্যে এমন পূর্বাভাসে আরও ভীতি কাজ করছে এ অঞ্চলের মানুষের মনে। ভারী বর্ষণ হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নগরজুড়ে ফের জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সিলেটে গত তিন দিন বৃষ্টি না হওয়া কিংবা সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও প্রতি ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার করে পানি কমতে শুরু করেছিল। সুরমা, কুশিয়ারা নদীসহ অন্যান্য নদীর সবকটি পয়েন্টেই পানি কমতে থাকে। তিন দিনে ৪০ থেকে ৫৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি কমে। কিন্তু সোমবার সকালে সিলেটে বৃষ্টিপাতের কারণে থমকে গেছে বিভিন্ন পয়েন্টের পানি প্রবাহ। কোথাও পানি কমা অপরিবর্তিত রয়েছে, আবারও কোথাও বেড়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
সিলেটের আবহাওয়াবিদ সজীব হোসাইনের দেওয়া তথ্যমতে, সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর আগের দিন রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ২ মিলিমিটার।
তবে ২৮ জুন থেকে সিলেটে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারী বর্ষণে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এজন্য জেলা প্রশাসন থেকে আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্যমতে, এখনও সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর চার পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সকালে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার, দুপুরে ১২টায় ও বিকেল ৩টায় ১৯ সেন্টিমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহমান ছিল।
তবে সিলেট পয়েন্টে সন্ধ্যা ৬টায় সুরমার পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহমান ছিল। এদিন সকালে সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি ১০ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহমান ছিল। সন্ধ্যা ৬টায় আরও ৫ পয়েন্ট কমে ১০ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটারে গিয়ে দাঁড়ায়।
এছাড়া অমলসিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি সকালে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহমান ছিল। বিকেল ৩টায় আরও ৩ পয়েন্ট বেড়ে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর সন্ধ্যা ৬টায় ১ এক পয়েন্ট কমে ৩৬ সেন্টিমিটারে গিয়ে দাঁড়ায়।
তবে কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরে সন্ধ্যা ৬টায় ৯৭ সেন্টিমিটারে এসে দাঁড়ায়। শেরপুর পয়েন্টে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর বিকেল ৩টায় ৪ সেন্টিমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ৩ সেন্টিমিটারে নেমে আসে।
এদিকে, রোববার সারা দিন কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহমান ছিল। একদিন পর সোমবার মাত্র ২ সেন্টিমিটার কমেছে। ফলে ওই উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল থেকে শুরু করে হাটবাজার, রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর এখনও পানিতে তলিয়ে আছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে এক লাখ ১৪ হাজার ২৮৬ জনের জনসংখ্যার মধ্যে ১৮ হাজার ৭৫৬ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। ৪৪টি আশ্রয় কেন্দ্রের ১৩টিতে এখনও ১ হাজার ৮৭২ জন মানুষ আশ্রয়ে রয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের হালনাগাদ তথ্যমতে, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের ২টি ওয়ার্ড এবং ৫টি পৌরসভাসহ ১৩টি উপজেলার ১১০টি ইউনিয়নের এক হাজার ৩৫৫টি গ্রাম প্লাবিত রয়েছে। মহানগরসহ জেলার ৪১ লাখ ১১ হাজার ৮৩৫ জনের জনসংখ্যার মধ্যে বন্যা আক্রান্ত রয়েছেন ৭ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৬ জন। আর মহানগরসহ জেলার ৭৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রের ২৫৮টিতে ১৩ হাজার ১৫৪ জন অবস্থান করছেন।
বন্যা আক্রান্তদের অনেকে জানান, বন্যার পানি কমে যাওয়ায় বাড়ি ঘরে ফিরলেও ভারী বর্ষণ হলে আবারও আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে আসতে হবে। কিন্তু গবাদি পশু ও মালামাল টেনে নিয়ে আসা যাওয়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সেইসঙ্গে বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আর নগরের প্লাবিত এলাকাগুলোর বাসা-বাড়িতে সেফটিক ট্যাংকে ময়লা পানি প্রবেশ করায় খাবার পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করলেও তা অপ্রতুল বলেও জানান বন্যা আক্রান্তরা।