ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৬ জুলাই, ২০২৪ ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৮৫ বার
ঢাকা: দেশের দশটি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ১২ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
শুক্রবার (০৫ জুলাই) পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এমন তথ্য জানিয়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের ১০টি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে।
ব্ৰহ্মপুত্র, যমুনা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আরো দু-দিন পর্যন্ত ধীর গতিতে বৃদ্ধি পেতে পারে।
গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানির সমতল সার্বিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতিভারী এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এতে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যার পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।
এদিকে আগামী দু-দিনে পদ্মা নদী গোয়ালন্দ পয়েন্টে সতর্কসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। এই সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ঘাঘট নদীসমূহের পানির সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং ঘাঘট নদী সংলগ্ন গাইবান্ধা জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চল বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হতে পারে।
অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যমুনাশ্বরী, করতোয়া, বাঙ্গালী, আপার করতোয়া, পুর্নভবা, টাঙ্গন, ইছামতি-যমুনা, আত্রাই, মহানন্দা এবং ছোট যমুনা নদীসমূহের পানির সমতলও সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
সিলেট
অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে সিলেট জেলার অভ্যন্তরীণ নদনদীগুলোর পানি ৬টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৩টি উপজেলার ৩টি পৌরসভা ও ৯৩টি ইউনিয়নের ১ হাজার ১৮০টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত রয়েছে। প্রতিবেদনাধীন সময় পর্যন্ত উপজেলাসমূহের ২০৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯ হাজার ৩২৯ জন লোক রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি শুকনো ও রান্না করা খাবার এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত সিলেট জেলায় কোনো প্রাণহানি তথ্য পাওয়া যায়নি।
সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি
সুনামগঞ্জ
অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে নদ-নদীর পানি বেড়ে জেলার ১২টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলার ৮০টি ইউনিয়নের ৮০ হাজার ২০৮টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এবং মোট ৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৫৭ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য জেলায় মোট ৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মোট ১ হাজার ৬৮১ জন লোককে এবং ১১৩টি গবাদিপশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
মৌলভীবাজার
সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ৬২ হাজার ৭৯১টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং ৩ লাখ ১৪ হাজার ২২৭ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার্তদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য জেলায় মোট ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং ৮ হাজার ২১০ জন লোক এবং ৬৯৬টি গবাদি পশু ও অন্যান্য প্রাণী আশ্রয় নিয়েছে।
রংপুর
সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে।
গাইবান্ধা
সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং ৪টি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। মোট ৭ হাজার ৮২০টি পরিবারের আনুমানিক ৭১ হাজার ২৮০ জন লোক পানিবন্দি রয়েছে।
জামালপুর
সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় ৭টি উপজেলার ৭ হাজার ১০৩টি পরিবারের ৩৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফেনী
সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বেড়ে ফেনী জেলার মহুরী ও কহুয়া নদীর বাধ ভেঙে জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদর উপজেলার মোট ৯টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ৩ হাজার ৪০ ও পানিবন্দি লোকসংখ্যা ১২ হাজার ১৬৮ জন। ২১ বছর বয়সের এক ব্যক্তি মাছ ধরতে গিয়ে বাধ ভেঙে মারা গেছেন।
গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতি
কুড়িগ্রাম
সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বাড়ায় কুড়িগ্রাম জেলার ৩৫০ দশমিক ১৭ বর্গ কি.মি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে সেখানে।
রাঙামাটি
অতিবৃষ্টির ফলে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয় এবং ৪৫-৫০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
বগুড়া
সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় ৩টি উপজেলার পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ২০ হাজার ৫৭০টি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৭৮ হাজার ৩২৩ জন।