ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ জুন, ২০২৪ ১৭:৫৬ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৪০ বার
ঢাকা: আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে চাকরি হারালেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন শিথিল।
অভিনেত্রী পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন ও স্ত্রীর অবর্তমানে রাজারবাগে নিজ বাসায় অভিনেত্রীকে নিয়ে গিয়ে ১৭ ঘণ্টা অবস্থানের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।
সেই তদন্তের প্রেক্ষিতে চাকরি হারালেন এডিসি গোলাম সাকলায়েন।
পরীমনির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক চলাকালে এডিসি গোলাম সাকলায়েন শিথিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার/ অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) দায়িত্বে ছিলেন। তখন পরীমনির মামলার তদন্ত করছিলেন তিনি। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসার পরে তাকে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ থেকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) বদলি করা হয়। এরপর, তাকে ঝিনাইদহ ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, পরীমনিকাণ্ডে বিভাগীয় মামলায় এডিসি সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খালা-২ শাখা থেকে উপসচিব রোকেয়া পারভিন জুঁই স্বাক্ষরিত এক আদেশে গোলাম সাকলায়েনকে ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে চাকরি থেকে ‘বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান’ পরামর্শের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়।
ওই আদেশে বলা হয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের এডিসি থাকাকালে অভিনেত্রী পরীমনির সঙ্গে পরিচয়, যোগাযোগ শুরু হয় গোলাম সাকলায়েনের। তিনি পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন। পুলিশ অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা থেকে দেওয়া তার ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৪ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) পরীমনির বাসায় অবস্থান করেছেন তৎকালীন ডিবির এই কর্মকর্তা।
২০২১ সালের ১ আগস্ট পূর্বপরিকল্পনা ও সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে তার স্ত্রী না থাকা অবস্থায় অভিনেত্রী পরীমনি তার রাজারবাগস্থ সরকারি বাসায় যান। সেখানে তারা প্রায় ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করেন। গত ২ আগস্ট রাত দেড়টায় বাসা ত্যাগ করেন। তার ও পরীমনির সম্পর্কের বিষয়টি বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায়, টেলিভিশনে ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে।
গোলাম সাকলায়েন ডিবি গুলশান বিভাগের এডিসি থাকাকালে পরীমনির সঙ্গে ঘটনাক্রমে দেখা হয় এবং যোগাযোগ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন।
পুলিশ অধিদপ্তরের স্মারকে বলা হয়, পরীমনির মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট (সিআইডি কর্তৃক মামলার আলামত হিসেবে জব্দকৃত) পর্যালোচনায় দেখা যায়, তার ও পরীমনির আদান-প্রদানকৃত মেসেজগুলো ২৯ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট সামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনির ফেসবুক আইডি ও গোলাম সাকলায়েন শিথিল নামে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথোপকথন এবং তাদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে (১১ জুলাই-৪ আগস্ট ২০২১) কথোপকথন সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনে স্থাপিত কোনো সম্পর্কের নয়, বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক।
২ সেপ্টেম্বর ২০২১ সিআইডির স্মারক নং-আইটি-ফরেনসিক/১৫৭৩ রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১ আগস্ট ২০২১ ভোর ৬টা থেকে ২ আগস্ট রাত ৩টা পর্যন্ত রাজারবাগ মধুমতি পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে অভিনেত্রী পরীমনির যাতায়াতের ধারণকৃত সিসিটিভি ফুটেজের ফরেনসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে ও সাক্ষীদের জবানবন্দি অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে, গত ১ আগস্ট, ২০২১ তারিখে পূর্বপরিকল্পনা ও সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে তার স্ত্রী না থাকা অবস্থায় অভিনেত্রী পরীমনি তার রাজারবাগস্থ সরকারি বাসায় যান এবং প্রায় ১৭ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে ২ আগস্ট রাত ১টা ৩০ মিনিটে বাসা ত্যাগ করেন।
সাকলায়ের ও অভিনেত্রী পরীমনির সম্পর্কের বিষয়টি বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায়, টেলিভিশনে ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং যার ফলে জনমনে এ বিষয়ে নানারূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার জন্ম দেয়।
গোলাম সাকলায়েন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে সরকারি দায়িত্বের বাইরে অভিনেত্রী পরীমনির সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। তিনি বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক হওয়া সত্ত্বেও পরীমনির সঙ্গে তার বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, পরীমনির সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন ও নিজের সরকারি বাসভবনে নিজ স্ত্রীর অবর্তমানে সময় কাটানোর মতো ঘটনা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তা প্রচারিত হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। উল্লেখিত অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।
গোলাম সাকলায়েনের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’-এর দায়ে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করা হয় (সংলাপ-ক)। অভিযুক্ত কর্মকর্তা আনীত অভিযোগের প্রদানপূর্বক ব্যক্তিগত শুনানি প্রার্থনা করেন (সংলাপ-খ)।
বিভাগীয় মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব (প্রশাসন) হায়াত-উদ-দৌলা খাঁনকে বলা হয় (সংলাগ-গ)। তদন্তে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় (সংলাগ-ঘ)।
পুলিশ অধিদপ্তরের স্মারকে আরও বলা হয়, তদন্ত প্রতিবেদন ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি পর্যালোচনাপূর্বক অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গুরুদণ্ডের আওতায় কেন তাকে ‘চাকুরি হতে বরখাস্তকরণ’ করা হবে না সে মর্মে দ্বিতীয় কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়। জবাবে তিনি ‘চাকুরি হতে বরখাস্তকরণ’ মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রার্থনা করেন।
স্মারকে আরও বলা হয়, গোলাম সাকলায়েনের বিভাগীয় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষীদের জবানবন্দি, অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক লিখিত জবাব, মৌখিক বক্তব্য ও অন্যান্য কাগজপত্রাদি পুনরায় বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়। সার্বিক পর্যালোচনান্তে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনকে একই বিধিমালার বিধি ৪ এর উপ-বিধি ৩(খ) বিধি মোতাবেক ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে ‘চাকুরি হতে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান’ এর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।