ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

বৃষ্টি ঝরলেও কেন ভ্যাপসা গরম

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২ জুলাই, ২০২৪ ১৬:০৭ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১০২ বার


বৃষ্টি ঝরলেও কেন ভ্যাপসা গরম

ঢাকা: চলছে ঘোর বর্ষা। দেশের আকাশে সূর্যের দেখা নেই বললেই চলে৷ পুরো দেশে টানা বৃষ্টি না হলেও অধিকাংশ স্থানের আকাশ মেঘে ঢাকা।

তবুও অনুভূত হচ্ছে ভ্যাপসা গরম।

 

রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বেশ কয়েকদিন ধরেই ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, আকাশে মেঘ; বাইরের পরিবেশও কিছুটা শীতল। কিন্তু একটা গুমট পরিস্থিতি। ঘরের ভেতরে তেমন অনুভব করা যাচ্ছে না। আবার বাইরে বের হলেও স্বাভাবিকভাবে বাতাস পাওয়া যাচ্ছে না। সারা দিন ধরেই যে এমন হয়, তাও কিন্তু নয়।

বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক মাস ধরে তারা এমন পরিস্থিতি লক্ষ্য করছেন। নাঈম নামে মিরপুরের এক বাসিন্দা বলেন, আমি বাইরে গেলে কিছুটা বাতাস অনুভব করতে পারি। কিন্তু ঘরের ভেতরে তেমনটা নয়। ফ্যান ছেড়ে রাখলে বাতাস পাওয়া যায়। কিন্তু বন্ধ করলে শ্বাস নিতেও সমস্যা হচ্ছে। আকাশে মেঘ রয়েছে, সে হিসেবে পরিবেশ শীতল থাকার কথা।

তিনি মনে করেন, মেঘ জমার পর সেটি সরে যেতে না পারায় বাতাস ঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারছে না। প্রতিনিয়ত তাই শরীর ঘামছে। গোসল করার পরও তার ও তার স্বজনদের শরীরে ঘাম জমছে। এর আগে কখনও এমনটি অনুভব করতে পারেননি তিনি।

নাঈমের মতো আরও অনেকেই একই ধরণের কথা বলেছেন। সোহাগ নামে স্বামীবাগ এলাকার একজন বলেন, বৃষ্টি হওয়ার পরও ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। সাধারণত বৃষ্টির আগে পরে বেশ কিছুক্ষণ শীতল অনুভূত হয়। কিন্তু তাপপ্রবাহ শেষ হয়ে বৃষ্টির দিন ঘনিয়ে আসার পর থেকেই একই পরিস্থিতি বিরাজমান। আকাশে সূর্যের দেখা পাওয়া না গেলেও গরম অনুভূত হচ্ছে। এখান থেকে সেখানে গেলেও শরীরে ঘামে ভিজে যাচ্ছে। আমার দুই বছরের বাচ্চার শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। ঘামে ভিজে থাকে বিধায় শরীর স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকে। রোগও বাড়ছে।

নাগরিকদের এমন অনুভবের পেছনে আবহাওয়াবিদদের যুক্তি আছে। সেটিও আবার তারা দিচ্ছেন বৈজ্ঞানিকভিত্তিতে। তারা বলছেন, মানব দেহও ভ্যাপসা গরমের জন্য দায়ী। কেননা, দেহ তাপ ছাড়ে। আবার বাতাসও তাপ ছাড়ে। আর দুদিকের তাপ এসে লাগে চামড়ায়। শরীর ঘেমে ওঠে। কিন্তু বাতাসে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প থাকায় শরীরের ঘাম শুকোতে চায় না। ফলে দেহের তাপ বের হতে বাধা পায়। গা হয়ে ওঠে স্যাঁতস্যাঁতে। এতে যে গরম অনুভূত হয় সেটাকেই বলে ভ্যাপসা গরম।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বর্ষা মৌসুমে আকাশ মেঘলা থাকে। সূর্য দেখা না গেলেও তাপের সৃষ্টি হয়। সেই তাপ বিকিরিত হয় ওপরে উঠে মেঘের কারণে বাধা পায়। ফলে আবার নিচে চলে আসে। এতে প্রকৃতিতে তাপ বেড়ে যায়।

জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আসে বঙ্গোপসাগর থেকে। সে বায়ু আসার সময় নিয়ে আসে প্রচুর জলীয় বাষ্প। এর সঙ্গে যুক্ত হয় দেশের অভ্যন্তরে বৃষ্টিপাতজনিত জলীয় বাষ্প। ফলে বাতাসে এর হার বেড়ে যায়। আর জলীয় বাষ্প তো পানির কণা, সেও মেঘ, বৃষ্টি, বাতাসের তারতম্যের কারণে রূপ পাল্টায় বারবার। রূপ পাল্টানোর সময় জলীয় বাষ্পও কিছুটা তাপ বাতাসে ছাড়ে। ফলে প্রকৃতিতে তাপ আরও বেড়ে যায়।

আবার, মানব দেহের ভেতরে তাপমাত্রা বাইরের তুলনায় বেশি। তাপমাত্রার ধর্মই হচ্ছে হাই থেকে লো’র দিকে ধাবমান হওয়া। ফলে বেশি থেকে কমের দিকে অর্থাৎ চামড়ার দিকে আসে ভেতরের তাপ। আর বাতাসের তাপও চামড়াও থেকে বেশি। সেটাও ধাবিত হয় চামড়ার দিকে। এই অবস্থায় শরীরের তাপ নির্বিঘ্নে বাইরে বের হয়ে আসতে পারে না। ফলে যে ঘাম সৃষ্টি হয়, তা আবার বাতাসে মিশতে পারে না। কারণ, বাতাসে আগে থেকেই জলীয় বাষ্প বেশি। তাই শরীরের চামড়া হয়ে ওঠে স্যাঁতস্যাঁতে। এই অবস্থায় যা অনুভূত হয়, সেটিই ভ্যাপসা গরম।

ড. মল্লিক বলেন, বর্ষা মৌসুমে বাতাসে ৭০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে জলীয় বাষ্প ওঠা-নামা করে। তবে বর্তমানে সেটা ৯০ থেকে ১০০ শতাংশে ওঠা-নামা করছে। বৃষ্টি খুব বেশি হলে সাময়িকভাবে কেটে যায়। কিন্তু রোদ উঠলে ফের বেড়ে যায়। তাই বর্ষাকালে গরমটা থেকে যায়। আর এটা স্বাভাবিক ঘটনা।

উজ্জ্বল সূর্যকিরণ না থাকায় গত কয়েকদিনে ভ্যাপসা গরমের কোনো সতর্কবার্তা ছিল না। তবে বর্তমানে বাতাসের জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অধিক হারেই বিরাজ করছে। ফলে বৃষ্টির মাঝেও গরম অনুভূতি অব্যাহত রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে ঢাকার বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ছিল ৯৮ শতাংশ। এতেও ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। সূর্য দেখা দিলে এটি আরও বেড়ে যাবে।


   আরও সংবাদ